অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে: নোবেল

আদিল হোসেন নোবেল; মডেলিং জগতের এ অগ্রগণ্য নাম। নব্বইয়ের দশকে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি; তরুণ প্রজন্মের মডেলদের কাছে ‘আদর্শ’ হয়ে উঠেছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বললেন নানা প্রসঙ্গে।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2018, 01:59 PM
Updated : 5 Nov 2018, 02:30 PM

দীর্ঘদিন কোনো কাজে নেই আপনি…

নোবেল: অফিসের কারণে অনেকদিন ধরেই কিছু করছি না। বলা যায়, আমি এখন সব কিছুর বাইরে। দু’চারটা কাজ ছিল, যেগুলো ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও করতে পারিনি।

বিরতি ভেঙে মডেলিংয়ে কবে দেখা যাবে আপনাকে?

নোবেল: সামনে একটা বিজ্ঞাপন করব। বিস্তারিত এখনই বলছি না। একটু সিক্রেটলি রেডি হচ্ছে। নভেম্বরের শেষের দিকে শুটিং করব। কাজটা ভালোভাবে করার জন্য খুব চেষ্টা করছি, আশা করছি সুন্দর কিছু হবে।

মডেলিংয়ে তারকাখ্যাতি পেয়েছেন আপনি; কিন্তু নিয়মিত কাজ করেন না। ভক্তদের বঞ্চিত করছেন বলে মনে হয়?

নোবেল: আমি বলব, এটা অনেকটা অন্যায়। অন্যায় হয়ে গেলেও কিছু করার থাকে না। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অন্যায়টা হয়ে যায়। যখন মনে হয়, ‘এনাফ ইজ এনাফ’ তখন আবার ফিরে আসি। নিয়মিত একটার পর একটা কাজ না করে ভালো কিছু নিয়ে এলে অন্যায়টা ঘুচে যাবে।

রাস্তাঘাটে দেখা হলে এখনও অনেকে বলে, ‘আপনি অনেকদিন কোনো কাজ করেন না কেন?’ আমি বলি, ঠিক আছে সামনে এমন কিছু করব যেটি অনেক সুন্দর হবে।

অনেক তারকা এই প্রতিকূল পরিবেশে স্টারডম খোয়ানোর আশংকায় কাজে অনিয়মিত হয়ে উঠছে; কাজ ছেড়েও দিয়েছে অনেকে। আপনার মধ্যে এমন আশংকা আছে?

নোবেল: আমার মধ্যে এরকম আশংকা নেই। কারণ আমি ইন্ডাস্ট্রির কমন কেউ না। সব কাজের মধ্যে আমি কখনোই ছিলাম না। আমার সঙ্গে যারা কাজ করেন তারা জানেন যে, আমাকে দিয়ে এই কাজগুলো ভালো হয়। চ্যানেলগুলো থেকেও প্রতিবছর বলে দেওয়া হয়, এই কাজটা আপনি ছাড়া কেউ করবেন না। আমার কাজ এতো কম যে মার্কেটের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে সেটা দেখাতে পারব না।

কিছুদিন আগে ‘দ্য হিরো’ শিরোনামে একটি কাজ করেছি। একদম সাধারণ গল্প। আমার মনে হয় না এরকম নাটক হয়েছে। যে এফোর্ট প্রডিউসার-ডিরেক্টররা দিয়েছে সেটা নিয়ে আমি বেশ খুশি।

নব্বইয়ের দশক থেকে মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন আপনি। এখনকার দর্শকদের রুচিবোধের কী ধরনের পরিবর্তন দেখছেন?

নোবেল: দর্শকদের রুচিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ফলে কাজও পরিবর্তন এসেছে। আমাদের আগের কাজগুলো এক রকম ছিল আর এখনকার কাজগুলো একটু আলাদা হয়। আবার আগের কাজগুলো যারা বেশি পছন্দ করতেন তারা আবার বলে, ‘নাহ ভাই আগের কাজগুলোই ভালো ছিল।’

গোছানো কাজ করতে পারলে বেশিরভাগ দর্শকদের খুশি করা যায়। সবশেষ আমি আর মৌ রবির যে কাজটা করলাম, দর্শকরা সেটি খুব পছন্দ করেছেন।

হাতেগোনা দুয়েকটা কাজ ছাড়া মডেলিংয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ নেই। উদাহরণ খুঁজতে গেলে ঘুরেফিরে আমাদের সেই অতীতের কাছেই হাত পাততে হয়। আমাদের বর্তমান ‘সমৃদ্ধ’ হয়ে উঠছে না কেন?

নোবেল: যারা মডেলিং করেন তাদের দোষ দেব না। ডিরেকশন লেভেল থেকে চরিত্রকে ডেভেলপ করার মানসিকতা যদি না আসে তাহলে মডেলদের কেউ মনে রাখবে না। কাজের ধারা এখন পরিবর্তন হয়েছে। এর পরেও কিছু ক্যারেক্টার ডেভেলপ করা উচিত। কিছু পারফর্মারকে স্টাবলিশ করা উচিত।…প্রোডাকশন হাউজ সেগুলো চিন্তা না করে কাজটা কিভাবে শেষ করা যাবে সেটাই চিন্তা করে।

এখনকার বিজ্ঞাপনে সামাজিক বার্তা কতটুকু উঠে আসছে?

নোবেল: বার্তাটা হয়তো তারা চিন্তা করে। কিন্তু অভিনয়ে হিউম্যান বডির ব্যবহারটা ঠিকঠাক মতো করে না। আমার মনে হয় যখন তারা ক্যারেক্টার প্লেস করে তখন একসঙ্গে তিন চারটা অপশন ধরেই চিন্তা করে। ওকে না পেলে ওকে নেবো এই ধরনের আরকি।

কিন্তু কোনো ক্যারেক্টারকে নিয়ে যখন চিন্তা করব তখন ইন্ডিভিজ্যুয়াল পারফর্মারকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। অন্যথায় জিনিসটা দাঁড়াবে না। বিজ্ঞাপনটি ক্লায়েন্ট কিভাবে নেবে সেটাই বেশি দেখা হয়। ফলে পারফর্মারকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ থাকে না।

এই সময়ে এসে মডেলিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার পরিবেশ আছে?

নোবেল: মোটেই পারছে না। মডেলিং তো বটেই, অভিনয়কেও পেশা হিসেবে নিতে পারছে না। আমি প্রতিবছরই ঈদের একটা-দুইটা নাটক করি। তখন দেখি, নিয়মিত যারা কাজ করে তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে।

মাঝে মাঝে আমাকে বলে, ‘ভাইয়া, আমাকে আপনার অফিসে একটা কাজ দেন। এসব আর ভালো লাগে না।’ অথচ দেশে এতগুলো টিভি চ্যানেল। আর্টিস্টদের যেখানে কাজের মধ্যে ডুবে থাকার কথা সেখানে অভিনয়শিল্পীরা এখন হতাশায় ডুবে আছে।

কয়টা লোক এখন বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল দেখে? সেদিন ফেইসবুকে একটা নাটকের ক্লিপ দেখলাম। নূর ভাই আর সুবর্ণা আপার। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হওয়ার আগে সুবর্ণা আপা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। নূর ভাই অবাক হয়ে যান, কিভাবে একজন মাস্তানের প্রতি সুবর্ণা আপনার মুগ্ধতা তৈরি হয়। নাটকে দু’জনের কেমিস্ট্রি দেখে খুব কষ্ট নিয়ে আমার স্ত্রী বলল, এই জিনিসগুলো মনে হয় আর বাংলাদেশে দেখতেই পাব না।

কাজের মধ্যে কিছু ধারা পরিবর্তন ভালো কিন্তু কিছু মৌলিক ধারা যদি মুছেই ফেলেন তাহলে ঠিক না।

এখান থেকে উত্তরণের জন্য কী ধরনের পরামর্শ দেবেন?

নোবেল: মানুষ কী চায়, সেটা আগে বুঝতে হবে। আমি কোনো অ্যাড করার আগে চিন্তা করি অডিয়েন্স কারা, কোন সেগমেন্টকে রিচ করা হবে। সব কিছুতে কমেডি করে ফেলা ঠিক না। কমেডি আলটিমেট গোল হতে পারে না। আমরা এখন দেখি, পুরো নাটকেই হাসাহাসি, হৈ-হুল্লোড়, চড়-থাপ্পড়ে ভর্তি। অনেকে বলে, মানুষ এভাবেই কথা বলে। আমরা মনে হয় দুয়েকটা নাটকে হয়তো এমনটা হতে পারে কিন্তু সবগুলোই হবে কেন?

আমাকে নিয়ে যারা নাটক বানায় তারা চিন্তা করে আমি ওই ধরনের কাজের অফার করলে কাজ করব না। এরকমভাবে সবাইকেই চিন্তা করা উচিত। দর্শকদের জন্য চিন্তা করা উচিত।

বাসায় আমার আম্মা যদি জি বাংলা না দেখে বাংলা নাটক দেখেন তাহলে আমার ভালো লাগবে।

বলছি না শতভাগ আমাদের নাটকের মান নেমে গেছে। ন্যূনতম যে দশভাগের মতো ভালো  নাটক নির্মাণ হচ্ছে সেটার পরিমাণ বাড়াতে হবে। আমরা বলছি, শিক্ষার হার বাড়ছে, জিডিপি বাড়ছে-এতো উন্নতি করছে। সেই উন্নতির সঙ্গে যদি তুলনা করেন তাহলে টিভিনাটক নিয়েও চিন্তা করতে হবে। শুধু ডিরেক্টরদের নিয়ে কথা বললেও হবে না, চ্যানেলগুলোকে আরও উদার হতে হবে।