জোরপূর্বক ‘ভিডিও স্বীকারোক্তি’ নেওয়ারও অভিযোগ।
Published : 01 Jun 2024, 10:17 PM
শুটিংয়ের বকেয়া টাকা চাওয়ায় ডেকে নিয়ে প্রডাকশন ম্যানেজারকে মারধর করে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে টেলিভিশন নাটকের এক নির্মাতার বিরুদ্ধে।
নির্মাতা রুবেল আনুশ এর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন মো. দ্বীন ইসলাম দিনার নামের ওই প্রডাকশন ম্যানেজার।
তার অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার মগবাজারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে থেকে ওই নির্মাতার দলবল তাকে জোর করে একটি ক্লাবে নিয়ে গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত মারধর ও নির্যাতন চালায়।
মারধরের সময় দিনারের সঙ্গে ছিলেন আরেক নির্মাতা ইমাম হোসেন শামীম, যিনি সম্প্রতি আনুশের কয়েকটি নাটকে নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন।
শামীম নিজেও হামলার এ ঘটনার ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে গ্লিটজকে বলেন, "এটি খুব পরিকল্পিত হামলা। পরবর্তী শুটিং প্ল্যানের কথা বলে ডেকে নিয়ে এই হামলা চালায়। এটি নিয়ে আমি পুলিশে অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।"
ভুক্তভোগী প্রডাকশন ম্যানেজার দিনারও পুলিশে অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন মিডিয়া প্রডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি মো. আবু জাফর অপু বলেন, মারধরের এ ঘটনা নিয়ে সংগঠনের কাছে লিখিত অভিযোগ এসেছে।
তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নির্মাতা রুবেল আনুশ৷ তিনি গ্লিটজকে বলেন," মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তবে হিসাব নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা জটিলতা হয়েছে।“
দিনার বলেন, গত রোজার ঈদের আগে থেকে এখন পর্যন্ত তিনি পরিচালক রুবেল আনুশের সঙ্গে ছয়টি নাটক নিয়ে কাজ করেছেন। তার কাছে আগের দুটিসহ আটটি নাটকে বকেয়া হিসাবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা পাবেন তিনি।
তার অভিযোগ, এ পাওনা টাকা আদায়ের জন্য মগবাজার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে হাজির হলে রুবেল আনুশের নেতৃত্বে তার দলবল দিনারকে জিম্মি করে একটি ক্লাবে নিয়ে গিয়ে রাত ৮টা থেকে ভোর ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালায়।
লিখিত অভিযোগে দিনার বলেন, মগবাজারে মারধরের সময় তার মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিনিয়ে নেন আনুশ। এমনকি জোরপূর্বক তার কাছ থেকে ভিডিও স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দিনার গ্লিটজকে বলেন, "আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমাকে খুব নির্মম ভাবে মারা হয়েছে। আমার ডান পাশের কানের পর্দা ফেটে গেছে। কানের আঘাতের কারণে মাথায় ব্যাথা বাড়ছে।
”এখন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাচ্ছি চিকিৎসার জন্য। শারীরিক অবস্থা কিছুটা ঠিক হলে আমি বিষয়টি নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করব। তাছাড়া আমার প্রডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশন ও ডিরেক্টরস গিল্ড সাংগঠনিকভাবে শুক্রবার রাতে এক বৈঠকে বসেছিল। সেখানে ৮ মে পর্যন্ত সময় নিয়েছে তারা। কাগজপত্র যাচাইবাছাই ও পাওনা টাকার বিষয়ে সময় নিয়েছেন।"
টেলিভিশন মিডিয়া প্রডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু জাফর অপু গ্লিটজকে বলেন, "শুটিংয়ের পাওনা টাকার লেনদেন নিয়েই এই বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। দুই পক্ষই একে-অপরের কাছে টাকা পাবে বলে দাবি করছে। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।
”এভাবে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়েছে সেটার আইনগতভাবে মোকাবেলা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।”
দিনারের পাশে থেকে এটার বিচার চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
দুই সংগঠনকে নিয়ে বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত এসেছে তা জানতে চাইলে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর বলেন, “এই বিষয়ে আমরা বসার জন্য একটা তারিখ ঠিক করেছি। সেই তারিখে বসে আমরা বিষয়টার সমাধান করব। বিষয়টা যেহেতু সংগঠনের অভ্যন্তরীণ এবং সমাধানও প্রক্রিয়াধীন।”
এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে রুবেল আনুশ গ্লিটজকে বলেন, "প্রডাকশন ম্যানেজার দিনার আমার সঙ্গে সাত বছর ধরে কাজ করছে। সাত বছর আমি কখনও হিসাব নিকাশ ওরকমভাবে নেইনি। তাকে খুব বিশ্বাস করতাম। শেষ কয়েকটি প্রডাকশনে আমার কাছে গড়মিল মনে হয়েছে। লস দেখিয়ে ডিরেক্টর পেমেন্টটা রাখছিলেন না। এসব নিয়েই হিসাবে বসি।
”গড়মিল দেখেই কয়েকজন অ্যাসিটেন্ট ডিরেক্টর নিয়ে বসেছিলাম। এটা নিয়েই একটু ঝামেলা হয়৷ আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে উনি দুই লাখ টাকার ফুটেজ এনে দেবে বলে টাকা নিয়েও সে আর ফুটেজ দেয়নি। ভোর ৫টা পর্যন্ত একসাথে থেকে উনাকে দিয়ে ফুটেজ আনিয়েছি৷ সেখানে মারধরের কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারবে না।"
দিনারের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, "এখন উনি যে টাকা পায় বলে অভিযোগ দিচ্ছে তার থেকে বেশি টাকা আমি তার কাছে পাই। আমরা আমাদের সংগঠনের কাছে জানিয়েছি।
”শুক্রবার রাতে যে সিদ্ধান্ত আসে সেটাতে আমি সঠিক বিচার পাইনি। আমাকে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত আমি কেন কাজ বন্ধ রাখব এটা আমারও প্রশ্ন। সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। এটা যাচাইবাছাই করা হোক।"