সেখানে তিনি স্মৃতির ঝাঁপটি খুলেছেন তার প্রয়াত স্বামী, প্রখ্যাত সুরকার আর.ডি. বর্মণকে নিয়ে।
Published : 20 Feb 2025, 09:15 PM
ভারতীয় সুরকার রাহুল দেব বর্মণকে একবার একটি হীরার আংটি উপহার দিয়েছিলেন তার স্ত্রী গায়িকা আশা ভোঁসলে। সেই আংটি পেয়ে সুরকার বলেছিলেন, এসব পাথরের বদলে তিনি ভালো গান আশা করেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, ‘কাপল অব থিংস উইথ আরজে আনমোল অ্যান্ড অমৃতা রাও’ এর পডকাস্টে এর মধ্যে অতিথি ছিলেন বর্ষীয়ান এই শিল্পী। সেখানে তিনি স্মৃতির ঝাঁপি খুলেছেন আর ডি বর্মণকে নিয়ে।
আশার কথায় সুরকার বর্মণ ছিলেন সরল মনের এবং নিরহংকারী স্বভাবের একজন মানুষ।
"তিনি কখনো ভাবতেন না যে তিনি এত বড় সুরকার। সংগীত তার প্রাণ ছিল। টাকার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেননি কখনো, তিনি ছিলেন ভিন্ন।“
আশার ভাষ্য, আর ডি বর্মণের কাছে হীরার মত রত্নের চেয়েও দামি বিষয় ছিল সংগীত।
“আমি তাকে হীরার আংটি দিয়েছিলেম। সেটা দেখে তিনি বললেন "এটা কী? এই পাথেরর পরিবর্তে একটা ভালো গান রেকর্ড কর।"
স্বামীকে ‘পঞ্চম’ নামে ডাকতেন আশা, তেমনি বর্মণও স্ত্রীকে পছন্দের একটি নামে সম্বোধন করতেন।
আশা বলেন, “আমি ‘বাবুয়া’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছিলাম।এর পর থেকে তিনি আমাকে ওই নামে ডাকা শুরু করেন। সময়ের সাথে বাবুয়া সংক্ষিপ্ত হয়ে ‘বাব’ হয়ে যায়। তবে বাইরের মানুষের সামনে তিনি আমাকে আশা বলেই ডাকতেন।“
আর ডি বর্মণের সুরে করা গান মঞ্চে গাইতে গিয়ে কেমন অনুভূতি হয়, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, "স্টুডিওতে যখন একজন সংগীত পরিচালক পাশে থাকেন, তখন গান গাওয়া সহজ হয়ে যায়। কিন্তু মঞ্চে থাকেন না। মঞ্চে দাঁড়ালে আবেগ ঘিরে ধরে। গলা ধরে আসে, কণ্ঠ কাঁপতে থাকে।“
সংগীতই জীবনের ‘একমাত্র আশ্রয়’ বর্ণনা করে, জীবন সায়াহ্নে এসেও সেই সংগীতকেই আঁকড়ে ধরেই বিদায় নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন আশা।
তার কথায়, “একজন মায়ের ইচ্ছে থাকে তার সন্তান যেন ভালো থাকে, একজন দাদির ইচ্ছে থাকে তার নাতি-নাতনিরা যেন সুখে থাকে। আমার শুধু একটাই ইচ্ছা আমি যেন গাইতে গাইতে বিদায় নিতে পারি। তাহলেই আমি সবচেয়ে সুখী হব। আমার আর কিছু শেখার বাকি নেই।পুরো জীবন ধরেই আমি গেয়েছি।“
৯১ বছর বয়সী আশা বলেছেন, তিন বছর বয়স থেকে শাস্ত্রীয় সংগীত শেখা শুরু করেন তিনি। প্লেব্যাক করছেন ৮২ বছর হয়ে গেছে।
বাংলা গানের কর্তা হিসেবে খ্যাত শচীন দেববর্মণের পুত্র রাহুলের জন্ম হয় ১৯৩৯ সালের ২৭ জুন। তার মা মীরা দেববর্মন খ্যাতিমান গীতিকার। রাহুলের ডাকনাম পঞ্চম। বহু জনপ্রিয় হিন্দি, বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গানের সুরকার ও সংগীত পরিচালক আর ডি বর্মণ।
তিনি সংগীত পরিচালনায় ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৬১ সালে ছোটে নবাব সিনেমায়।
পরের তিন দশকের বেশি সময় ধরে তার সুরেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ইয়াদোঁ কি বারাত, গোলমাল, খুবসুরত, সনম তেরি কসম, শোলে, রকির মতো সিনেমার গানগুলো।
এছাড়া রমেশ সিপ্পি পরিচালিত অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, জয়া ভাদুড়ী, হেমা মালিনী অভিনীত সিনেমা ‘শোলে’ মুক্তি পায় ১৯৭৫ সালে। অন্যতম ব্লকবাস্টার হিট হিসেবে বিবেচিত এই সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেন আর ডি বর্মণ।
আট দশকের বেশি সময় ধরে ২০টি ভিন্ন ভাষায় ১১ হাজারেরও বেশি গান গেয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পাওয়া শিল্পী আশা।
বড় বোন লতা মঙ্গেশকরের হাত ধরে সংগীতজীবনে পা রেখেছিলেন আশা। সময়টা ছিল ১৯৪৩ সাল। প্রথম প্লেব্যাক করেন মারাঠি ছবিতে।
এরপর ১৯৪৮ সালে ‘চুনারিয়া’ ছবিতে ‘খাতু আয়া’ গানের মধ্য দিয়ে হিন্দি চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক জগতে তার যাত্রা শুরু তার। তিনি প্রথম এককভাবে হিন্দি গানে কণ্ঠ দেন ১৯৪৯ সালে।
সংগীত পরিচালক রাহুল দেববর্মণকে আশা বিয়ে করেন ১৯৮০ সালে, এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে। ১৪ বছর সংসার করার পর রাহুল মারা যান।
গানের পাশাপাশি রান্না করা এই শিল্পীর নেশা। রান্নার প্রতি ভালোবাসা থেকে ২০ বছর আগে রোস্তোরাঁ ব্যবসায় যুক্ত হন। অনেক দেশেই আশার রেস্তোরাঁর শাখা আছে এখন।