চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তার এর আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছেন অনামিকা। পেশায় আমেরিকার আইডাহো রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেমার শিক্ষক হলেও নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্তার পাশাপাশি তাকে একজন সাংস্কৃতিক সমালোচক এবং সমাজ গবেষকও বলা হয়। ‘থার্ড ব্রেস্ট’ চলচ্চিত্রটি তার সে পরিচয়কেই বহন করছে এমনটাই মনে করেন তিনি।
গ্লিটজকে অনামিকা বলেন, “বাংলাদেশে এটাই আমার প্রথম আসা। আমার ছবিটা দেখানোর সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ। এ ছবিটা খুবই অল্প বাজেটের ছবি। ছবিটাকে আমি কোন ফেস্টিভালের জন্য তৈরি করিনি। কোন রিলিজের কথাও ভাবিনি। এটা একটা প্রবন্ধ সিনেমা। তার সঙ্গে আত্মজৈবনিক উপাদান আছে। সমাজআত্মজীবনীও বলা যেতে পারে।
চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে কিছুটা বিকল্প পথ বেছে নিতে পছন্দ করি। আমি চাই, চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি দর্শকের সঙ্গে মতবিনিময়ও হোক। তাতে ভাবনাকে যেমন উসকে দেয়া যায়, একটা কথোপকথনের দ্বারও উন্মোচিত হয়। একটা ছবিতেই তো সব বলে দেয়া যায় না। যেহেতু এ ছবিটা এমন একটা ট্যাবু যে-সম্পর্কে মানুষ কথা বলতে চান না।”
এর আগে অনামিকা নির্মাণ করেছেন, ‘রেড’, ‘১৭০০ কেলভিন’, ‘ টেক কেয়ার,’ ‘টেইলর মেইড’, ‘ব্ল্যাক রোজ’ নামের বেশকিছু চলচ্চিত্র।
নতুন ছবি ‘দ্য থার্ড ব্রেস্ট’ সম্পর্কে অনামিকা বললেন, “আমি ট্যাবু নিয়ে কাজ করি। এ ছবিটির বিষয় যৌনতা এবং যৌন শিক্ষা নিয়ে ভারতীয় মানসিকতার ট্যাবু। ভারতে যৌন শিক্ষার পরিবেশ নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও এখনও সে পরিবেশ তৈরির যথেষ্ট উদ্যোগ নেই। ভারতীয়রা এখনও যৌন শিক্ষার জন্য প্রস্তুত নন। যদিও সেখানে কিছু লিবারেল ফর্মস আছে-যেমন খাজুরাহ এবং কামসূত্র লেখা হয়েছিলো। সেই দেশের মানুষই এতটা ট্যাবুগ্রস্থ হয়ে পড়লেন কেন, যেসব কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্থই হচ্ছি, বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। সেইসব বিবেচনায় এটা একটা চেষ্টা যে, আমরা ট্যাবুগুলোকে জয় করতে পারি কিনা।”
বাংলাদেশে তার এই সিনেযাত্রায় বেশকিছু কর্মশালা, বক্তৃতা ও ‘থার্ড ব্রেস্ট’ প্রদর্শনীর আয়োজন রয়েছে। রাজধানীতে শুক্রবার বিস্তার ও বাতিঘর এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় অনামিকার ‘আমার সিনেমা আমার সাহিত্য’ শীর্ষক একটি আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিন। অনুষ্ঠানে থার্ড ব্রেস্ট চলচ্চিত্রটির সূত্রে, যৌনতা, যৌনশিক্ষা, সামাজিক নানা ট্যাবুসহ, ভারতীয় চলচ্চিত্রের নানা বিষয়ে তার পর্যবেক্ষন তুলে ধরেন অনামিকা।
নির্মাতা চরিত্রের পাশাপাশি, তিনি একজন এক্টিভিস্টও, সবমিলিয়েই অনামিকা একটি প্রথাবিরোধী নাম। তার পূর্বপুরুষ বাংলাদেশি। শুধু ভারতীয় সংকট নিয়েই নয়, তার ভাবনায় বাংলাদেশও আছে। বাংলাদেশ নিয়ে তার ভাবনা বিভিন্ন লেখায় যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি তার যে ছবিটা ‘থার্ড ব্রেস্ট’-এর শেষ গানটাও বাংলাদেশের হাসন রাজার। ফলে জন্মসূত্রে ভারতীয় হলেও তিনি বাংলাদেশ থেকে বিযুক্ত নন।”
এর আগে গত ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামে সিনে ক্লাব বিস্তারের আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ‘ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বাস্তবতায় চলচ্চিত্রের শব্দ ও দৃশ্যকল্প’শীর্ষক একটি বিশেষ বক্তৃতায় অংশ নেন। ১১ এপ্রিল বিস্তারের আয়োজনে প্রদর্শিত হয় ‘থার্ড ব্রেস্ট’ চলচ্চিত্রটি।
এছাড়াও তিনি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব উইমেন-এও পৃথক দু’টি বক্তৃতায় অংশ নেন। শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীতে মুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে ‘লাতিন আমেরিকার বিদ্রোহী সিনেমা: পাঠ ও মূল্যায়ন’ শীর্ষক একটি কর্মশালায় অংশ নেবেন।
এছাড়াও আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নিকেতনে দর্শনীর বিনিময়ে ‘থার্ড ব্রেস্ট’ চলচ্চিত্রটির একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।