'পেয়ারার সুবাস' সিনেমার প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে এসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে আর ফেরেননি জনপ্রিয় এ অভিনেতা।
Published : 08 Feb 2024, 04:39 PM
ন্যাটাঙ্গনের প্রিয় মুখ অভিনেতা আহমেদ রুবেলকে চোখের জলে শেষ বিদায় দিলেন সহকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় তার মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে; সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সহকর্মী অভিনয়শিল্পীরা। পরে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে হয় জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন।
বুধবার 'পেয়ারার সুবাস' সিনেমার প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে এসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে আর ফেরেননি জনপ্রিয় এই অভিনেতা। তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।
ক্যারিয়ারের শুরুতে মঞ্চ নাটকে যুক্ত ছিলেন রুবেল। তিন দশক ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে। নাট্যদলটির হয়ে তিনি মঞ্চে অভিনয় করেছেন কীত্তনখোলা, কেরামত মঙ্গল, হাতহদাই, একাত্তরের পালা, যৈবতী কন্যার মন, মার্চেন্ট অব ভেনিস ও বনপাংশুলের মত নাটকে।
শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তার শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠানে ঢাকা থিয়েটারের সহকর্মী, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, অভিনয় শিল্পী সংঘ ও চলচ্চিত্র জগতের সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকা থিয়েটারের প্রধান নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “রুবেল ১৯৮৭ সালে ঢাকা থিয়েটারের যোগ দেন। মঞ্চে রুবেলকে এই শ্রদ্ধা নিবেদন কেবল ঢাকা থিয়েটারের নয়, বরং তাকে বিদায় জানাচ্ছে দেশের সকল থিয়েটারকর্মী।”
চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে জোহরের নামাজের পর রুবেলের জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম, নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম, সালাহউদ্দিন লাভলু, আফসানা মিমি, শহীদুল আলম সাচ্চু, প্রসূন রহমান, আহসান হাবিব নাসিম, জাকিয়া বারী মমসহ নাটক ও সিনেমা মানুষেরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে রুবেলের কফিন নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স রওনা হয় গাজীপুরের পথে। গাজীপুরের উত্তর ছায়াবীথি জোড় পুকুর মসজিদে তার আরেক দফা জানাজা হবে। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম জানান।
১৯৬৮ সালের ৩ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া আহমেদ রুবেল বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। অভিনয়ের সঙ্গে তার সখ্য মঞ্চ দিয়ে।
সেলিম আল দীনের 'ঢাকা থিয়েটারে' যোগ দেওয়ার পর ‘হাতহদাই’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন রুবেল। তাকে প্রথম টিভি নাটকে পাওয়া যায় একুশে টেলিভিশনের পর্দায় গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নযাত্রা’য়। তারপর হুমায়ূন আহমেদের ঈদনাটক 'পোকা'য় অভিনয় করেন রুবেল, তৈরি হয় তার আলাদা ধরনের জনপ্রিয়তা।
হুমায়ূন আহমেদের ‘অতিথি', 'নীল তোয়ালে', 'বিশেষ ঘোষণা', 'সবাই গেছে বনে', ' বৃক্ষমানব', 'যমুনার জল দেখতে কালো' নাটকে রুবেলের অভিনয় প্রশংসিত হয়। মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা ধারাবাহিক 'প্রেত' নাটকটি রুবেলকে দেয় অন্যরকম জনপ্রিয়তা।
এক পর্বের এবং ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে 'বারোটা বাজার আগে', 'প্রতিদান', 'নবাব গুন্ডা', 'এফএনএফ', 'একান্নবর্তী', 'রঙের মানুষ, 'পাথর', 'অতল', 'চেয়ার', 'স্বর্ণকলস', 'আয়েশার ইতিকথা', 'দূরের বাড়ি কাছের মানুষ', সৈয়দ বাড়ির বউ'সহ আরও অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন রুবেল।
চলচ্চিত্রে রুবেলের যাত্রা শুরু ১৯৯৪ সালে, বাণিজ্যিক ধারার 'আখেরি হামলা' সিনেমা দিয়ে। এ পর্যন্ত 'আজকের ফায়সালা', 'মুক্তির সংগ্রাম', 'রঙিন রংবাজ', 'কে অপরাধী', 'সাবাস বাঙালি', 'মেঘলা আকাশ', 'পৌষ মাসের পিরিত'সহ ১৯টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন রুবেল।
তবে চলচ্চিত্রে রুবেলকে জনপ্রিয়তা ও পুরস্কার এনে দিয়েছে হুমায়ূনের 'চন্দ্রকথা', 'শ্যামল ছায়া'।
এছাড়া 'ব্যাচেলর', মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা 'গেরিলা', 'দ্য লাস্ট ঠাকুর', 'অলাতচক্র', 'লাল মোরগের ঝুঁটি' ও রুবেলের মুক্তি পাওয়া সর্বশেষ সিনেমা 'চিরঞ্জীব মুজিব' তাকে একজন দারুণ অভিনেতা হিসেবে বারবার তুলে ধরেছে।
কলকাতার সিনেমাতেও রুবেল কাজ করেছেন। ২০১৪ সালে ভারতের নির্মাতা সঞ্জয় নাগ পরিচালিত 'পারাপার' এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
রুবেল সরব হয়েছিলেন হালের ওটিটিতেও। সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী গোয়েন্দা চরিত্র 'ফেলুদা' হিসেবেও তাকে পাওয়া গেছে। 'নয়ন রহস্য' উপন্যাস অবলম্বনে তৌকির আহমেদ পরিচালিত ওয়েব সিনেমায় 'ফেলুদা' হয়েছিলেন রুবেল। এছাড়া 'কাইজার' সিরিজেও তাকে দেখা যায়।
শেষ কাজ 'পেয়ারার সুবাস' নিয়ে দারুণ আশাবাদী ছিলেন রুবেল। শুক্রবার সারা দেশে মুক্তি পাচ্ছে নূরুল আলম আতিক নির্মিত এ সিনেমা।
আরও পড়ুন-