মধুবালা অধ্যায় চুকিয়ে সায়রা বানুর ‘কোহিনূর’ হয়েই ছিলেন দিলীপ কুমার

কামিনি কৌশল, মধুবালার সঙ্গে প্রেমপর্ব চুকিয়ে সায়রা বানুকে বিয়ে করেছিলেন দিলীপ কুমার; মাঝে সায়রা বানুর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে আসমা নামে আরেক পাকিস্তানি নারীকে জীবনে জড়ালেও সায়রার জীবনে ‘কোহিনূর’ হয়েই ফিরেছিলেন এই মহানায়ক।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2021, 12:47 PM
Updated : 7 July 2021, 02:22 PM

বলিউডের প্রথম ‘সুপারস্টার’ দিলীপ কুমার ৯৮ বছর বয়সে বুধবার মারা যাওয়ার পর তার জীবনের নানা ঘটনা আবার উঠে আসছে সংবাদ মাধ্যমে।

বলিউডের প্রথম ‘খান’ দিলীপ কুমারের প্রথম প্রেমিকা ছিলেন বলিউডেরই অভিনেত্রী কামিনি কৌশল। ১৯৪৮ সালে একসঙ্গে ‘শহিদ’ চলচ্চিত্রের শুটিং করতে গিয়ে তাদের সম্পর্ক গাঢ় হয়।

তাদের প্রেম নিয়ে বলিউডে জোর চর্চার মধ্যে বিয়ের কথাও প্রায় পাকাপাকি হয়েছিল, কিন্তু কামিনির দাদার আপত্তি পরিণয়ের সঙ্গে প্রণয়ও ভেস্তে যায়। কামিনির বড় বোনের মৃত্যুর পর তার দুই সন্তানের দায়িত্ব নিতে বোনের স্বামীকে বিয়ে করেন কামিনি।

কামিনি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটার পর পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে দিলীপের হৃদয়ে রঙ ছড়ান বলিউডের তারকা অভিনেত্রী মধুবালা।

দিলীপ কুমার-মধুবালা জুটি এখনও দর্শক হৃদয়ে দোলা দেয়। ছবি: টুইটার

১৯৫১ সালে ‘তারানা’ চলচ্চিত্রে জুটি বেঁধে শুটিংয়ের সময় থেকে গণমাধ্যমে তাদের নিয়ে চর্চা হয়েছে। একের পর এক চলচ্চিত্রে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন তারা।

১৯৫৭ সালে বি আর চোপড়ার ‘নয়া দৌড়’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে মধুবালাকে শহরের বাইরে যাওয়ার কথা থাকলেও তার বাবা বাধা দেন। পরিচালকের অনুরোধ মধুবালা বাবাকে বোঝাতে গিয়ে বিতণ্ডা হয়। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের মধ্যে দিলীপ-মধুবালার সম্পর্কে চিড় ধরে।

১৯৬০ সালে শিল্পী কিশোর ‍কুমারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন মধুবালা।

ওই বছর মুক্তি পায় দিলীপ-মধুবালা জুটির সবচেয়ে প্রশংসিত ছবি ‘মুঘল-ই-আজম’। এতে যুবরাজ সেলিমের চরিত্রে দিলীপ কুমারের বিপরীতে আনারকলির চরিত্রে মধুবালার রসায়ন এখনও দর্শকদের মনে অমলিন।

সেই বছরই ‘মুঘল-ই-আজম’ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারে দিলীপ কুমারকে এক পলক দেখতে হাজির হয়েছিলেন তার এক ষোড়শী ভক্ত সায়রা বানু। কিন্তু সেই প্রদর্শনীতে দিলীপ কুমার না আসার স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে দেখার করার সুযোগ মেলেনি তার।

এরই মধ্যে মা অভিনেত্রী নাসিমা বানুর অনুপ্রেরণায় চলচ্চিত্রে নাম লেখালেন সায়রা। নাসিমা বানুই দিলীপ কুমারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন সায়রার। স্বপ্নের নায়কের বিপরীতে অভিনয়ের জন্য সায়রা বানু মুখিয়ে থাকতেন সায়রা। কিন্তু তার অর্ধেক বয়সের কারণে বরাবরেই সায়রার সঙ্গে অভিনয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখানের কথা আত্মজীবনীতে লিখেছেন দিলীপ কুমার।

পরবর্তীতে সায়রার প্রতি নিজের মুগ্ধতা তৈরি হয়েছিল বলে লিখেছেন আত্মজীবনীতে।

ষাটের দশকের শেষভাগে ‘ঝুক গয়া আসমান’ চলচ্চিত্রের সেটে সায়রাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন দিলীপ কুমার; বিনাবাক্য ব্যয়ে তাকে সম্মতি জানান সায়রা।

মা নাসিমা বানুর সম্মতিতে ১৯৬৬ সালের ১১ অক্টোবর গাঁটছড়া বাধেন দিলীপ-সায়রা; তখন দিলীপের বয়স ছিল ৪৪ বছর ও সায়রার ২২।

২২ বছরের সায়রা বানুকে যখন বিয়ে করেন, তখন দিলীপ কুমারের বয়স ছিল ৪৪ বছর। ছবি: টুইটার

দাম্পত্য জীবনের ১৬ বছরের মাথায় একবার তাদের সম্পর্কের সুতোয় টান পড়েছিল। আশির দশকে আসমা নামে এক পাকিস্তানি নারীকে বিয়ে করেছিলেন দিলীপ কুমার। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সেই বিয়ে নিয়ে নিজের ভুল স্বীকারও করেন দিলীপ।

অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে দুই বছরের ব্যবধানে প্রিয়তমা স্ত্রী সায়রার জীবনেই ফিরেছিলেন দিলীপ; আর নিজের জীবনে যে দিলীপ কুমার কী, তা ৫২তম বিয়েবার্ষিকীতে স্বামীকে ‘কোহিনূর’ নামে টুইট করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সায়রা।

সেই সত্তর দশকের মাঝামাঝির দিকে অভিনয় ছেড়ে দিলীপ কুমারের সুখে-দুঃখে ছায়ার মতো পাশে ছিলেন সায়রা; জীবনের শেষ দিনগুলোতেও স্বপ্নের নায়িকা থেকে স্বামী হিসেবে পাওয়া দিলীপ কুমারকে পরম মমতায় আগলে রাখেন তিনি।

সাড়ে পাঁচ দশকের দাম্পত্য জীবনে তাদের কোনো সন্তান নেই। সেই অভাব মেনেছিলেন এ দম্পতি।

বেশ কয়েক বছর আগে দিলীপ কুমার বলেছিলেন, “আমাদের সন্তান থাকলে দাম্পত্য আরও রঙিন হত। তবে যোগ্য উত্তরাধিকারী নেই বলে আমাদের কোনো খেদ নেই।”

তিনি আরও বলেছিলেন, “ইতোমধ্যেই বলিউডে প্রচুর অভিনেতা-অভিনেত্রী নিজেদের প্রতিভায় জায়গা করে নিয়েছেন। তাদেরই আমি আমার যোগ্য উত্তরসূরি বলে মনে করি। তাদের নিষ্ঠা, সাধনা, একাগ্রতা আমায় মুগ্ধ করেছে। এরা আমাদের চোখে নিজেদের সন্তানের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।”