‘এই বুঝি ডাক দিয়ে বলবে, চঞ্চল, বাবা ঘুমাইছ?’

চঞ্চল লিখেছেন, “বাবার কোনো কথা আর কোনো দিন কানে বাজবে না, বাবাকে দেখতে পাবো না, এগুলো কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না।”

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2022, 07:03 AM
Updated : 29 Dec 2022, 07:03 AM

বাবা হারানোর শোক ভুলতে পারছেন না অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার এক ফেইসবুক পোস্টে স্মৃতিচারণ করে তিনি লিখেছেন, “বাবার কোনো কথা আর কোনো দিন কানে বাজবে না, বাবাকে দেখতে পাব না, এগুলো কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।”

ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার মারা যান চঞ্চলের বাবা রাধোগোবিন্দ চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। পরদিন বুধবার পাবনার সুজানগর উপজেলার কামারহাটে নিজ গ্রামে তার শেষকৃত্য হয়।

চঞ্চল লিখেছেন, “২৭ ডিসেম্বর রাতে, বাবা আমাদের সকলের মায়া মমতা ত্যাগ করে, ইহলোক ত্যাগ করে চলে গেল পরলোকে। গতকাল (বুধবার) নিজগ্রাম কামারহাটের পদ্মাপাড়েই তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাবা মিশে গেলো এই গ্রামেরই আলো বাতাসে, পদ্মার জলে।

“সন্ধ্যায় ধর্মীয় আচার শেষে যখন নদীর পাড় থেকে বাড়ি ফিরলাম, তখন ভুলেই গেছিলাম যে, বাবাকেই তো নদীর পাড়ে রেখে এসেছি। সারা রাত দুই চোখের পাতা এক করতে পারিনি। সারা বাড়িময়, ঘরময় যেন বাবা গুটি গুটি পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। এই বুঝি কখন আমায় ডাক দিয়ে বলবে, 'চঞ্চল, বাবা ঘুমাইছো?”

এই অভিনেতা লিখেছেন, “যখন এই কথা গুলো লিখছি, শীতের এই সকালে, বাবার শালটাই আমার শরীরে জড়ানো। যে জায়গায় রোদে বসে আছি, এ জায়গায় বসেই বাবা রোদ পোহাতো। রোদের উষ্ণতা নয়, বাবার শরীরের কোমল উষ্ণতা খুঁজে ফিরছি এখন, বাকি জীবনটা হয়তো এভাবেই খুঁজতে হবে।”

সমবেদনা ও শোক জানানোয় ভক্ত-অনুরাগীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চঞ্চল। ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “বাবার প্রয়াণে যে সকল সুহৃদ আমাদেরকে নানান ভাবে সমবেদনা জানিয়েছেন, শেষকৃত্য অনুষ্ঠান পর্যন্ত আমাদের পাশে ছিলেন, তাদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা।”

চঞ্চলের পারিবারিক বন্ধু অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চঞ্চলের বাবা রাধাগোবিন্দ কাকা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ছিলেন। ওই এলাকায় তার অগণিত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন। পাঁচ বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে চঞ্চল ছোট। চঞ্চলকে তো সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ ভালোবাসে। তাই চঞ্চলের বাবার মৃত্যুতে অগণিত মানুষ শোকাহত হয়েছে।”

চঞ্চলের উদ্দেশে বুধবার বিকালে ফেইসবুকে শাহনাজ খুশি লেখেন, “শেষ হল চঞ্চল বন্ধু, তোর বাবার শেষ যাত্রা। কী বিচিত্র এ পৃথিবীর নিয়ম। গতকাল পর্যন্ত যে মানুষটাকে কত যত্ন করে রাখা, প্রাণটা না থাকলে তাকেই কোথায় রেখে আসে?

“আমি প্রায়শই বলতাম, যার যায়, সে ছাড়া এ নিষ্ঠুর শূন্যতা কেউ বোঝে না।… আজ তোর আকুল করা আহাজারি দেখে বুকটা বিদীর্ণ হচ্ছিল, আর বারবার মনে হচ্ছিল, এখন তুইও জেনে গেলি, 'যার যায় সেই জানে এ গভীর শূন্যতা।”

ঢাকার আরণ্যক নাট্যদলে যুক্ত চঞ্চল চৌধুরী বেশ কয়েকটি মঞ্চনাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হওয়ার পর একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের মাধ্যমে সবার নজর কাড়েন।

পরের সময়টায় নিয়মিত নাটকে অভিনয় করেছেন। সিনেমায় গিয়াস উদ্দীন সেলিমের ‘মনপুরা’ দিয়ে তুমুল প্রশংসিত হন। পরে ‘মনের মানুষ’, ‘আয়নাবাজি’, ‘দেবী’ ও সবশেষ ‘হাওয়া’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান।

এছাড়া ‘তাকদীর’, ‘কারাগার’সহ বেশ কয়েকটি ওয়েব সিরিজে অভিনয়ে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন এই অভিনেতা।

আরও খবর

Also Read: বাবাকে হারালেন চঞ্চল চৌধুরী