এই নাচের অনুষ্ঠানে শিল্পীরা প্রয়াত এই পরিচালকের সিনেমার ১০টি নারী কেন্দ্রীয় চরিত্রকে তুলে ধরবেন তাদের নাচের মাধ্যমে।
Published : 31 Aug 2024, 02:27 PM
মানুষের ‘ভেতরের’ জগতের গল্প পর্দায় তুলে আনা নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষকে নাচের মাধ্যমে স্মরণ করবেন কলকাতার একদল নৃত্যশিল্পী।
শনিবার ঋতুপর্ণর জন্মবার্ষিকীতে তাকে উৎসর্গ করে রূপান্তরকামী নৃত্যশিল্পী মেঘ সায়ন্তনী এবং তার দল বরাবরের মত একটি বিশেষ আয়োজন রেখেছে।
নাচের পরিবেশনায় শিল্পীরা প্রয়াত এই পরিচালকের সিনেমার ১০টি নারী কেন্দ্রীয় চরিত্রকে তুলে ধরবেন তাদের নাচের মাধ্যমে।
নৃত্যশিল্পী মেঘ সায়ন্তনী তার আয়োজন নিয়ে বলেন, “রূপান্তরকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্যে ঋতুপর্ণ ঘোষ এক শক্তিশালী কণ্ঠ ছিলেন। তাই তাকে উৎসর্গ করে আমরা প্রতি বছর এই অনুষ্ঠান করি। আমার লক্ষ্য, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের শিল্পসত্তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। গত বছর আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’ অবলম্বনে একটি আলেখ্য করেছিলাম। এ বার ঋতুপর্ণ ঘোষের সিনেমার বিভিন্ন নারী চরিত্র উঠে আসবে আমাদের পরিবেশনায়।”
এছাড়া কলকাতার আর জি কাণ্ডও নিয়েও প্রতিবাদ তুলে ধরবেন শিল্পীরা।
সায়ন্তনী বলেন, “প্রতিবাদ কখনও থেমে থাকে না। ধারণা বদলায়, সময় বদলায়। কিন্তু প্রতিবাদ এগিয়ে চলে। এই ভেবেই অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছি, ‘নূতন প্রাণ দাও’।”
নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে সায়ন্তনী বলেন, “যে রাজ্যে বা যে দেশে নারীদের সুরক্ষা নেই, সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে তো নানা ঘটনা ঘটেই থাকে। এমনও হয়, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানালেও পুলিশ তা নিতে চায় না।”
সায়ন্তনী পেশায় আইনজীবীও। তিনি বলেন, “আমি আইনজীবী হিসেবেই দেখেছি বহু মানুষের অভিযোগই নেওয়া হয়নি। রূপান্তরকামীদেরই আজও বহু মানুষ মেনে নিতে পারেনি।”
একটা লিঙ্গবৈষম্যহীন আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেছেন, “নারীদের জন্য যেমন শ্লীলতাহানির বিরুদ্ধে আইন রয়েছে। তেমনই পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্যও হওয়া উচিত।”
১৯টির মধ্যে ১২টি সিনেমাই জিতেছিল জাতীয় পুরস্কার
২০১৩ সালের ৩০ মে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। জীবদ্দাশায় যে ১৯টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন ঋতুপর্ণ, তার মধ্যে ১২টিই বিভিন্ন শাখায় ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতে।
সেরা পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারের পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন বেশ কয়েকবার। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও রয়েছে তার।
ঋতুপর্ণ নিজের নির্মিত সব চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য নিজেই লিখেছেন ঋতুপর্ণ।
‘হীরের আংটি’র মধ্য দিয়ে ১৯৯৪ সালে চলচ্চিত্র জগতে আসেন ঋতুপর্ণ। একই বছর ‘উনিশে এপ্রিল’ নির্মাণ করেন তিনি, যা তাকে এনে দেয় ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
তার চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- দহন, নৌকাডুবি, তিতলী, সব চরিত্র কাল্পনিক, শুভ মহরত, অন্তরমহল, বাড়িওয়ালি, আবহমান, উৎসব, খেলা, দোসর, সানগ্লাস ইত্যাদি। তার নির্মিত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র চিত্রাঙ্গদা।
২০০৭ সালে ভারতের সেরা ইংরেজি চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী ঋতুপর্ণের একমাত্র ইংরেজি চলচ্চিত্র ‘লাস্ট লিয়ার’ এ অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন।
এছাড়া কলকাতার ইটিভি বাংলায় সম্প্রচারিত ‘এবং ঋতুপর্ণ’ ও স্টার জলসায় সম্প্রচারিত ‘ঘোষ অ্যান্ড কোম্পানি’ অনুষ্ঠানে উপস্থিতিও দর্শকদের কাছে প্রিয় করে তোলে এই চলচ্চিত্র নির্মাতাকে।
২০১০ সালে একটি জনমত জরিপে ‘দশকের সেরা বাংলা চলচ্চিত্রকার’ নির্বাচিত হন ঋতুপর্ণ। নিজেও তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন এই নির্মাতা।