সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার বৃহস্পতিবার ডাকযোগে এ নোটিস পাঠিয়েছেন। হিরো আলমের এসব কর্মকাণ্ডকে ‘অপরাধ’ আখ্যায়িত করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সেসব ভিডিও অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সেখানে।
হিরো আলম বিভিন্ন সময় গানের মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করে সরাসরি গানের কথা ও সুরের ‘বিকৃতি’ ঘটিয়ে চলেছেন অভিযোগ করে নোটিসে বলা হয়, “গান গাইবার অধিকার সবার আছে, কিন্তু গান বিকৃত করা অধিকার কারো নেই। এমনকি গানের বাণিজ্যিক রিমেক বা ব্যবহার করতে গেলেও মূল গায়ক বা স্বত্বাধিকারীর অনুমতি নেওয়া জরুরি।”
উকিল নোটিসে হিরো আলমকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, “আপনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত ‘আমারো পরানো যাহা চায়’ গানটির একটি মিউজিক ভিডিও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার ও প্রকাশ করেছেন। সেখানে কিছু দৃশ্য আপনাকে গিটার হাতে গানটি গাইতে দেখা গেছে।”
তার গাওয়া এ গানের কিছু লাইন ও শব্দের সঙ্গে মূল গানটির লাইন ও শব্দের ‘মিল পাওয়া যায়নি’ বলে নোটিসে অভিযোগ করা হয়েছে। একইভাবে ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী ভৌমিকের গাওয়া ‘আমি শুনেছি সেদিন তুমি’ গানটিও হিরো আলম গেয়েছেন, সেখানেও কিছু লাইন ও শব্দের সঙ্গে মূল গানের মিল নেই।
উগান্ডার সোয়াহিলি ভাষায় ‘মোগোয়া জাগোম্বে’ শিরোনামের গানটি যে হিরো আলমের গেয়েছেন, সেখানেও ‘নিজের ইচ্ছেমত নতুন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে’ বলে নোটিসদাতার ভাষ্য।
সেখানে বলা হয়, হিরো আলম মিউজিক ভিডিও নির্মাণের নামে ‘বিকৃত ও অশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও দৃশ্য ধারণ করে’ সামাজিক মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করে ‘গণউৎপাত সৃষ্টি করে অপরাধ’ করেছেন। আর সেটা ‘দেওয়ানি ও ফৌজদারি অপরাধ’।
হিরো আলমকে একজন চলচ্চিত্র শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক এবং সামাজিক মাধ্যমে ‘জনপ্রিয় ব্যক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করে নোটিসে বলা হয়, “অনেকেই আপনার ভাষাগত উচ্চারণ, আচার আচরণ, অঙ্গভঙ্গি, নাচ, পোশাক, চলাফেরা অনুকরণ ও অনুসরণ করে থাকে।
“আপনার নির্মিত মিউজিক ভিডিওতে বিকৃত ও অশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য পরিবেশ ও অশালীন পোশাক পরিধানজনিত আপনার এহেন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে।”
এই নোটিস পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হিরো আলমকে ‘বিকৃতভাবে’ গাওয়া গানগুলো সব ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফরম থেকে অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ভবিষতে মিউজিক ভিডিও নির্মাণের নামে ‘বিকৃত ও অশুদ্ধ বাংলা শব্দ উচ্চারণ, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য পরিবেশন এবং অশালীন পোশাক পরে’ দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
তা না হলে হিরো আলমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে নোটিসে সতর্ক করেছেন আইনজীবী খন্দকার শাহরিয়ার।
এ নোটিসের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হিরো আলমের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। হিরো আলম নামে পরিচিতি পেলেও তার আসল নাম আশরাফুল আলম। পেশায় তিনি একজন কেবল অপারেটর ছিলেন।
২০১৬ সালে একটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করে ট্রলের শিকার হন ফেইসবুকে। সেই সঙ্গে আলাদাভাবে পরিচিতিও পান দর্শকমহলে। তারপর থেকে বাড়তে থাকে ব্যস্ততা। একের পর এক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে ডাক পেতে থাকেন তিনি।
এখন পুরোদমে অভিনয়ের পাশাপাশি গানে মনোনিবেশ করেছেন তিনি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হন।