মৃণাল সেন স্মরণে রঞ্জিত মল্লিক

নিজের খ্যাতি ও পরিচিতির জন্য মৃণালের অবদানই সবচেয়ে বেশি, এমনটাই বললেন এই অভিনেতা।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 05:03 PM
Updated : 14 May 2023, 05:03 PM

যার হাত ধরে বাংলা সিনেমায় পা রেখেছিলেন, কিংবদন্তি সেই পরিচালক মৃণাল সেনের জন্ম শতবার্ষিকীতে তাকে নিয়ে খোলামেলা কথা বললেন পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক।

রোববার মৃণাল সেনকে নিয়ে এই অভিনেতার একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ করেছেন আনন্দবাজার পত্রিকা।

অভিনয় জীবনে নিজের খ্যাতি ও পরিচিতির জন্য মৃণালের অবদানই সবচেয়ে বেশি, এমনটাই বললেন অভিনেতা রঞ্জিত।

অভিনয় না জানা সত্ত্বেও ইন্টারভিউ চলচ্চিত্রের জন্য রঞ্জিতকে নির্বাচন করেছিলেন মৃণাল। নিজের স্ক্রিন টেস্টের দিনটি স্মরণ করে রঞ্জিত বলেন, “ক্যামেরার পেছন থেকে মৃণালবাবু বলেছিলেন, ‘রেগে যাও, হাসতে থাকো, অবাক হয়ে তাকিয়ে থাক’। আমিও সেই মতো করতে থাকলাম। পরে জানতে পারলাম আমি নির্বাচিত হয়েছি। ছবির নাম ‘ইন্টারভিউ’। যেটি আমার ক্যারিয়ারের প্রথম ছবি। সত্যি বলতে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।”

মৃণালের সঙ্গে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা বলতে তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেন অভিনেতা। ইন্ডাস্ট্রিতে ৫০ বছরেরও বেশি সময় অভিনয় করার পরেও যা কখনোই ভোলেননি তিনি।

অভিনেতার মতে বাস্তব জীবন ও পর্দার জীবনকে কীভাবে মিলিয়ে দিতে হয় সেটা তিনি মৃণালের কাছ থেকেই শিখেছিলেন। কেননা ‘ইন্টারভিউ’ সিনেমায় ট্রামের দৃশ্যটিতে তিনি মূলত নিজের সম্পর্কেই কথা বলেছিলেন। সিনেমায় তার নাম, পদবি, এমনকি বাড়ি ভবানীপুর, সেটাও এক রেখেছিলেন নির্মাতা। এ রকম আরও একটা ঘটনা পুরো অভিনয় জীবনের আর কখনোই ঘটেনি বলে অভিনেতা জানান।

সিনেমার বাসের মধ্যে একটি পকেটমারকে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের কোনো সংলাপই প্রস্তুত ছিল না। তাতে অভিনেতা হতভম্ভ হয়ে পড়েছিলেন। কারণ,অভিনয়টা কীভাবে করতে হয়, তা তখনও তিনি পুরোপুরি বুঝে ওঠেননি।

সেসময় সংলাপ সংক্রান্ত জটিলতায় মৃণালের শরণাপন্ন হলে তিনি বলেছিলেন, “ধুর, পুলিশ যা প্রশ্ন করবে, তার উত্তর দিয়ে দেবে। শুধু মাথায় রাখবে তোমায় তাড়াতাড়ি বেরুতে হবে। কারণ বিকাল ৩টা নাগাদ তোমার একটা ইন্টারভিউ আছে।”

একই সঙ্গে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় যিনি অভিনেতা করছিলেন, তাকে বলেছিলেন, এমনভাবে অভিনয় করতে যেন মনে হয় উনি রঞ্জিতকে একটু দেরি করিয়ে দিতে চাইছেন। এভাবেই দৃশ্যটি ধারণ করেছিলেন মৃণাল।

আর একদিন আরেক দৃশ্যের সংলাপের জন্য অভিনেতাকে নির্মাতা বলেছিলেন,“কিছু নেই! যা পারো বলে যাও।”

এরপর নির্মাতার নির্দেশ অনুযায়ীই দৃশ্যটি করেছিলেন অভিনেতা। অভিনেতা জানান, “মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ, উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনের ছবি- অর্থাৎ যা মুখে এল বলে গেলাম। পরে দেখি ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড পুরো বন্ধ করে দিয়ে আমার ওই অভিব্যক্তিগুলোকে উনি মন্তাজ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অভিব্যক্তিতে সংগীত জুড়েছেন, কিন্তু কোনো সংলাপ রাখেননি। এ রকম ভাবনা ওনার মতো একজন জিনিয়াসের পক্ষেই সম্ভব।”

‘ইন্টারভিউ’-এ অভিনয় করে প্রথমবারের মতো চেক প্রজাতন্ত্রের কার্লোভি ভ্যারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান রঞ্জিত।

মৃণালের সঙ্গে মাত্র দুটি সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ ঘটে অভিনেতার। ইন্টারভিউ এর পরে কলকাতা সিরিজের ‘কলকাতা ৭১’ সিনেমায় একটা ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।

ব্যক্তি মৃণাল প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, “অনেকেই হয়ত ভাবেন যে, মৃণালবাবু ছিলেন গুরুগম্ভীর মানুষ। আদতে উনি ছিলেন অত্যন্ত রসিক। শট দিতে না পারলে যেমন বকুনি খেয়েছি, আবার ফ্লোরে মজাও করতেন।”

স্ত্রীর মৃত্যুর পর মৃণাল সেন কিছুটা ভেঙে পড়েছিলেন বলে রঞ্জিত জানান।

অভিনেতার ভাষ্যে, “প্রাণবন্ত আমুদে মানুষটা যেন হারিয়ে গিয়েছিল। আমাকে দেখে হাসলেও ওর চোখ দুটোর মধ্যে ক্লান্তি এবং শূন্যতা বিরাজ করত।”

১৯২৩ সালের ১৪ মে জন্ম নেওয়া মৃণাল সেন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মারা যান।