‘দর্শকের সঙ্গে আলফা’র রসায়নটা একদম ভিন্নরকম’

‘গেরিলা’র পর দীর্ঘবিরতি ভেঙে বড়পর্দায় নতুন চলচ্চিত্র ‘আলফা’ নিয়ে এলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। বাণিজ্যিক তকমা না থাকায় সিনেমা হলে স্থায়িত্ব পায়নি এর প্রদর্শনী। কিন্তু রুচিশীল দর্শকের কাছ থেকে ছবিটি নিয়ে প্রশংসা পাওয়া গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনায় এসেছে ‘আলফা’। এমন অবস্থায় বিকল্প প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছেন প্রখ্যাত এ নির্মাতা..

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2019, 12:21 PM
Updated : 3 July 2019, 12:21 PM

সিনেমা হলের বাইরে প্রথম পা ফেললো ‘আলফা’...

আমার ছবিটা দেখানো হলো চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম দিয়েই আমরা শুরু করছি বিকল্প প্রদর্শনীর ব্যবস্থা। মূল সিনেমা হলে চলেছে অল্প সময়। যেহেতু চলচ্চিত্রটিতে বাণিজ্যিক উপাদান কম, সেহেতু এটাকে আমরা অন্যভাবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেছি।

কেমন প্রতিক্রিয়া পেলেন?

চট্টগ্রামে আমি দেখেছি, দর্শকের মাঝে সিনেমাটা আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। যারা চলচ্চিত্র সংসদকর্মী, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের চর্চাটা করে, তারাও ছবিটির ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে। সমালোচনা আছে, তবে ছবিটি যে ভিন্ন আঙ্গিকের নতুন ছবি এটা সবার মুখেই শোনা গেছে। এটা আমাদের যাপিত জীবনের কথা বলছে শৈল্পিকভাবে এ কথাও তারা বলছে। বিশেষ করে তরুণরা ব্যাপকভাবে উপস্থিত হয়েছিলো চট্টগ্রামে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ লেখালেখি হচ্ছে ‘আলফা’ নিয়ে..

নানা রকম লেখালেখি হচ্ছে ছবিটা নিয়ে। একটা লেখা চোখে পড়লো আজ (সোমবার), সুযোগ থাকলে দেখাতাম। দারুণ লিখেছে ছেলেটা। অন্য কারো ছবি নিয়ে এতো লেখালেখি দেখিনি। প্রত্যেকেই যার যার মতো করে ছবিটা দেখছে। আমি এটাই চেয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, আমার ছবিতে কোন গল্প নেই। দর্শকরা গল্পটা বানিয়ে নেবেন। আমার যে অভিজ্ঞতা, আমি যে সময়ের মধ্যে হেঁটে এসেছি, আমি হয়তো পঞ্চাশ বছর ধরে চলছি, আপনারা কেউ হয়তো বিশ বছর ধরে দেখছেন, আপনারা আপনাদের জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে দেখবেন, অনেক মিলে যায়। সুতরাং দর্শকের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া হতে পারে, রসায়নটা একদম ভিন্নরকম।

চট্টগ্রামের পর কোথায় যাবে ‘আলফা’?

ক্রমান্বয়ে কুমিল্লা, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, গাইবান্ধা, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জসহ মোটামুটি এখন পর্যন্ত বিশ থেকে পঁচিশটা জেলা পর্যন্ত ভাবা হচ্ছে। যদি সব জায়গায় যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়, আমরা এসব জায়গায় দেখাবো। সামান্য কিছু দর্শনীর বিনিময়ে, কেননা প্রদর্শনীর খরচটা উঠিয়ে আনতে তো হবে।

কি প্রক্রিয়ায় আয়োজিত হচ্ছে এ প্রদর্শনী?

লোকালি যারা চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে, গ্রাম থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত আছে, গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে যারা আছে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যেসব কর্মীরা আছে, তাদের সঙ্গে তো আমার একটা গভীর যোগাযোগ আছে, বন্ধুত্ব আছে। তাদের সঙ্গে আমি দীর্ঘসময় একসঙ্গে ওঠাবসা করছি। তারা ছবিটা চাচ্ছিলো। আমি বললাম, ‘চাইলে তোমরা ইনডিভিজুয়ালি না দেখে একসঙ্গে বড় স্ক্রীনে দেখো’। সেই সুযোগটা হয়তো যেখানে অডিটোরিয়াম আছে সেখানে করা সম্ভব। একটা প্রস্তাব আছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা শো হবে, শহরেও হবে। একটা আগ্রহ আছে, কার না থাকে সেটা হলো- লালন মঞ্চে ছবিটা দেখাতে চাই, তিন চার হাজার মানুষের সামনে, দেখতে চাই কি ধরণের প্রতিক্রিয়া হয় সাধারণ মানুষের। 

এ ধরণের ছবির কদর তো করছে না সিনেমা হলগুলো। বিকল্প প্রদর্শণীর সহজ কোন রাস্তা কি পেলেন?

আমার হাত ধরেই তো শুরু হয়েছিলো একাত্তরের যীশু দিয়ে-১৯৯৩ সালে। তার আগে তো বাংলাদেশের কোন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিকল্পভাবে চালায়নি দর্শনীর বিনিময়ে।  এখনো সহজ কোন রাস্তা পাইনি। সরকারের একটা ভূমিকা থাকতে পারে, শিল্পকলা একাডেমি যদি মনে করে, তাহলে যেটা করতে পারে, তাহলে তারা তাদের অডিটোরিয়ামগুলো আমাদের অফার করতে পারে, বড় বড় মেকারদের, যে তোমাদের ছবিগুলো আমাদের এখানে চালাতে পারো। এছাড়া তো আর কোন জায়গা নেই।

সিনেমা নিয়ে আপনিও কি যাচ্ছেন দেশভ্রমণে?

আমি হয়তো সব জায়গায় যেতে পারবো না। চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। কিন্তু সব জায়গায় হয়তো সম্ভব হবে না। গেলে ভালো হয়, তরুণরা উৎসাহিত হয়। আমার সাথে কথা বলে, গল্প করতে আসে। আমারও ভালো লাগে, কিন্তু আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাঁটাচলায় কিছুটা বিধি-নিষেধ তৈরি হয়েছে। শরীরে যখন ব্যথা থাকে, মনে যতো আনন্দ হোক, উৎফুল্ল হওয়া যায় না।