মাসুদ আলী খানের চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ‘ইতিহাসের মৃত্যু হল’ বলে মন্তব্য করেছেন অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক মামুনুর রশীদ।
Published : 31 Oct 2024, 10:49 PM
পঞ্চাশের দশকে ড্রামা সার্কেলের হয়ে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন, ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র চালুর পর ‘ভাই ভাই সবাই’ দিয়ে তার ছোট পর্দায় অভিনয় শুরু, সেই খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পী মাসুদ আলী খান পাড়ি জমালেন অনন্তলোকে।
তার মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সহকর্মীরা স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথোপকথনে।
অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক মামুনুর রশীদ বললেন, “টেলিভিশন নাটকে তার সঙ্গে অনেক কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আমার নির্দেশনায় নাটকে তিনি অভিনয়ও করেছেন। মাসুদ আলী খানের চলে যাওয়ার মধ্যদিয়ে ইতিহাসের মৃত্যু হল।”
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে ঢাকার গ্রিনরোডের বাসায় অভিনয়শিল্পী মাসুদ আলী খানের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
পাঁচ দশকে প্রায় পাঁচশ নাটকে অভিনয় করা মাসুদ আলী খান হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের টিভি দর্শকদের পরিচিত মুখ। তবে বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি ছিলেন অভিনয় থেকে দূরে।
বয়সে বড় হলেও মাসুদ আলী খান ‘বন্ধুর মত’ মিশতেন বলে জানান মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, “সবশেষ গত বছর নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় আয়োজিত ‘আলী যাকের নতুনের উৎসবে’ চারজনকে সম্মাননা জানিয়েছিল। সেখানে আমাকে এবং মাসুদ ভাইকেও সম্মাননা জানানো হয়। সেই অনুষ্ঠানেই সবশেষ তার সঙ্গে দেখা। এই মৃত্যুর খবরটি আমাদের জন্য ভীষণ বেদনার।”
১৯২৯ সালে ৬ অক্টোবর মানিকগঞ্জে জন্ম নেওয়া মাসুদ আলী খান পেশাজীবনে ছিলেন সরকারি চাকুরে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সচিব হিসেবে তিনি অবসর নেন।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে নাটকের পাশাপাশি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন মাসুদ আলী খান। ২০২৩ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।
'দুই দুয়ারি', 'দীপু নাম্বার টু', 'মাটির ময়না', 'মোল্লা বাড়ীর বউ' তার অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা। আর তার অভিনীত আলোচিত কয়েকটি নাটক হল 'কূল নাই কিনার নাই', 'এইসব দিনরাত্রি', 'কোথাও কেউ নেই', 'গুলশান এভিনিউ' ,'শাপমোচন', 'পৌষ ফাগুনের পালা'।
মাসুদ আলী খানের মৃত্যু 'এক বিরাট শূন্যতার জায়গা' তৈরি করল বলে মন্তব্য করলেন অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার।
তিনি বলেন, "অত্যন্ত ভালো লোক ছিলেন, ভীষণ ভালোবাসতেন আমাকে। আমিও খুব শ্রদ্ধা করতাম। তার অভিনয়ের শক্তি দেখে মুগ্ধ হয়েছি বহুবার। হঠাৎ করেই মাসুদ ভাই যখন হুইল চেয়ারে বসে গেলেন, তখন মনটা খুব খারাপ হল। যেতে তো হবে সবারই, উনার চলে যাওয়াটা এক বিরাট শূন্যতার জায়গা তৈরি করল। উনি অভিনয়টা চমৎকার করতেন৷”
স্মৃতিচারণ করে এই অভিনেত্রী বলেন, "উনার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি স্মৃতি আছে দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘পৌষ ফাগুনের পালা’ নাটক করার সময়। তিনি খুব স্নেহময় একজন লোক ছিলেন, আমাদের মাথায় হাত দিয়ে কথা বলতেন, বুঝিয়ে দিতেন।"
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, “আমি মাসুদ আলী খানকে চিনি একজন বিখ্যাত অভিনেতা হিসেবে, একজন শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে। পঞ্চাশের দশকে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের নাট্যচর্চায় ‘ড্রামা সার্কেল’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যা পরে স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন ধারার নাট্যচর্চার পথ তৈরি করেছে।
“অভিনয়শিল্পী মাসুদ আলী খানের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। আর মানুষ হিসেবেও তিনি অত্যন্ত সংবেদনশীল। অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। মানুষকে ভীষণ সম্মান করে কথা বলতেন।”
গত ১৫ সেপ্টেম্বর গ্রিনরোডের বাসায় মাসুদ আলী খানকে দেখতে গিয়েছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। সে কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “তখনও তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। কিন্তু ভীষণ হাসিমুখে আমাদের স্বাগত জানিয়েছিলেন।”
জামিল আহমেদ বলেন, “প্রতিটা মৃত্যু আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়, আমরা কেউই থাকব না। মাসুদ আলী খানের মৃত্যুতে তার আত্মার শান্তি কামনা করি।”
আগের খবর
চলে গেলেন বর্ষিয়ান অভিনয়শিল্পী মাসুদ আলী খান
মাসুদ ভাইকে আগের মত হাঁটতে-চলতে দেখতে চাই: শিল্পকলার মহাপরিচালক