মনিরুজ্জামানের ৫টি পদক চুরি, উদ্ধার হয়নি ৩ সপ্তাহেও

এই গীতিকবি বলছেন, ‘গানের শত্রু’রা করেছে এই কাজ।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2022, 04:00 PM
Updated : 24 Nov 2022, 04:00 PM

গীতিকবি মনিরুজ্জামান মনিরের তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ মোট পাঁচটি পদক চুরির পর তিন সপ্তাহ গড়িয়ে গেলেও তার কোনো হদিস মেলেনি।

এই ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন তিনি। পুলিশ বলছে, তারা অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ৩ নভেম্বর রাতে মনিরুজ্জামানের পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় বাসার জানালা ভেঙে শুধু পাঁচটি পদক চুরি হয়।

নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন, এক সেকেন্ডের নাই ভরসা সাঙ্গ হবে রঙতামাশা,  কী যাদু করিলা পীরিতি শিখাইলা, সুর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তে তুমি, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, মানিক সে তো মানিক নয়, বাড়ির মানুষ কয় আমায় তাবিজ করেছেসহ প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন মনিরুজ্জামান মনির।

তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসার জানালা ভেঙে, একটি বাচ্চাকে দিয়ে আমার সারা জীবনের অর্জন তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ পাঁচটি পদক চুরি করে নিয়ে গেছে। এটা আমার গানের শক্রুদের কাজ।”

মনিরুজ্জামান মনিরের গানের শত্রু কারা- জানতে চাইলে বলেন, “সেটা স্পষ্ট করে বলতে পারছি না। যারা হয়ত আমার অর্জনে খুশি না তারাই। না হলে এত কিছু থাকতে আমার পদক কেন চুরি করবে? এটা তো তারা বিক্রিও করতে পারবে না।”

কোনো শিশুকে দিয়ে চুরি করিয়েছে- সেটাই বা বুঝলেন কীভাবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জানালায় যে জায়গা সেখান দিয়ে একটা বাচ্চা ছাড়া আর কারও ঢোকার সুযোগ নেই।”

২০০৪ সালে একুশে পদক পেয়েছিলেন এই গীতিকার। তার একুশে পদকটা চুরি যায়নি। তিনি বলেন, “একুশে পদকটা এই পদকগুলোর থেকে আলাদা ছিল। অন্য জায়গায় রেখেছিলাম। একুশে পদকটা চুরি করতে পারেনি।”
চুরির ঘটনায় ৫ নভেম্বর বাড্ডা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মনিরুজ্জামান মনির। তিনি বলেন, পুলিশ তার বাসা পরিদর্শন করে উদ্ধারের আশ্বাস দিয়ে যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এ বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিষয়টা দেখছি। পুলিশ তার পদক উদ্ধারে কাজ করছে।”

এদিকে পদক চুরির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ‘গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ’। সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রাসেলের পক্ষ থেকে আসা এক বিবৃতিতে বলা হয়,“ঘটনাটি আমাদের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, চুরির ঘটনার পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুলিশি সহায়তা চেয়েছেন মনিরুজ্জামান মনির। কিন্তু হতাশার বিষয় এই যে, প্রায় ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও ট্রফিগুলো উদ্ধার হয়নি কিংবা কারা চুরি করেছে সেটিও চিহ্নিত করা হয়নি।

“দেশের নন্দিত এই অগ্রজ গীতিকবির চুরি হওয়া সম্মান পুনরুদ্ধারের বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে জোর দাবি জানাই পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি। আমরা চাই অবিলম্বে ট্রফিগুলো উদ্ধার এবং দোষীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”    

বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল এবং খ্যাতিমান গীতিকবি মনিরুজ্জামান মনির। আশির দশকের শেষভাগ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটানা গান রচনা করেছেন তিনি।

১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দুই জীবন’ সিনেমার ‘তুমি ছাড়া আমি একা পৃথিবীটা মেঘে ঢাকা’, ১৯৮৯ সালের ‘চেতনা’ ছবির ‘এই হাত করে নাও হাতিয়ার’ এবং ১৯৯০ সালের ‘দোলনা’ চলচ্চিত্রের ‘তুমি আমার কত চেনা’ গানের জন্য গীতিকার হিসেবে ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান মনিরুজ্জামান মনির।  

একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকারের জনপ্রিয় কয়েকটি গান হলো- ‘বুকে আছে মন, মনে আছে আশা’, ‘কী জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, কী দিয়া মন কাড়িলা’, ‘তোমাকে চাই আমি আরও কাছে’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ও আমার বন্ধু গো চির সাথি পথচলার’, ‘আমি চিরকাল প্রেমেরও কাঙাল’ ইত্যাদি।

সিনেমায় তার লেখা সর্বশেষ জনপ্রিয় গান ‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও, আমি এক সিন্ধু হৃদয় দেব’।