দৃষ্টির সীমানা ছাড়িয়ে গেলেন শাহনাজ রহমত উল্লাহ

প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী শাহনাজ রহমত উল্লাহ মারা গেছেন।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2019, 08:34 PM
Updated : 29 Dec 2019, 03:26 PM

‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে, এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’সহ বহু জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় বারিধারায় নিজের বাসায় শাহনাজ রহমত উল্লাহ শেষঃনিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে তার একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জানিয়েছেন। ৬৭ বছর বয়সী এই শিল্পী বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন।

তার ননদ নাহার আবেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাতে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন ভাবী। আমাদের বড় ভাই ডা. এনায়েত উল্লাহ বাসায় এসে দেখেন উনি মারা গেছেন।”

শাহনাজ রহমত উল্লাহর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবুল বাশার রহমত উল্লাহ এখন ব্যবসা করেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে নাহিদ রহমত উল্লাহ থাকেন লন্ডনে, আর ছেলে এ কে এম সায়েফ রহমত উল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে কানাডায় বসবাস করছেন।

নাহার আবেদ জানান, রোববার জোহরের পর বারিধারার পার্ক মসজিদে শিল্পীর জানাজা হবে। পরে বনানীর সামরিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

শাহনাজ রহমত উল্লাহর মৃত্যুর খবর শুনে তার বাসায় ছুটে যান গীতিকার কবির বকুল, কণ্ঠশিল্পী তপন চৌধুরী, ফুয়াদ নাসের বাবু, দিনাত জাহান মুন্নি, শফিক তুহিনসহ অনেকেই।

কবির বকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উনি সুস্থই ছিলেন। ছিলেন গানের সঙ্গেই।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে তার গান গাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি।

কবির বকুল বলেন, “২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে আমার স্ত্রীর তার গানগুলো গাইবার কথা ছিল। তাই তাকে নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে গানগুলো তুলে দিয়েছিলেন। সুস্থ-স্বাভাবিকই ছিলেন।”

শাহনাজ রহমত উল্লাহর জন্ম ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি, ঢাকায়। তার বাবা এম ফজলুল হক, মা আসিয়া হক। মায়ের কাছেই শাহনাজের গানের হাতেখড়ি। পরিবারের সবার কাছে তিনি ছিলেন আদরের শাহীন। ছোটবেলা থেকেই শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।

 

তার ভাই প্রয়াত আনোয়ার পারভেজ ছিলেন প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। আরেক ভাই জাফর ইকবাল ছিলেন জনপ্রিয় নায়ক।

একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী শাহনাজ রহমত উল্লাহর গানের শুরু স্কুল জীবন থেকেই। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন। এরপর বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। টেলিভিশনে গাইতে শুরু করেন ১৯৬৪ সাল থেকে। সত্তরের দশকে অনেক উর্দু গীত ও গজল গেয়েছেন শাহনাজ।

বরেণ্য এ শিল্পী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নেন ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদের কাছে। এরপর ওস্তাদ মনির হোসেন, গজল সম্রাট মেহেদী হাসান, শহীদ আলতাফ মাহমুদের কাছেও গানে তালিম নেন তিনি।

২০০৫ সালে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমত উল্লাহর গাওয়া চারটি গান স্থান পায়। এর মধ্যে আনোয়ার পারভেজের সুর করা দুটি গান, খান আতাউর রহমান ও আবদুল লতিফের সুরে দুটি গান রয়েছে।

৫০ বছরের সঙ্গীত জীবনে শাহনাজ রহমত উল্লাহর চারটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। সঙ্গীতে অবদানের জন্য একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।

বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গানের পাশাপাশি তার গাওয়া ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘সাগরের তীর থেকে’, ‘খোলা জানালা’, ‘পারি না ভুলে যেতে’সহ অনেক গানই এখনও ঘুরে ফেরে বাঙালির মুখে মুখে।

কিছু দিন গান গাওয়া থেকে বিরত ছিলেন শাহনাজ রহমত উল্লাহ। ধর্ম-কর্মে মনোনিবেশ করেছিলেন তিনি।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “ওমরাহ করে আসার পরদিন থেকেই আর গান করতে ইচ্ছা করেনি। তখন আমি নামাজ পড়া শুরু করেছিলাম। এখন নামাজ পড়েই সময় কাটছে।”