চমকের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’, ক্ষমা চেয়ে দেবেন ক্ষতিপূরণ: শিল্পী সংগঠন

অভিনেতা আরশ খানের বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সুবিধা’ চাওয়ার অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলছে অভিনয় শিল্পী সংগঠনগুলো।

রুকাইয়া জাহান চমক ও আরশ খান।

সহশিল্পীর বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সুবিধা চাওয়ার’ যে অভিযোগ তুলেছিলেন অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক, তাকে ভিত্তিহীন বলছে শিল্পী সংগঠনগুলো।

ওই ঘটনায় চমক ‘দুঃখ প্রকাশ করেছেন’ জানিয়ে সংগঠনগুলো বলেছে, সহশিল্পী আরশ খানের বিরুদ্ধে থানায় করা জিডিও তিনি প্রত্যাহার করে নেবেন। চমককে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি গুনতে হবে জরিমানা।

টেলিভিশন নাটকের অভিনয় শিল্পী চমক ও সহশিল্পীদের পাল্টাপাল্টি বেশ কয়েকটি অভিযোগ নিয়ে রোববার বৈঠকে বসে শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড ও টেলিপ্যাবের নেতৃবৃন্দ। সেখানে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য ও সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এর একদিন পর সোমবার রাতে বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত লিখিত আকার জানায় সংগঠনগুলো।

সেখানে চমকের করা অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে উল্টো তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলোতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শুটিং সেটে অসদাচরণের কারণে তাকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে।

গত ৪ অগাস্ট ঢাকার উত্তরার আনন্দবাড়ি স্যুটিং হাউসে ‘শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দিন’ নাটকের স্যুটিং সেটে অভিনেত্রী চমকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তোলেন নির্মাতা আদিফ হাসান। পরে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে টেলিভিশন নাট্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনে অভিযোগ করেন এই নির্মাতা।

নির্মাতা আদিফ হাসান গ্লিটজকে বলেছিলেন, চমকের ‘অপেশাদার’ আচরণের কারণে তিনি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ওই শুটিং সেটে চমকের বিরুদ্ধে অভিনেতা ফখরুল বাশার মাসুমও অশোভন ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে তিনি শিল্পী সংঘে চমকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

এসব ঘটনার পর সহশিল্পীর বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সুবিধা’ চাওয়ার অভিযোগ তোলেন চমক। এই অভিযোগগুলো সমাধানে যৌথ উদ্যোগ নেয় টেলিভিশন নাটক সংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠন।

টেলিপ্যাবের সভাপতি মনোয়ার হোসেন পাঠানের সভাপতিত্বে রোববার বিচার সভা হয়। সেখানে প্রথমে সবার অভিযোগ পাঠ করা হয় এবং চমক ও নির্মাতা আদিফ হাসানের বক্তব্য শোনা হয়। পরে ঘটনার সাক্ষীদেরও বক্তব্য শোনেন সংগঠনের নেতারা।

এর একদিন পর সভার সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে জানায় অভিনয়শিল্পী সংঘ। তাতে বলা হয়, “শুটিং সেটে উত্তেজিত অবস্থায় চমক যে আচরণ করেছেন… যার কারণে সেটে পুলিশ আসা, শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং পরিচালক আর্থিক ক্ষতি ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

“এছাড়া জ্যেষ্ঠ অভিনেতা ফখরুল বাশার মাসুম এবং নির্মাতা আদিফ হাসানসহ ইউনিটের সবার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা অভিনেত্রী চমকের ভুল ছিল এবং পরবর্তীতে অভিনেতা আরশ খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে যে অভিযোগ এনেছেন- তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রতীয়মান হয়।”

সংগঠনগুলো বলছে, “সভায় ফখরুল বাশার মাসুম, রুকাইয়া জাহান চমক ও আরশ খানের বক্তব্য শোনা হয়। সকলের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে প্রমাণিত হয়, শুটিং সেটে সৃষ্ট উত্তেজনায় চমক শিল্পী ফখরুল বাশার মাসুমের সঙ্গে যে অপ্রীতিকর আচরণ করেছেন তা মোটেই ঠিক করেননি এবং চমক সেটি অনুধাবন করে ভীষণ অনুতপ্ত হয়েছেন।”

চমক তার আচরণের কারণে মাসুম বাশারের কাছে ক্ষমা চেয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “যেহেতু ঘটনাটি শুটিং ইউনিটে ঘটেছে, সেহেতু সেই ইউনিটের সামনেই চমক অফিসিয়ালি দুঃখপ্রকাশ করবেন। এছাড়া চমক অভিনেতা আরশ খানকে নিয়ে ইতোপূর্বে পত্রিকা ও টেলিভিশন সাক্ষাৎকার এবং জিডিতে যে অভিযোগ করেছেন তারও কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তাই চমকের আরশের প্রতি অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে প্রতীয়মান হয়।

“স্পষ্টতই বোঝা যায়, ঘটনার উত্তেজনায় ভুল বোঝা থেকে এই অভিযোগের সৃষ্টি। সেটাও অনুধাবন করে চমক অনুতপ্ত হন। আরশের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় চমক ভুলবশত আরশ খানের বিরুদ্ধে যে জিডি করেছেন, সেটাও নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না বলে চমক অভিনয়শিল্পী সংঘ বরাবর লিখিত অঙ্গীকার করেন।”

সভার সিদ্ধান্ত

· অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক ক্ষতিগ্রস্ত নাটকের প্রযোজক, পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ অভিনেতা ফখরুল বাশার মাসুমসহ সকলের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়ে দুঃখপ্রকাশ করবেন।

· ‘শ্বশুরবাড়ির প্রথম দিন' নাটকটি নির্মাণ সম্পন্ন করতে বাকি যে অর্থের প্রয়োজন হবে তা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে চমক বাধ্য থাকবেন।

· আরশ খান ও আদিফ হাসানের বিরুদ্ধে করা জিডি চমক অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেবেন।

· ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শাস্তি পেতে চমক বাধ্য থাকবেন- এ ব্যাপারে তিনি লিখিতভাবে অঙ্গীকার করবেন। আগামী ছয় মাস সকল সংগঠনের পর্যবেক্ষণে থাকবেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অভিযোগ যেন না আসে, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবেন।

· আন্তঃসংগঠনের কার্য নির্বাহী কমিটির এবং সকল সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সংগঠনে অভিযোগ করবেন। সাক্ষাৎকার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো পোস্ট দিতে পারবেন না।

· শুটিং পরিবেশ কেউ অসদাচরণ, বিশৃঙ্খলা, কাজের পরিবেশ নষ্ট করলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

শুটিং সেটে অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ, এরপর পাল্টাপাল্টি