কারাগারের দ্বিতীয় পর্বে ঘুরে গেল গল্পের মোড়

মুক্তি পেল ওয়েব সিরিজ কারাগার’র দ্বিতীয় পর্ব; দর্শকদের অপেক্ষা ফুরোল।

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2022, 12:57 PM
Updated : 22 Dec 2022, 12:57 PM

‘কারাগার’র প্রথম পর্বে চোখ রাখা দর্শকরা অপেক্ষায় ছিল এই ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় পর্বের জন্য, টিজার আর নানা খবরে কৌতূহল উঠেছিল চরমে, সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে।

বুধবার রাতে কারাগার-২ মুক্তির পর দেখা গেল, গল্প এ জনপদের মানুষের একেবারে অচেনা না, আবার খুব বেশি চেনাও না। চরিত্র আর ঘটনাগুলো পরিচিত হলেও গল্পের ধরন সম্পূর্ণ অপরিচিত।

তরুণ নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার’র প্রথম পর্ব মুক্তি পায় চলতি বছরের আগস্টে।

মুক্তির দুই তিন দিনের মধ্যেই হইচই ফেলে দেয় ওয়েব সিরিজটি। এই জনপদের ব্যাতিক্রমী গল্প, গল্পের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেকগুলো প্রশ্ন, চঞ্চল চৌধুরী, আফজাল হোসেন, তাসনিয়া ফারিণ, ইন্তেখাব দিনার, এফএস নাইমদের অভিনয়, আবহ সংগীত আর শাওকীর নির্মাণ, কারাগারকেই শুধু নয়; বাংলা ওয়েব সিরিজকেই নিয়ে যায় অন্য উচ্চতায়।

গল্পটা ঢাকার হলেও পশ্চিমবঙ্গের দর্শকরাও হুমড়ি খেয়ে পড়ে। হইচইয়ে কারাগার দেখে ঢালিগঞ্জের দর্শক-সমালোচক থেকে শুরু করে সৃজিত, প্রসেনজিতরা ভূয়সী প্রশংসা করেন গল্প, নির্মাণ আর চঞ্চল চৌধুরীর।

প্রথম পর্বে জন্ম নেওয়া প্রশ্ন ও ধাঁধার উত্তর আসবে দ্বিতীয় পর্বে, এই আশায় দর্শক অপেক্ষা করতে থাকেন। দ্রুত দ্বিতীয় পর্ব মুক্তির দাবি ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

শাওকী দুই পর্বের শুটিং একসঙ্গে করে রেখেছিলেন। ফলে দর্শককে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। মাত্র চার মাসের মাথায় চলে আসে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।

কারাগারের প্রথম পর্বে দেখানো হয়েছিল আকাশনগর সেন্ট্রাল জেলের গল্প। যেখানে ১৪৫ নম্বর সেলে আবির্ভাব ঘটে এক রহস্য মানবের। ১৪৫ নম্বর সেল এমন একটি কারাকক্ষ, যা গত ৫০ বছর ধরে তালাবন্ধ ছিল।

Also Read: কারাগার-২ এর ট্রেইলারে রহস্য ঘোঁট পাকালো

রহস্য মানব ইশারা ভাষায় নিজেকে মীর জাফরের খুনি দাবি করেন। তাকে নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ, বিরক্তি, আগ্রহ আর ভয়ের সমাধান করতে এসে নতুন ঝামেলায় জড়িয়ে যান মানহা।

জেলের কয়েদিরা রহস্য মানবকে ‘গাজী পীর বাবা’ আখ্যা দিয়ে লালসালু খুলে বসে। তার দেওয়া একটা একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একাধিক নতুন প্রশ্ন সামনে চলে আসতে থাকে।

প্রথম পর্ব শেষ হয়েছিল কোনো রহস্যের সমাধান না করেই। গল্প কোন দিকে যাচ্ছে কোথাও ছিল না তার ইঙ্গিত। ফলে দ্বিতীয় পর্বে যে কোনো পথে যাওয়ার সুযোগ ছিল।
দ্বিতীয় পর্বেরও প্রথম তিন খণ্ডে ঘনীভূত হয়েছে রহস্য। এরপর গল্প মোড় নিয়েছে অন্যদিকে। পুরনো ঘটনায় নতুন গল্পের জন্ম দিয়ে।  

গল্প যে এমন ‘ইউটার্ন’ করবে তার কোনো ক্লু দেওয়া হয়নি প্রথম পর্বে। তবে অসংখ্য সুযোগ দেওয়া হয়েছে ক্লু খোঁজার।

রহস্য মানব কেন জেল খানায়? কীভাবে এলেন? তার পরিচয় কী? জেল খানায় আসার রহস্য কী? তিনি কি কথা বলতে পারেন? তার মায়ের পরিচয় কী? ফাদারের সঙ্গে রহস্যমানবের সম্পর্ক কী? জেলারের ছেলের সমস্যা কী? রাজু পাগলা গারদে ছিল কেন? জেল খানায়ই বা কেন এসেছিল? ফারিণের বাবা কে? ফারিণের পেটের সন্তানের বাবা কে? রহস্য মানবকে পেটানো পুলিশ দুর্ঘটনা শিকার হওয়ার কারণসহ সব প্রশ্নের উত্তর দর্শককে পর্দায় আটকে রেখে নিয়ে গল্পের শেষ প্রান্তে। আবার ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় কিছু প্রশ্নকে অবহেলা করা হয়েছে, তাও বলা যায়।

শেষে গিয়ে খামে-কান্তায় যখন মিলতে থাকে, কোনোটা দর্শককে যেমন স্তম্ভিত করে রাখবে, কোনোটা নিত্যান্তই মেলানোর উদ্দেশ্যে মেলানো বলে মনে হতে পারে। তবে হতাশ হওয়ার থেকে মুগ্ধতার জায়গা বেশি কারাগার ২ এ।

অভিনয় নিয়ে আলাদা করে না বললেই নয়, রহস্য মানব চঞ্চলের মুখে কথা ফুটলেও তার চোখ আর শরীরী অভিনয় বহাল ছিল দ্বিতীয় পর্বে। চঞ্চলকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন আফজাল হোসেন, জয়ন্ত চট্যোপাধ্যায়, ইন্তেখাব দিনার, এফএস নাইম, সুইটি, বিজরী বরকতুল্লাহ, তাসনিয়া ফারিণ, একে আজাদ সেতুরা। ছোট ছোট চরিত্রও নিজেকে ঢেলে দিয়েছেন।


নেয়ামত উল্লাহ মাসুমের গল্প ছিল প্রথম পর্বের চেয়েও গতিশীল। একের পর এক রহস্যের সমাধানের পাশাপাশি গল্প নতুন মোহনায় পাল তুলেছে খুবই সাবলীলভাবে।
শক্তিশালী সংলাপ দর্শককে যেমন ভাবিয়েছে, জায়গাবুঝে হাসিয়েছে। সংলাপ লেখা আর ডেলিভারিতে ঘাটতি চোখে পড়েনি একদমই। যে কারণে দুই একটা প্রশ্নের উত্তর দুর্বল হলেও পার পেয়ে গেছে অনায়াসে।

নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রাখেননি শাওকী। তকদীর ও কারাগার প্রথম পর্বের তুলনায় নির্মাণের মুন্সিয়ানা সুবাস ছড়িয়েছে প্রতিটি দৃশ্যে, প্রতিটি ফ্রেমে।

নির্মাণ আর অভিনয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে আবহ সংগীত। ওয়েব সিরিজ হিসেবে কারাগার সেরা কি না সে নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ওয়েব সিরিজের আবহ সংগীতের জায়গায় কারাগারের ধারেকাছে এখনও কেউ নেই।  

চরিত্র বাছাই, সেট ডিজাইন, মেকআপ, লাইটিং সিরিজের প্রতিটি দিক যত্নের সঙ্গে দেখভাল করা হয়েছে বোঝা যায়।

সবশেষে বলা যায়, বছর শেষে এসে বর্ষসেরা ওয়েব সিরিজের দৌড়ে বেশ এগিয়ে রইল কারাগার। সেই সঙ্গে বাংলা ওয়েব সিরিজের একটা মান নির্ধারণ করে দিল যেন।