বাবা দিবসে এক ফেইসবুক পোস্টে পরীমনি বলেছিলেন, তার নানা শামসুল হক গাজীকেই তিনি বাবার জায়গা দিয়েছে।
Published : 24 Nov 2023, 09:45 AM
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমনির নানা মারা গেছেন।
শুক্রবার সকালে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে এ খবর জানিয়েছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, শুক্রবার রাত ২টা ১১ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরীমনির নানা শামসুল হক গাজীর মৃত্যু হয়েছে। এই হাসপাতালে আইসিইউতে ছিলেন পরীমনির নানা।
শামসুল হক গাজীর বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার সিংহখালী গ্রামে। পেশায় তিনি স্কুল শিক্ষক ছিলেন।
'আমাদের শ্রদ্ধেয় নানুভাই..' ক্যাপশন দিয়ে ফেইসবুকে চয়নিকা লিখেছেন, "
"পরীমণি এর প্রিয় নানুভাই রাত ২:১১ মিনিটে ২৪ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসারত অবস্থায় সবাইকে কাঁদিয়ে আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গিয়েছেন। আজাদ মসজিদে গোসল করানোর পর ভোর ৪টায় পরীমনি নানুভাইকে নিয়ে এখন তার নিজ গ্রামের পথে। সেখানেই নানীর পাশে নানুভাইকে শায়িত করা হবে।"
পরীমনির নানার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে চয়নিকা লিখেছেন, "সবাই পরীর জন্যে, পরীর নানুভাইর জন্যে দোয়া / প্রার্থনা করবেন, যেন পরপারে তিনি শান্তিতে থাকেন। পরী যেন সহ্য শক্তি পায়। আহা! নানুভাই আপনাকে কোনোদিন ভুলবো না। আমার দেখা আপনি অসাধারণ সুশিক্ষিত একজন মানবিক মানুষ। আপনার ভালোবাসা অমলিন। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।"
কিছুদিন আগে 'ডোডোর গল্প' সিনেমার শুটিং সেটে সাংবাদিকদের কাছে নানার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির খবর দিয়েছিলেন পরীমনি। তিনি বলেছিলেন, "আমার নানুভাই হাসপাতালে, আমি নিজেও হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। সব মিলিয়ে পারিবারিকভাবে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। নানুভাইয়ের এখন যে অবস্থা, কখন যে কী ঘটে যায়, বলা যায় না। আমি আসলে ভাবতেই পারছি না। নানুভাই না থাকলে আমার যে কী হবে। কীভাবে থাকব আমি!"
ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে পরীমনি বেড়ে ওঠেন ভাণ্ডারিয়ায় তার নানা বাড়িতে। সেখান থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন পরীমনি।
পরীমনির ভাষ্য অনুযায়ী, নানা শামসুল গাজীই ছিলেন তার 'অভিভাবক'। পরীমনি ঢাকায় স্থায়ী হলেও তার নানা শামসুল হক ভাণ্ডারিয়াতেই থাকতেন। তবে পরীমনির সুসময়-দুঃসময়ে বরাবর নাতনির পাশে দেখা গেছে তাকে।
পরীমনিও তার জীবনে শামসুল হককে দিয়েছিলেন 'বাবার জায়গা'। ছয় বছর আগে বাবা দিবসে এক ফেইসবুক পোস্টে পরীমনি বলেছিলেন, তার নানা শামসুল হক গাজীকেই তিনি 'বাবার জায়গা দিয়েছেন'।
নানাও মনে করতেন নাতনিই 'তার সব'। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শামসুল হক গাজী বলেছিলেন, "আমার কাছে একদিকে পৃথিবী আরেক দিকে পরী। ওই-ই আমার পৃথিবী।"
পরীমনির ফেইসবুকের 'ফটো গ্যালারিতে' নানা-নাতনির বহু ছবি জায়গা পেয়েছে। এমনকি কভার ফটোতেও পরীমনি যে ছবিটি রেখেছেন, তাতে আছেন তার নানা।
২০২১ সালে ঢাকা বোট ক্লাবের ঘটনার পর র্যাবের করা মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পরীমনি যখন কারাগারে যান, আলোচনায় আসেন তার নানা শামসুল হক গাজী। সে সময় ঢাকায় এসে শামসুল হক গাজী বারবার নাতনির মুক্তি দাবি করে বলেছিলেন, "ষড়যন্ত্র করে তার নাতনিতে ফাঁসানো হয়েছে'।
সে সময় পরীমনির মামলার শুনানির সময় আদালত প্রাঙ্গণে নাতনিকে দেখতে গেলে 'আবেগঘন পরিবেশ' তৈরি হয়। আদালতে অপেক্ষমাণ নানাকে দেখে কেঁদে ফেলেন এই নায়িকা।
অভিনেতা শরীফুল রাজের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিয়ের সময়ও পরীমনির পাশে একমাত্র অভিভাবক হিসেবে শামসুল হক গাজীকে দেখা গেছে। শামসুল হক উপস্থিত ছিলেন নাতনির ছেলে রাজ্যর জন্মের সময় এবং তার 'মুখে ভাত' অনুষ্ঠানেও।
পরীমনি একা বা বিয়ের পর রাজের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যখন ঘুরতে গেছেন, অনেক সময়ে সঙ্গে থেকেছেন শামসুল হক। পরীমনি ও রাজ দুজনে মিলে পালন করেছেন নানার জন্মদিন অনুষ্ঠানও।
এরপর চলতি বছরে পরীমনির সংসার ছেড়ে রাজ বেরিয়ে যাওয়ার পর, নাতনির কাছে ছুটে আসেন এই নানাভাই। সে সময় বেশ কিছুদিন নাতনির সঙ্গে ছিলেন তিনি। ছেলে রাজ্যর জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও শামসুল হক গাজী ছিলেন নাতনির সঙ্গে।