বনানীতে চিরনিদ্রায় শাহনাজ রহমত উল্লাহ

আত্মীয়-স্বজন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ভক্তদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বনানীতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী শাহনাজ রহমত উল্লাহ।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2019, 11:18 AM
Updated : 24 March 2019, 11:18 AM

৬৭ বছর বয়সী এ শিল্পী শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় বারিধারায় নিজের বাসায় শেষঃনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

রোববার জোহরের পর বারিধারার পার্ক রোড জামে মসজিদে জানাজা শেষে বেলা আড়াইটায় বনানীর সম্মিলিত সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

জনপ্রিয় এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দাফনের সময় বনানীর ওই কবরস্থানে তথ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মীর আকরাম উদ্দিন আহম্মদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রী নিজে আসতে পারেননি। সে কারণে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে পাঠিয়েছেন।”

দাফনের সময় অন্যদের মধ্যে চিত্রনায়ক ও বিএনপির সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জল, বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবিরসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে পার্ক মসজিদে জানাজায় চিত্রনায়ক উজ্জল ছাড়াও সংগীত শিল্পী খুরশিদ আলম, ফুয়াদ নাসের বাবু ও গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়েজীসহ, আত্মীয়-স্বজন ও ভক্ত-অনুরাগীরা অংশ নেন। 

জানাজার আগের শিল্পীর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবুল বাশার রহমত উল্লাহ স্ত্রীর আত্মার শান্তির জন্য সবার কাছে দোয়া চান।

শাহনাজ রহমত উল্লাহর মেয়ে নাহিদ রহমত উল্লাহ লন্ডনে এবং ছেলে এ কে এম সায়েফ রহমত উল্লাহ কানাডায় থাকেন।

জানাজা শেষে শাহনাজ রহমত উল্লাহর গান সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে খুরশিদ আলম বলেন, “এর আগে অনেক শিল্পীর গান হারিয়ে গেছে। সে কারণে উনার গানগুলো সংরক্ষণ করা উচিত। সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাচ্ছি।”

‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে, এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’সহ বহু জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শাহনাজ রহমত উল্লাহ।

গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়েজী সাংবাদিকদের বলেন, “যত দিন মানুষ বাংলা গান শুনবে ততদিন তার গান বেঁচে থাকবে।”

বিএনপির সাংস্কৃতিক সম্পাদক চিত্রনায়ক উজ্জল বলেন, “তিনি আমাদের দলকে ধারণ করতেন। আমাদের তরফ থেকে উনার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। উনার ‘প্রথম বাংলাদেশ’ গানটির আমাদের দলীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহার করছি। উনার মতো শিল্পীর শূন্যতা পূরণ হবার নয়।”

আগামী শুক্রবার পার্ক রোড জামে মসজিদে শাহনাজ রহমত উল্লাহর জন্য দোয়া মাহফিল হবে বলে তার স্বামী জানিয়েছেন।

শিল্পীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাতেই তার বাসায় ছুটে গিয়েছিলেন গীতিকার কবির বকুল, কণ্ঠশিল্পী তপন চৌধুরী, ফুয়াদ নাসের বাবু, দিনাত জাহান মুন্নি, শফিক তুহিন। রোবার সকালে তাকে শেষবারের মতো দেখতে যান শিল্পী কনকচাঁপা, সামিনা চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

শাহনাজ রহমত উল্লাহর জন্ম ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি, ঢাকায়। তার ভাই প্রয়াত আনোয়ার পারভেজ ছিলেন প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। আরেক ভাই জাফর ইকবাল ছিলেন জনপ্রিয় নায়ক।

একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী শাহনাজ রহমত উল্লাহর গানের শুরু স্কুল জীবন থেকেই। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন। এরপর বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। টেলিভিশনে গাইতে শুরু করেন ১৯৬৪ সাল থেকে। সত্তরের দশকে অনেক উর্দু গীত ও গজল গেয়েছেন শাহনাজ।

২০০৫ সালে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমত উল্লাহর গাওয়া চারটি গান স্থান পায়।

৫০ বছরের সঙ্গীত জীবনে শাহনাজ রহমত উল্লাহর চারটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। সঙ্গীতে অবদানের জন্য একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।

বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গানের পাশাপাশি তার গাওয়া ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘সাগরের তীর থেকে’, ‘খোলা জানালা’, ‘পারি না ভুলে যেতে’সহ অনেক গানই এখনও ঘুরে ফেরে বাঙালির মুখে মুখে।