অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ব্যাঙ্কসটাউনের হোয়েটস সিনেমা হলের সামনে মাহফুজ-শাবনূরকে পেয়ে ঘিরে ভক্তরা।
Published : 15 Aug 2023, 03:01 PM
চিত্রনায়িকা শাবনূরের বর্ণনায়, ’প্রহেলিকা’ সিনেমায় ‘কামাল’ করে দিয়েছেন অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ; আর মাহফুজের কথা হল, বাংলাদেশের সিনেমা জগতে ‘অভিনয়ের মানদণ্ডের নাম’ শাবনূর।
দুই অভিনয় শিল্পী একে অপরের প্রশংসা করেছেন ক্যামেরার সামনে, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ব্যাঙ্কসটাউনের হোয়েটস সিনেমা হলের সামনে।
ওই হলে চলছে কোরবানির ঈদে মুক্তি পাওয়া চয়নিকা চৌধুরীর সিনেমা ‘প্রহেলিকা’। যেখানে মূল দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাহফুজ আহমেদ ও শবনম বুবলী। দেশের পর এখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনির কয়েকটি হলে চলছে সিনেমাটি।
দিন দুই আগে ব্যাঙ্কসটাউনের হোয়েটস সিনেমা হলে ‘প্রহেলিকা’ দেখতে এসেছিলেন শাবনূর, সঙ্গে ছিল ছেলে আইজান নিহান। আর ওই হলেই ভক্তদের সামনে সশরীরে দেখা দিতে যান মাহফুজ আহমেদ।
সিনেমা দেখে শাবনূর যখন বেরিয়ে মাহফুজের কাছে আসেন, সামনাসামনি দুই তারকাকে পেয়ে সেখানে ভিড় জমে যায়। অনেকে ক্যামেরা হাতে সেলফি তোলেন শাবনূর ও মাহফুজের সঙ্গে। অনেকে মোবাইলের ভিডিও অন করে প্রশ্নও করতে শুরু করে দেন। সেখানে দর্শকদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলেন দুই তারকা শিল্পী।
সাধারণত বোরখা পরে মুখ নেকাবে ঢেকে চলাফেরা করা শাবনূরকে এদিন নেকাব ছাড়া অবস্থায় পাওয়া যায়।
এর কারণ জানতে চাইলে ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের এই নায়িকা জানান, মাহুফুজের ‘হুমকি’তে তিনি এক দিনের জন্য নেকাব ছেড়েছেন।
শাবনূর বলেন, “সাধারণত আমি রোরখার সঙ্গে নেকাব পরে আসি, আরাম করে সিনেমা দেখব বলে। কিন্তু আজকে মাহফুজ আগেই বলে দিয়েছিল যে আমার মুখে যদি নেকাব থাকে তাহলে আমার সঙ্গে সে কোনো কথাই বলবে না। তাই এ অবস্থা।“
শাবনূরের ভাষ্য ‘প্রহেলিকা’ সিনেমায় মাহফুজ ‘অসাধারণ’ অভিনয় করেছেন।
সিনেমার নায়িকা বুবলীসহ দৃশ্যায়ন, সিনেমাটোগ্রাফি, আবহ সংগীত, গল্পে নাটকীতাসহ খুঁটিনাটি সবকিছুর দারুণ প্রশংসা করেন শাবনূর। তারিফ করেছেন পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীরও কাজেরও।
মাহফুজের দিকে তাকিয়ে শাবনূর বলেন, “আমিতো মুগ্ধ হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এত সুন্দর অসাধারণ অভিনয়। বিশেষ করে তোমার গেটআপ খুব ভালো হয়েছে। আমার চাই সবসময় এভাবে আমাদের ভালো সিনেমা উপহার দাও।“
আট বছর পরে অভিনয়ে মাহফুজের ফিরে আসা ফেরার মত হয়েছে মন্তব্য করে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান শাবনূর।
শাবনূরের কথা হল, সিডনির বাঙালি দর্শকতো বটেই, ওই দেশে জন্ম নিয়ে বড় হওয়া বাঙালি পরিবারের কিশোর তরুণ দর্শকদেরও মাহফুজ এবার হলে টেনে এনেছেন।
দর্শকদের উদ্দেশে শাবনূর বলেন, “এখন ভালো ভালো সিনেমা হচ্ছে, আপনাদের সবাইকে হলে এসে দেখতে হবে। ভালো সিনেমার সঙ্গে থাকতে হবে।”
এই দুই সতীর্থ ‘চার সতীনের ঘর’, ‘কপাল’, ‘বাংলা’সহ আরও কয়েকটি সিনেমায় জুটি বেঁধেছিলেন।
আগামীতে একসঙ্গে তাদের দেখা যেতে পারে কি না এক ভক্তের প্রশ্নে শাবনূর হতাশ করেননি।
বলেন, “চেষ্টা করছি, দেখা যাক কি হয়। ভালো কোনো কাজ এলে অবশ্যই একসঙ্গে করা হবে।“
এ সময় শাবনূরকে চলচ্চিত্রে ফেরার অনুরোধ জানান মাহফুজ।
উত্তরে শাবনূর বলেন, “ব্যাক বা কামব্যাক বিষয়টা বুঝি না, আমরা ইন্ডাস্ট্রির মানুষ, শিল্পী আমরা। যখন যখন আমরা কাজ করতে পারি। এর কোনো সময় নাই। ভালো কোনো কাজ পেলে কাজ করব।“
‘প্রহেলিকা’ দেখার জন্য টিকেট জোগাড় করতে নাজেহাল হতে হয়েছে বলে শাবনুর জানান। তিনি বলেন, “টিকিট সংকটের কারণে আমার সিনেমাটা দেখতে দেরি হল। এখন যখন পেলাম তাও একটা টিকেট। কিন্তু আমি আর আমার ছেলে, মানুষতো দুইজন।বাধ্য হয়ে দুজন আমরা একটা সিট শেয়ার করেছি। এক সিটে বসে কষ্ট করে মা ছেলে দেখলাম।
“দর্শক হিসেবে এটা একটু কষ্টের হলেও একজন শিল্পী হিসেবে, সিনেমার মানুষ হিসেবে এই হাউসফুল শোই আমাদের সার্থকতা। আর মাহফুজ এত দিন পর পর্দায় এসে দেখিয়ে দিল।“
শাবনূরকে ‘বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনয়ের মানদণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে মাহফুজ বলেন, ‘আজ যারা অভিনয় করছেন, নির্মাতারা তাদের বলেন, শাবনূরের মত হতে হবে। অর্থাৎ অ্যাকটিংয়ে উনি স্ট্যান্ডার্ড। আগামীতেও যারা ফিল্মে আসবেন, তাদেরও একই কথা বলা হবে।
সিনেমা দেখার জন্য শাবনূরকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে প্রহেলিকার ‘মনা’ চরিত্রের মাহফুজ বলেন, “শাবনূর যখন ছবিটি দেখেছে, তাও আবার ছেলেকে কোলে নিয়ে, আবার আমাদের কাজের প্রশংসা করছে, এটাই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার।“
আরও বলেন, “একসঙ্গে যখন সিনেমা করেছি, তখনও ওর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আজও তাই, শাবনূর এত কথা বলল, আমি শুধু তাকিয়ে থাকলাম।“
মাহফুজের এই কথায় হাসির রোল পড়ে যায় উপস্থিতদের মধ্যে।
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ‘চাঁদনী রাতে’র মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন শাবনূর। তার পারিবারিক নাম কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। সিনেমায় আসার পর পরিচালক এহতেশাম তার নাম রাখেন শাবনূর।
পরে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরে জুটি হয়ে উঠে দারুণ জনপ্রিয়; তাদের অভিনীত ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘তুমি আমার’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমা ছিল বেশ ব্যবসা সফল।
২০০৫ সালে মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘দুই নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শাবনূর।
সিনেমা থেকে বর্তমানে দূরে সরে থাকা শাবনূর ছেলেকে নিয়ে কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় সিডনিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
শাবনূর মাঝে-মধ্যে দেশে ফেরেন ; দুয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও দেখা যায় তাকে। কয়েক বছর আগে মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘এতো প্রেম এতো মায়া’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
মাহফুজ আহমেদও বেশিরভাগ সময় সিডনিতেই থাকেন। নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা মাহফুজকে সর্বশেষ ‘জিরো ডিগ্রি’ চলচ্চিত্রে দেখা যায়। এরপর আর কোথাও ছিলেন না তিনি।
দীর্ঘ ৮ বছর পর ‘প্রহেলিকা’ জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান মাহফুজ। অভিনয়ে ফিরে কেবল বড় পর্দায় নয় ওটিটিতেও কাজ শুরু করেছেন এই অভিনেতা।
অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পেলো মাহফুজ-বুবলির ‘প্রহেলিকা’
প্রেম-সন্দেহ, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের গল্প নিয়ে ‘প্রহেলিকা’র ট্রেইলার