শহীদের রক্তের পথ ধরে লালযাত্রা

কালরাতের শহীদদের স্মরণে হাতে হাত মিলিয়ে, কণ্ঠে দেশের গান তুলে এ আয়োজনে অংশ নেবেন নাট্যকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2023, 09:23 AM
Updated : 24 March 2023, 09:23 AM

একাত্তরের ২৫ মার্চ সেই কালরাতের শহীদদের স্মরণে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ‘লালযাত্রা’র আয়োজন করছে নাট্য সংগঠন প্রাচ্যনাট।

শনিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর’ থেকে ফুলার রোডের ‘স্মৃতি চিরন্তন চত্বর’ পর্যন্ত হাতে হাত মিলিয়ে- কণ্ঠে দেশের গান তুলে এ আয়োজনে অংশ নেবেন নাট্যকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এক যুগ আগে ২০১১ সাল থেকে রাহুল আনন্দের ভাবনা ও পরিকল্পনায় প্রাচ্যনাট লালযাত্রার সূচনা করেছিল। এবারের লালযাত্রা আয়োজন নিয়ে গ্লিটজের সঙ্গে কথা বলেছেন রাহুল আনন্দ।

গ্লিটজ: এবার লালযাত্রা কীভাবে হবে, থিম কী?

রাহুল আনন্দ: প্রতি বছর যেভাবে হয়, এবারও সেভাবেই হবে। মূলত ২৫ মার্চের শহীদের স্মরণে লালযাত্রার সূচনা হয়েছিল। এখন আমরা এই আয়োজনটির মধ্য দিয়ে সকল শহীদদের স্মরণ করি, শ্রদ্ধা নিবেদন করি। ২৫ মার্চের কালরাতের শহীদদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সকল শহীদের স্মরণেই আমরা দিনটি পালন করি। এবার একটা লোগো তৈরি করেছি আমি। প্রতি বছর লোগো করা হয় না। এবার এই লোগোটা আমিই করেছি, আমার মত করে। এখানে শিমুল, পলাশ ফুল দিয়ে লোগো করেছি। ওই যে শহীদের রক্তে রাঙা হল পলাশ শিমুল, ওই লাইনটা থেকেই মূলত লোগোটা করা। আর শিমুল, পলাশ তো এই সময়ের ফুল।

গ্লিটজ: এবার তো রোজার মধ্যে হচ্ছে লালযাত্রা। পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন হবে?

রাহুল আনন্দ: আমরা সময়ের একটু পরিবর্তন করেছি। অন্যবার সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বালনের মাধ্যমে শেষ হয়। এবার সময়টা একটু এগিয়ে আনা হয়েছে। বিগত বছরে বিকাল ৫টা সন্ধ্যা ৬টা করতাম। এবার ৪টা থেকে ৫টায় শেষ করব।

গ্লিটজ: মহামারীর মধ্যে লালযাত্রা বন্ধ ছিল?

রাহুল আনন্দ: কোভিডের দুই বছর আমরা যার যার বাসা থেকে প্রতীকীভাবে লালযাত্রা করেছি। রাস্তায় এসে করতে পারিনি। গত বছর আমরা টিএসসিতে করেতে পেরেছিলাম। এবারও সবাইকে নিয়ে লালযাত্রায় দেশের গান গাইতে গাইতে হাঁটব।

গ্লিটজ: লালযাত্রার ভাবনাটি কীভাবে এল?

রাহুল আনন্দ: আমরাতো আসলে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক জিজ্ঞাসা, অনেক প্রশ্ন, কৌতুহল। আর এই কৌতুহল থেকে জানার আগ্রহও আছে অনেকের। ২৫ মার্চ কালরাতে যেভাবে একটা হত্যাযজ্ঞ চালানো হল, সেটা পৃথিবীর ঘৃণিত একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা। আমরা হয়ত বলি ২৬শে মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তির জন্য আকাঙ্ক্ষা তো আরও আগে থেকেই শুরু হয়েছে। আর ২৫শে মার্চ রাতের গণহত্যার পর পাকিস্তানিরা আমাদের উপর মুক্তিযুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। এত রক্ত একসাথে এই মাটি তো আগে দেখে নাই। এই মাটিকে তো আমরা মা বলে ডাকি। লালযাত্রায় সে মাকে নিয়েই, শহীদের রক্ত রাঙা পথে হাঁটি। মুক্তিযুদ্ধের চাওয়া তো ছিল স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে হাঁটব, একসাথে গান গাইব।

লালযাত্রার ভাবনাটি আমার মাথায় আসছিল প্রাচ্যনাট স্কুলে ক্লাস নিতে গিয়ে। তখন স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাস্তায় একটা পারফরমেন্স করার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছিল প্রাচ্যনাট। তখন ভাবলাম, আমরা সবসময় দেখি একদিকে সবাই অভিনয় করে আরেকদিকে দর্শকরা বসে থাকে। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল একটা পারফরম্যান্স করব, যে পারফরম্যান্সটা চলমান। এই যে চলে যাচ্ছে। চলমান লোকজনই দেখবে। পারফরম্যান্সটা হেঁটে যাচ্ছে। জাস্ট শান্তিপূর্ণভাবে গান গাইতে গাইতে একটা জায়গা থেকে আরেকটা জায়গায় হেঁটে যাওয়া। এই হেঁটে যাওয়াটা হচ্ছে সেই যুদ্ধের নয় মাসকে অতিক্রম করার মত। এরপরই আমরা লালযাত্রা করি। সেটি এখন আর কেবল প্রাচ্যনাটের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। অন্যান্য সংগঠনের ছেলেমেয়ে এবং সাধারণ মানুষও যুক্ত হচ্ছে লালযাত্রায়।

গ্লিটজ: একজন মায়ের চরিত্র দেখা যায় লালযাত্রায়।

রাহুল আনন্দ: আমরা সবাই তো মায়ের আঁচল ধরে হেঁটে হেঁটেই বড় হই। লালযাত্রায়ও আমরা মায়ের রক্তরাঙা লাল শাড়ির আঁচল ধরে হাঁটি, কণ্ঠে থাকে দেশের গান। প্রতিবার প্রাচ্যনাটের সবচেয়ে নিবেদিত একজন মেয়ে এই মায়ের চরিত্রে দাঁড়ায়। এটা একটা রূপকের মত, প্রাচ্যনাটের মা যিনি মায়ের মত আগলে রাখে প্রাচ্যনাটকে , সে রকম আরকি। আমার মেয়ে তো মা হতে পারে। আসলে মাতৃরূপটাকে নিয়ে যাওয়া, এটা সবচেয়ে বড় কথা।

গ্লিটজ: এবার লালযাত্রায় মায়ের চরিত্রটা কে করবে?

রাহুল আনন্দ: এবার মায়ের চরিত্রে থাকবে প্রাচ্যনাটের অনেক পুরোনো কর্মী রুবাইয়া মনজুর টিপ। প্রতি বছর যে প্রাচ্যনাট থেকে হতে হবে, তা নয়। অন্যান্য জায়গা থেকেও হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত যারা মায়ের চরিত্রটি করেছে, তারা প্রাচ্যনাটের সঙ্গে যুক্ত।

গ্লিটজ: লালযাত্রার এই আয়োজন সারাদেশে করার কোনো পরিকল্পনা আছে?

রাহুল আনন্দ: এ আয়োজন শুরুর পর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। আমরাও সারাদেশে আয়োজনটিকে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কিছু পরিকল্পনা করছি। অন্যান্য জেলা থেকে অনেকে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু সবাই যেটা চায়, আমরাও সেখানে গিয়ে তাদের আয়োজনে অংশ নিই। আমার পক্ষে আসলে সব জায়গায় গিয়ে উপস্থিত হওয়াটা তো অসম্ভব। কিন্তু কেউ যদি ইনিশিয়েটিভ নেয়, আমি সকল রকম সহযোগিতা করব। আয়োজনটির পরিকল্পনা নিয়ে আমরা তাদের একটা গাইডলাইন দিতে পারি। সেভাবে সারা দেশে একযোগে আয়োজনটি হোক, এটা আমরাও চাই।