হিরো আলমকে নিয়ে সুন্দর উদ্দেশ্যটা ‘নষ্ট হয়ে গেছে’: হাসান মতিউর

“আমি একটা চ্যালেঞ্জ নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তার আগেই কেউ কেউ আমাকে অপমান করে সমালোচনা শুরু করে দিয়েছেন,” বলেন হাসান মতিউর রহমান।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2022, 11:51 AM
Updated : 31 August 2022, 11:51 AM

হিরো আলমকে দিয়ে গান করানোর পেছনে ‘সুন্দর উদ্দেশ্য’ থাকলেও ফেইসবুকে ‘হৈ-হল্লার’ কারণে তা নষ্ট হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন গীতিকার ও সুরকার হাসান মতিউর রহমান।

হিরো আলম সম্পর্কে তিনি বলেন, “সে সরল ছেলে, ওকে বোঝানোর জন্যই কাজটা করতে চেয়েছিলাম।”

সম্প্রতি নিজের কথা ও সুরে দুটি গান হিরো আলমের কণ্ঠে প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এর মাঝেই সোশাল মিডিয়ায় রেকর্ডিং মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, শুরু হয় সমালোচনা।

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে মঙ্গলবার ফেইসবুকে দীর্ঘ পোস্টও দিয়েছেন অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চেনা সুরের স্বত্বাধিকারী হাসান মতিউর রহমান। বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

খ্যাতনামা এই গীতিকার বলেন, “গান প্রকাশ হওয়ার আগেই কেন সমালোচনা করতে হবে? আমি তো এখনো গান প্রকাশই করিনি।”

তিনি বলেন, “আমি একটা চ্যালেঞ্জ নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তার আগেই কেউ কেউ আমাকে অপমান করে সমালোচনা শুরু করে দিয়েছেন। জানতে চাননি আমি কেন কাজটা করতে চেয়েছি?

“এত বছর ধরে সঙ্গীতের সঙ্গে বসবাস আমার, গান নিয়ে নোংরামি তো আমি করবো না। ভালো কিছু করতে চেয়ে সমালোচিত হয়েছি।

“৩৫ বছরের গানের ক্যারিয়ার আমার, আমি কি গান ভালো না হলে প্রকাশ করব? আমার তো একটা নাম আছে। আমি অবশ্যই গান ভালো না হলে প্রকাশ করতাম না।”

হিরো আলমের সঙ্গে পরিচয় পর্বের কথা তুলে ধরে হাসান মতিউর বলেন, “আলমের সাথে আমার মগবাজারের একটা রেস্তুরাঁয় প্রথম দেখা। পরে আরো ২/৩ বার দেখা হয়েছে। সে আমার ভক্ত বলে জানায়।

“আমি তখন তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তুমি এভাবে গান না শিখে কেন গান কর? জবাবে, আলম বলে, ওস্তাদ আমি গান শিখতে চাই। আমাকে তো কেউ শেখায় না।”চেনা সুরের কর্ণধার বলেন, “তখন আমি তাকে বলি, আমি তোমাকে গান শেখানোর ব্যবস্থা করব। তোমাকে দিয়ে গান প্রকাশও করব। এটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে চাই।

“কিন্তু শর্ত হচ্ছে তোমাকে গান শিখতে হবে। আমার যখন মনে হবে, তোমাকে দিয়ে গান করানো যাবে, তখন গান প্রকাশ করব। তার আগে নয়। সে গান শিখবে বলেও আমাকে জানায়।”

তিনশ’রও বেশি গানের রচয়িতা হাসান মতিউর রহমানের উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, ‘আমি বন্দী কারাগারে’, ‘কলমে নাই কালি’, ‘আমার লাইন হইয়া যায় আঁকাবাঁকা’, ‘রাঙামাটি পাহাড়ে, দুপুরবেলা আহারে, নাম ধরে কে বাঁশরি বাজায়’, ‘তুমি যে ক্ষতি করলা আমার’, ‘দেখা আরিচা ঘাটে শাহজালাল ফেরিতে’, ‘এবার না আসিলে বাড়িতে’ প্রভৃতি।

পরীক্ষামূলকভাবে হিরা আলমের গান রেকর্ড করার মুহূর্তটি কেউ একজন ভিডিও করে ফেইসবুকে দিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, “স্টুডিওতে রেকর্ড করার সময় আমরা অনেক মজা করি। সেদিনও মজা করেছিলাম।

“কিন্তু সেই ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও বিনা-অনুমতিতে কেন প্রকাশ করা হল? আমি জানি না। হয়তো আমাকে অপমান করার জন্যই এটা করা হয়েছে।”

হিরো আলমকে দিয়ে গান করার খবর জানিয়ে তো আপনিও ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন? এমন প্রশ্নে হাসান মতিউর বলেন, “আমি পোস্ট করার অল্প সময়ের মধ্যেই মধ্যেই তা ডিলিট করে দিয়েছিলাম।

“কিন্তু কেউ স্ক্রিনশট রেখে দিয়েছে, আমাকে অপমান করার জন্য। যারা আমার সমালোচনা করছেন, তাদের কেউ কেউ আমাকে ভালোবাসেন বলেই সমালোচনা করছেন।

“আবার কেউ কেউ আমাকে অপমান করে আনন্দ পাচ্ছেন। আমার উদ্দেশ্য ছিল সৎ। কিন্তু ছোট্ট একটা বিষয়কে ফেইসবুকে দিয়ে একটা হৈ-হল্লা তৈরি করে সুন্দর উদ্দেশ্যটা নষ্ট করে দিল।”

ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত ‘ভুল’ ছিল জানিয়ে এই গীতিকার বলেন, “বেশি উৎসাহী হয়ে গিয়েছিলাম ভাল কিছু করার জন্য। এখন সেটা ভুল হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আরও চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করব।”

গত রোববার হিরো আলম ফেইসবুকে লিখেছেন, “এই প্রথম হাসান মতিউর রহমান স্যারের লেখা এবং সুরে দুইটি গানে কণ্ঠ দিলাম। গানটি কম্পোজ করেছেন জিয়াউল হাসান পিয়াল ভাই। প্রযোজনা করছে গানমতি।”

গান দুটি হিরো আলম প্রকাশ করতে পারবে কি না? জানতে চাইলে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হাসান মতিউর বলেন, “গান তো রেকর্ড করা হয়নি।

“আর গানের গীতিকার-সুরকার এবং প্রযোজকও আমি। গান প্রকাশ করার কোনো স্বত্ব তো হিরো আলমের নাই। আমার অনুমতি ছাড়া সে প্রকাশ করতে পারবে না।”

সম্প্রতি রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন হিরো আলম। তার আসল নাম আশরাফুল আলম। পেশায় তিনি একজন কেবল অপারেটর ছিলেন।

২০১৬ সালে একটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করে ট্রলের শিকার হন ফেইসবুকে। সেই সঙ্গে আলাদাভাবে পরিচিতিও পান দর্শকমহলে। তারপর থেকে বাড়তে থাকে ব্যস্ততা। একের পর এক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে ডাক পেতে থাকেন তিনি।

এখন পুরোদমে অভিনয়ের পাশাপাশি গানে মনোনিবেশ করেছেন হিরো আলস। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হন।

আরও খবর

Also Read: গান ‘বিকৃত’ করে গাইব না: পুলিশকে মুচলেকা হিরো আলমের

Also Read: সংগীতের ‘বিকৃতি’: হিরো আলমকে উকিল নোটিস

Also Read: হিরো আলমের ‘পদ্মা সেতুর গান’