জিজ্ঞাসাবাদে জিয়া বলেছেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাকবিতণ্ডা হত।
Published : 03 Nov 2023, 08:54 PM
অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার তার বন্ধু জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, এর আগেও ৩ থেকে ৪ বার ‘আত্মহত্যার হুমকি’ হুমকি দিয়েছিলেন এই টিভি তারকা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন শুক্রবার কারওয়ান বাজারে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে জিয়াকে গ্রেপ্তার করার পর র্যাবের এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি ও মনোমালিন্য থেকে হিমু আগেও আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
“বুধবার রাতেও আত্মহত্যা করবে- এমন কথা হিমু সোশাল মিডিয়ায় জিয়াকে জানালেও তিনি তাতে গুরুত্ব দেননি। জিয়া পরদিন হিমুর ফ্ল্যাটে যান। তখন দুজনের মধ্যে আবারও ঝগড়া ও মনোমালিন্য হয়।
“হিমু একটু পর নিজের কক্ষের ফ্যান ঝোলানো লোহার হুকে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিলে জিয়াউদ্দিন তাৎক্ষণিক তাকে নামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় জিয়া পাশের ঘর থেকে হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে নেন।”
মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে দেওয়ার পর হিমুকে নামানো সম্ভব হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান জিয়া।
কমান্ডার মঈন বলেন, “ভবনের দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যান জিয়া, সেখানে চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন।”
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, অভিনেত্রী হিমুর ‘প্রেমিক’ জিয়া এ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল রাসায়নিকের ব্যবসা করে আসছিলেন। ঘটনার দিন হিমুকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করার পরে অভিনেত্রীর দুটি আইফোন ও গাড়ি নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন তিনি।
পরে উত্তরায় গাড়ি রেখে মোবাইল ফোন দুটি বেচতে তিনি বংশাল এলাকায় যান বলে র্যাবের ভাষ্য।
হিমুর সঙ্গে যেভাবে জিয়ার পরিচয়
সংবাদ সম্মেলনে মঈন জানান, ২০১৪ সালে হোমায়রা হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়ার বিয়ে হয়। পারিবারিক দ্বন্দ্বে কিছুদিন পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়।
“পারিবারিক আত্মীয়তার সুবাদে জিয়ার সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সাথে জিয়াউদ্দিনের বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।”
জিয়া পরে আরেকজনকে বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন জানিয়ে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, মাস চারেক আগে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়।
এক পর্যায়ে ‘হিমুকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে’ তার বাসায় জিয়া নিয়মিত যেতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পেয়েছে র্যাব।
জিয়া র্যাবের কাছে দাবি করেছেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাকবিতণ্ডা হত। হিমু দুই থেকে তিন বছর ধরে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেছেন। এ নিয়েও দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য ছিল।
জিয়ার বর্ণনায় হিমুর ‘আত্মহত্যা’
র্যাবের কাছে ধরা পড়ার পর জিয়া বলেছেন, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় হিমুর উত্তরার বাসায় যান তিনি। পরে অনলাইন জুয়াসহ ‘নানা’ বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায় হিমু ভাঙচুর শুরু করেন।
একপর্যায়ে রুমের বাইর থেকে একটি মই এনে সিলিং ফ্যান লাগানোর লোহার সঙ্গে আগে থেকে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেয় হিমু।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব বলছে, তখনই গলায় রশি পেঁচিয়ে ঝুলে পড়েন হিমু। তাকে নামানোর চেষ্টা করলেও পারেননি জিয়া।
উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সড়কে একটি ভবনের নিজের ফ্ল্যাটে থাকতেন এই অভিনেত্রী।
উত্তরা (পশ্চিম) থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, “আমরা যতটুকু জেনেছি নিজের ফ্ল্যাটে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি লাগিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।”
আরও পড়ুন: