অঞ্জন লিখেছেন, "পথসভা, প্রতিবাদী মিছিল চলতে থাকবে। এটাই এখন একমাত্র পদক্ষেপ। কারণ, মানবতা আবারও আহত, রক্তাক্ত।"
Published : 21 Aug 2024, 07:03 PM
কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে সুবিচার নিয়ে ‘আশাবাদী নন’ বলে জানিয়েছেন গায়ক-অভিনেতা ও নির্দেশক অঞ্জন দত্ত।
আনন্দবাজার লিখেছে, এই মামলায় মঙ্গলবার প্রথম দিনের শুনানির পর দেশটির সুপ্রিম কোর্টে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছে।
আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই প্রতিবাদে আরো অনেকের সঙ্গে শামিল হয়েছেন অঞ্জন, হেঁটেছেন প্রতিবাদী পদযাত্রায়।
এবার এই শিল্পী ক্ষোভ, উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সোশাল মিডিয়ায়।
ফেইসবুকে এক পোস্টে অঞ্জন বলেন, "ব্যক্তিগতভাবে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে হেঁটে, সোচ্চারে এবং নীরবে প্রতিবাদ করলেও এখনও খুব আশাবাদী নই।”
বিচারের প্রত্যাশা রেখেই প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই গায়ক বলেন, “আমাদের সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে এবং ন্যায়বিচারের আশা করতে হবে। তার মধ্যেই পথসভা, প্রতিবাদী মিছিল চলতে থাকবে। এটাই এখন একমাত্র পদক্ষেপ। কারণ, মানবতা আবারও আহত, রক্তাক্ত।”
অঞ্জনের কথায়, “শহর থেকে জেলা স্তর হয়ে গ্রাম এবং আন্তর্জাতিক স্তরে এই জনসমাগম অনিবার্য এবং ন্যায়সঙ্গত।”
এ সময় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে অঞ্জন বলেন, “ক্ষমতায় থাকা রাজ্য সরকারের সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনতা এবং অবহেলাকে অস্বীকার করা যায় না। উপেক্ষা করারও উপায় নেই। ফলে, আরজি কর-মামলার হস্তান্তর সিবিআইয়ের হাতে, সুপ্রিম কোর্টে। ”
নিজে নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী নন জানিয়ে অঞ্জন বলেন, “প্রতিদিন অজস্র মানুষ ‘নিরপেক্ষ’ বিচার চেয়ে ধ্বনি তুলছেন। এর নিজস্ব মূল্য আছে। যা সময় বিচার করবে। এই কণ্ঠস্বর যাতে কোনোভাবেই কোনো রাজনৈতিক রঙে রঙিন না হয়ে ওঠে।"
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়ে এই অভিনেতা লিখেছেন, "সময় এসেছে দুর্নীতি ও যে কোনো ধরনের ধর্মান্ধ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। আর যারা এলোমেলো মন্তব্য করছেন, তারা ‘অরাজনৈতিক’। তারা আসলে সামাজিক মাধ্যমে ফয়দা তোলার হুজুগে রয়েছেন। যাতে সারা ক্ষণ এই চর্চায় থাকেন।"
অঞ্জনের ভাষ্য, “আমার ৭০ বছরের পুরানো অতীত আমাকে সন্দিহান করে তোলে। সবকিছুতেই সন্দেহ। তবুও, আমি একজন মানুষ এবং এই সমাজে বাস করি। আমি আর জি কর হাসপাতালে ভিকটিম এবং তার পরিবারের জন্য লজ্জায় মাথা নত করছি এবং তার পরিবারের সঙ্গে যেন ন্যায় হয় সেটা কামনা করছি।"
হাসপাতালের ওই ঘটনার পর কর্মস্থলে নারীদের রাতের পালার কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে রাজ্য সরকার যে আভাস দিয়েছে, সে বিষয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন সঞ্চলক অভিনেতা মীর আফসার আলী। মীরের স্ত্রী সোমা ভট্টাচার্য পেশায় একজন চিকিৎসক।
মীর বলেন, "ধরুন, রাতের ডিউটি নারীদের জন্য আর আবশ্যিক থাকছে না এবং আরজি কর কাণ্ডের পর প্রত্যেক মেয়েই চাইবেন যাতে সুরক্ষিত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারেন। তাদের বাড়ি থেকেও হয়ত বলবে, রাতের ডিউটি না করাই মঙ্গল।
“কিন্তু নারী সেবিকারা রাতে কাজ না করলে তাদের জায়গায় পুরুষ নার্স আসবেন। এ বার কি তা হলে রোগিণীদের পালা? তাদের সুরক্ষিত রাখার দায় কে নেবে?"
প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার আওয়াজ তুলে মীর বলেন, "শাসনব্যবস্থা একেবারে নড়বড়ে হয়ে গেলে শাসকের থেকে সমাজের কাছে এমন বার্তাই আসে। তাই সুপ্রিম কোর্ট থেকে অন্তিম রায় না আসা পর্যন্ত প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে। পথে নামতে হবে। এভাবেই চাপে রাখতে হবে সব পক্ষকে।"
গত ৯ অগাস্ট কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় ধর্ষণের শিকার হন ৩১ বছর বয়সী ওই শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসক। গত ৮ অগাস্ট থেকে তিনি টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটিতে ছিলেন, রাতে সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খেয়ে তিনি পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান। সেখানে সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
ময়নাতদন্তে নিহত চিকিৎসকের শরীরে চরম যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মেলে। এরপরই উত্তাল হয়ে ওঠে আরজি কর হাসপাতালসহ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি।
তখন থেকেই ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। ক্ষোভে-প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরাও।