যে কারণে অদ্বিতীয়া জয়া

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানের জন্মদিন ১ জুলাই। দিনটি উপলক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছায় ভাসছেন এ অভিনেত্রী। তবে, এমন বিশেষ দিনেও শুটিংয়েই ব্যস্ত তিনি। আপন অভিনয়শৈলীতে দুই দশক ধরে মাতিয়ে রেখেছেন দর্শক মন। বৈচিত্রপূর্ণ চরিত্র এবং অভিনয়গুণে দুই বাংলাতেই নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যমাত্রায়। স্বীকৃতির ঝুলিতে ইতিমধ্যেই জমেছে একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ভারতের ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক কিছু। চল্লিশের কোঠা পেরিয়েও গ্ল্যামারে ও অভিনয়ে নিজেকে করেছেন অদ্বিতীয়া। কি তার সেই জাদু? যে নির্মাতাদের হাত ধরে তার অন্যতম সেরা কাজগুলো দর্শকের কাছে পৌঁছেছে; গ্লিটজের জিজ্ঞাসা ছিলো তাদের কাছেই..

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2019, 03:14 PM
Updated : 1 July 2019, 03:33 PM

মেথড অ্যক্টিংয়ে তার পারঙ্গমতা রীতিমতো বিস্ময়কর

নাসির উদ্দিন ইউসুফ

জয়া এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান শিল্পী। সবচেয়ে সেলিব্রেটেড মানুষ ভারত ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে। সুতরাং তার একটা বড় ভূমিকা আছে দুই বাংলায়। অভিনয়ের একটা ভিন্ন স্বাদ তৈরি করতে পেরেছে জয়া। তার অভিনয়ের যে জায়গাটা মনে হয়েছে-অনেক বেশি অর্গানিক, অর্গানিক কাজ করে সে। ‘গেরিলা’ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অনেক বেশি অনুসন্ধিৎসু। অনেক চিন্তা ভাবনা করে চরিত্র নিয়ে। অনেক গভীরে থাকে, পৃথিবীর সকল কিছু ভুলে গিয়ে অভিনয়টা করতে পারে। এটা সবার হয়না। এ জন্যই সে এতটুকু এসেছে। হয়তো গেরিলার মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু হয়েছে, কিন্তু গেরিলাকে পিছে ফেলে সে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। আমি মনে করি, সে ‘ওয়ান অব দ্য মোস্ট সাকসেফুল এক্টর অব বাংলা সিনেমা’। মিশ্র রকমের অভিনয় করেছে, মিশ্র চরিত্রে অভিনয় করেছে এবং মেথড অ্যক্টিংয়ে তার পারঙ্গমতা রীতিমতো বিস্ময়কর ব্যাপার। অত্যন্ত মনোযোগি শিল্পী আমি বলতে পারি।

এরকম একজন আর্টিস্টের অভাবটা যে কেউ অনুভব করবে

নুরুল আলম আতিক

আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতা সে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা থাকলো। আরও ভালো কাজ তার কাছ থেকে প্রত্যাশা। তার যে যত্নশীল চেষ্টা, অভিনয়ের জন্য যে প্রেম সেটা জারি থাকুক। প্রথমত কাজের বেলায় সে অনেক যত্নশীল, সেনসিবল। ধীরে ধীরে সে নিজেকে যে জায়গায় নিয়ে গেছে সেটা ঈর্ষণীয়, যে কারো জন্য এটা শিক্ষনীয়। তার সঙ্গে আমার কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলবো, সে খুবই হেল্পফুল-কোআর্টিস্ট বলি, ইউনিট মেম্বারদের প্রতি বলি। এটা আমাদের এখানে ইন্ডাস্ট্রিটা সে জায়গায় নেই বলে এটা হয়তো খুব প্রয়োজন ছিলো বা এখনও ফুরায়নাই। পরবর্তিতে ও যখন আরও বড় প্রোডাকশান করতে যায় অন্যরা নিশ্চয়ই তার এই যত্নশীল চেহারা দেখে অবাক হয়ে থাকবে, তার প্রফেশনাল চেহারা স্পষ্ট হয়ে দেখা দেবে। যখন আমরা একসাথে কাজ করি, তখন ওই সময়ের সংকট অতিক্রমের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার একটা ব্যাপার ছিলো। ঝাঁপিয়ে পড়ার এই উদ্যোগ নেয়ার দিক থেকে সে প্রথম সারিতে থাকবে। এরকম একজন আর্টিস্টের অভাবটা যে কেউ অনুভব করবে।

একজন প্রফেশনাল এবং সেনসেবল অভিনেত্রী

গিয়াস উদ্দিন সেলিম

জয়ার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি জয়া একজন প্রফেশনাল এবং সেনসেবল অভিনেত্রী। যতদূর মনে পড়ছে আমি ‘সংশয়’ নামে একটি সিরিয়াল করেছিলাম। ওখানে ও তন্দ্রা নামে একটা চরিত্র করেছিলো। একটা কান্নার সিকোয়েন্সে ও গ্লিসারিন ছাড়াই কেঁদেছিলো। ও আসলে গ্লিসারিন ছাড়া কাঁদতে পারতো। এটা আমাকে ভীষণ অবাক করেছে। এমনিতে মানুষ হিসেবেও জয়া অনেক ভালো। আমি তার সাফল্য কামনা করি।

মনে হয় সে আমার চরিত্র, যাকে আমি লিখেছি

মেজবাউর রহমান সুমন

আমি খুব বেশিদিন টেলিভিশনের জন্য কাজ করিনি। কিন্তু চার বছরে যে কাজগুলো প্রশংসিত হয়েছে তার সবগুলোতেই জয়া ছিলো। নতুন নির্মাতা হিসেবে তখন একজন প্রতিষ্ঠিত আর্টিস্টের সঙ্গে মিশে যাওয়া আমার জন্য কঠিন ছিলো। কিন্তু জয়ার ক্ষেত্রে তা হয়নি। অতি সহজেই মিশে যাওয়ার ব্যাপারটা থাকে তার মধ্যে। একজন পারফর্মার হিসেবে এটা তার অনেক বড় পাওয়ার। এখন ওর সঙ্গে আড্ডা হয়, কথা হয় প্রায়ই। নতুন কোন চরিত্রের ক্ষেত্রে জয়া একদম মিশে যায়, শুটে গিয়ে শুধু অ্যাক্টিং করবে এ জায়গাটায় ও থাকে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক কম্ফোর্ট পাই যখন আমার সেটে জয়া থাকে। আমার কখনো মনে হয়না ও পারফর্মার। ও যখন আমার সেটে থাকে আমার মনে হয় সে আমার চরিত্র, যাকে আমি লিখেছি, মনে হয় আমার পাশের মানুষ, পাশের বন্ধুটা। আমার মনে হয় সব জায়গাতেই জয়া এরকম। যেখানে কাজ করতে যায়, ওর পরিবেশটা ও নিজের মতো করে তৈরি করে নেয়। এটা জয়ার সবচেয়ে পাওয়ারফুল জায়গা। যে জায়গা থেকে জয়া থেকে জয়া কাজ শুরু করেছিলো সে জায়গা থেকে জয়া উত্তোরত্তর সাফল্য পাচ্ছে। আমরা তার কাজে মুগ্ধ হই। আরও হতে চাই। কেননা জয়া আরও ভালো কিছু করতে সক্ষম। তার সেই জীবনীশক্তি আছে।

কোন স্টারিজম নয়, তার পা মাটিতে

মাহমুদ দিদার

এটা আসলে খুব দুরূহ, তাকে বর্ণনা করা। উনি যখন সংলাপ দেন, চারপাশ এমনিতেই সাইলেন্ট হয়ে যায়। ‘শি গট লস্ট ইন্টু দ্য ক্যারেক্টার’- আপনার এমনিই দেখতে ইচ্ছে করবে। কোন গল্পের ‘এম্পিরিকাল স্টাডি’(বাস্তব অনুশীলন) ছাড়া তিনি কাজ করেন না। আমরা ‘চেরী ফুলের নামে নাম’ নামে একটা ফিকশন করি। চেরী থাকতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেই ভ্রাম্যমান বালিকার গল্প। সেই চেরীকে ধরার জন্য তিনি একাধিক দিন উদ্যানে গেছেন, হেঁটেছেন, শূণ্যে তাকিয়েছেন, কোলাহল দেখেছেন, মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসেছেন। মিষ্টি খেয়েছেন। ‘বিউটি সার্কাস’-এর অফ স্ক্রিন প্রিপারেশনও দারুণ। সার্কাসে গিয়েছেন, সেটা একেবারে স্ক্রিপ্ট পর্ব থেকে। থেকেছেন, মিশেছেন, দারুণ শিক্ষকের মতো, কর্মীর মতো, স্থির, ধৈর্য্যের শিক্ষাও তার কাছ থেকে পেতে পারি আমরা। কোন স্টারিজম নয়। তার পা মাটিতে। আপনি যা খাবেন, তিনি তাইই খাবেন, এমনও হয়েছে খাবার নাই- কাঁচা টমেটো খেয়েও শট দিয়েছেন, বেঘোর জ্বর নিয়েও শুট করেছেন- তাও বৃষ্টির দৃশ্য! ‘শি ইজ সো ডিটেল, মাচ কম্প্রিহেন্সিভ’। তিনি সেরা আমার চোখে এবং তাই সময়কে তিনি জিতে নিয়েছেন।