ঠোঁট নিয়ে গানের পর- চুমু নিয়ে নাটকে প্রীতম আহমেদ

গণ জাগরণের দিনগুলোতে দীপ্ত কণ্ঠে যিনি গেয়েছেন গান, দিয়েছেন শ্লোগান, মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে নিজেকে করেছেন আত্মপ্রত্যয়ী। যেকোনও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় বা প্রতিবাদে যিনি গানে ছিলেন সরব। আছেন এখনও। তার নাম প্রীতম আহমেদ। কালের স্রোতে তিনি আজ পরবাসী বটে। কিন্তু দেশে ছুটে আসেন প্রায়ই। করছেন কাজ।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2020, 08:57 AM
Updated : 11 Feb 2020, 08:57 AM

গ্লিটজের সঙ্গে স্বল্প আলাপে তিনি জানালেন তার প্রবাস জীবন, দেশের কাজ এবং কিছু নিজের মতামত নিয়ে। 

“অনেক স্ট্রাগল করে আজকের অবস্থানে এসেছি। কাজ করেছি। কিন্তু কারও কাছে গিয়ে বসে থাকিনি। এই নিয়েই আমি প্রীতম আহমেদ।” - বলে কথা শুরু করলেন ২০০৫ সালে ‘বালিকা’ গান দিয়ে সাড়া জাগানো গায়ক প্রীতম আহমেদ।

প্রথমেই কথা হলো তার বর্তমান কাজের অবস্থা নিয়ে।

এবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে দেখা যাবে তাকে প্রযোজক এবং অভিনেতা হিসেবে নিজের নাটকে। করছেন ফটোশুট, করছেন অ্যলবাম। সব মিলিয়ে জমজমাট ব্যাপার গায়ক প্রীতমের। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের নাটকে তাকে দেখা যাবে নুসরাত ইমরোজ তিশার বিপরীতে। এবং গল্পেও আছে চমক। ভালোবাসায় বাধা এবং বাধা জয়ের পরেও হেরে যাওয়ার গল্পে এবার মাতাবেন দর্শকদের তিনি। বোনাস হিসেবে থাকছে তার নিজের একধিক আনকোরা গান।

প্রীতম বলেন, “প্রযোজক বলেই অভিনয় করছি তা নয়। গল্পে একটি চরিত্র আছে যেটাতে আমি অভিনয় করতে পারি- এমন ভেবেই অভিনয় করেছি। ”

মূলত গানকে কেন্দ্র করেই এই নাটক। ঢাকায় এসে এই কাজটি সম্পূর্ণভাবে শেষ করেছেন।

ফটোশুট করেছেন অর্চিতা স্পর্শিয়ার প্রোডাকশন হাউজ ‘কচ্ছপ’য়ের সঙ্গে। কাজ করছেন কলকাতাতেও।

এত এত কাজ করার পরেও কোনও জায়গায় খবরের শিরোনামে নেই তিনি।

কারণ প্রীতম বলেন, “কাজটাই আসল। খবরের শিরোনামে আসা নয়। কাজ করলে সেটাই থেকে যাবে বেলা শেষে।”

এ কারণেই প্রায় পনেরো বছর ধরে নিজের মতো করে ‘স্বাধীন’ভাবে তিনি কাজ করছেন বলে আত্মতৃপ্তিতে আছেন এই গায়ক।

আত্মতৃপ্তির আরেক কারণ বিভিন্ন কন্টেন্টও। কারণ তিনি কখনই কোনও কারণে নিজের কোনও গান বা নাটক বা গানের কথা কোনও কোম্পানির কাছে বিক্রি করেননি। প্রতিটা গানের ‘রয়্যালিটি’ তার নিজের।

তিনি মনে করেন, একজন শিল্পীর জন্য সবচাইতে প্রয়োজন নিজের সম্পদ নিজের কাছে রাখা। আর শিল্পীর কাছে নিজের সৃষ্টির থেকে বড় আর কোনও সম্পদ নেই। এই নিয়ে তিনি অন্যতম শিল্পী যিনি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। স্বোচ্চার থেকেছেন নিজের দাবী নিয়ে।

প্রীতম বলেন, “আমার গান যদি আমার থাকে- সেটা নিয়ে আর যাই হোক অন্য কেউ ব্যাবসা করতে পারবেন না। বরং মেধাস্বত্বের কারণে শিল্পী হিসেবে আমিই উপকৃত হবো। আমাদের শিল্পীরা একটি শক্ত অবস্থানে এলে আশা করা যায় ’দুঃস্থ শিল্পী’ এই তকমা থেকে আমরা বের হতে পারবো।”

কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন ‘ভোট ফর ঠোট’ গানটির কথা। নায়লা নাঈম হয়েছিলেন গানের মিউজিক ভিডিওর মডেল। কিন্তু ২০১৪ সালের গানটির কথা এবং উপস্থাপনা দুইটির জন্যই বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।

গানটি বর্তমানে একটি ‘এনজিও’ সচেতনতামূলক কাজে ব্যবহার করবে বলে গায়কের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

একই প্রসঙ্গ টেনে প্রীতম বলেন, “যদি গানটি কোনও কোম্পানিকে বিক্রি করতাম তাহলে পরবর্তীকালে এমন কোনও উদ্যোগই আমি নিতে পারতাম না। কেনও আমার সৃষ্টি আরেকজনের হাতে তুলে দিয়ে আমি জিম্মি থাকবো?”

শতভাগ মালিকানা থাকার পর কেউ পার্শ্বিয়ভাবে ব্যবসা করতে পারলে তাতে কোনও আপত্তি নেই গায়কের।

তিনি মনে করেন, অন্তত দশজন শিল্পী যদি একই ভাবে সম্মত হন যে তাদের গান তাদেরই থাকবে- কিন্তু কোনও প্রতিষ্ঠান চাইলে আংশিক ভাবে ব্যবসা করতে পারে। তাহলে শিল্পী সারাজীবন লাভবান হতে পারে। এবং এটাই এখন দরকার।

গানের পাশাপাশি নাটকে বিনিয়োগ এবং অভিনয় করা এই গায়ক মনে করছেন চ্যানেলের নাটক তাও দর্শক দেখেন। কিন্তু অ্যাপস ভিত্তিক নাটক কতটুকু জনপ্রিয়তা পাবে তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। বরং টিকটক দিয়ে বেশি মানুষের নজরকাড়া যাচ্ছে বলে তিনি মনে করছেন।

তিনিও এই চলমান ‘ট্রেন্ড’ নিয়েই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

প্রবাসে থাকা এই শিল্পী দেশে প্রায় এসেই এমন করে বিভিন্ন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তাকে দেখা গেছে একটা সময়ে প্রতিবাদী সমাবেশ এবং গানেও।

তবে রাজনীতি তিনি করতে চান না।

প্রীতম বলেন, “আমার এক ভাই রাজনীতির কারণে গত হয়েছেন। আমি এখন একা।  কোনও রাজনৈতিক লেবাসে নিজেকে জড়াতে চাই না। আর রাজনীতি করলে তো একটা দলের জন্যই কথা বলতে হবে। তাহলে আমি তো প্রতিবাদ করতে পারবো না। বরং আমার কণ্ঠ আছে, শব্দ আছে। নিজের মতো করে নিজের দায়বদ্ধতা থেকে আমি গান গাই। এটাই শিল্পী হিসেবে আমার আত্মতুষ্টির জায়গা। ”

প্রীতম আহমেদ ভালোবাসার মাসে এসে ভালোবাসার পাশাপাশি এভাবেই নিজের ভালোলাগাও ছড়িয়ে দিলেন।

এবং শেষ করলেন এই বলে, “শিল্পীরা চাইলে সব পারে। বদলাতে পারে সকল অচলায়তন। শুধু দরকার, জাতীয় স্বার্থে একই মনোভাব পোষণ করা।”