‘ম্যাটেরিয়াল গার্ল’ ম্যাডোনা: ৬৪ বসন্ত পেরিয়ে

ম্যাডোনা- যে নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিতর্ক, মানবিকতা, যৌনতা, বাণিজ্য, ফ্যাশন এবং আরও অনেক কিছু।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2022, 05:00 PM
Updated : 16 August 2022, 05:00 PM

খোদ ভ্যাটিকান যাকে নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হয়েছে, তিনি নিশ্চয়ই সাধারণ কেউ হতে পারেন না। নামের যে অর্থ তার, তা যেন পুরো বিপরীত এক মানে তৈরি করেছেন। বিশ্ব তাকে পপ সম্রাজ্ঞী হিসেবেই চেনে।

তিনি ম্যাডোনা, ম্যাটেরিয়াল গার্ল, যার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিতর্ক, মানবিকতা, যৌনতা, বাণিজ্য, ফ্যাশন এবং আরও অনেক কিছু। এমনকি তাকে নিয়ে পড়ালেখার জন্য ‘ম্যাডোনা স্টাডিজ’ নামে একটি সাব-ডিসিপ্লিনও রয়েছে।

একাধারে গায়িকা, গীতিকার, ফ্যাশন আইকন ও অভিনয়শিল্পী ম্যাডোনা লুইজ চিকন জীবনের ৬৪ বছর পূর্ণ করলেন মঙ্গলবার। একইসঙ্গে ছেলে রোকো রিচির ২২তম জন্মদিনও উদযাপন করলেন, যার জন্ম ২০০০ সালের ১১ অগাস্ট।

মঙ্গলবার ডেইলি মেইল ও দ্য সান পত্রিকা জানায়, নিজের এবং ছেলের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে ইতালিতে বিলাসবহুল এক উৎসব আয়োজন করেন ‘কুইন অব পপ’। সিসিলির পালাৎসো কাস্তেলুচিওতে আয়োজিত এই উৎসবে পরিবার পরিজন ছাড়াও বিপুল সংখ্যক বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী ও তারকাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সূত্রের বরাতে দ্য সান লিখেছে, প্রতিবছরই দারুণ ঘটা করে জন্মদিন উদযাপন করেন ম্যাডোনা। তবে এবারের উদযাপনটি হতে যাচ্ছে বিশেষ কিছু। অবশ্য ৭০ কোটি পাউন্ডের সম্পদের মালিকের জন্য এটাই বরং স্বাভাবিক।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলো দারুণ কাটছে ম্যাডোনার। সঙ্গীত তারকা বিয়ন্সের ‘ব্রেক মাই সোল’র একটি রিমিক্সে অংশ নেন তিনি। এছাড়া টিকটক র‌্যাপার সসি সান্তানার সঙ্গে নিজের ১৯৮৪ সালের হিট গান ‘ম্যাটেরিয়াল গার্ল’র একটি রিমিক্সও প্রকাশ করেছেন।

গত সপ্তাহে তিনি নিউ ইয়র্ক সিটিতে চিক ব্যান্ডের নাইল রজারের সঙ্গে একটি অ্যালবাম উদ্বোধন পার্টিতেও অংশ নেন। সেখানে তার রিমিক্স অ্যালবাম ‘ফাইনালি এনাফ লাভ’ উদ্বোধন উদযাপন করা হয়।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন টক শো ‘টুনাইট স্টারিং জিমি কিমেল’ এ ম্যাডোনা জানান, তিনি কীভাবে তার রেকর্ড গড়া ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমি আমার ক্যাসেট টেপগুলো ক্লাবের ডিজেদের কাছে নিয়ে যেতাম এবং তাদের সেগুলো বারবার বাজাতে উৎসাহিত করতাম।”

রোলিং স্টোনের সমালোচকের মতে, ম্যাডোনার কণ্ঠস্বর ছিল আশির দশকের সবচেয়ে মাদকতাময় কণ্ঠস্বরগুলোর একটি। ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে ম্যাডোনাকে এমটিভি, ‎‎বিলবোর্ড‎‎ এবং মিউজিশিয়ান ম্যাগাজিন ‘দশকের শিল্পী’ হিসাবে আখ্যা দেয়।‎

ম্যাডোনার বেড়ে ওঠা

১৯৫৮ সালের ১৬ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্রে মিশিগানের বে সিটিতে ক্যাথলিক পরিবারে জন্ম ম্যাডোনার। ছয় ভাই বোনের মধ্যে মায়ের নামের মতো তার নাম হওয়ায় সবাই তাকে ‘লিটল ননি’ বলে ডাকতেন।

১৯৬৩ সালে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা মারা গেলে ১৯৬৬ সালে গৃহপরিচারিকাকে বিয়ে করেন তার বাবা, যেখানে রয়েছে তার আরও দুই সৎ ভাই বোন। এই বিয়ে কোনভাবেই মেনে নিতে না পারা ছোট্ট ম্যাডোনা অনেকভাবে বিরক্ত করেছেন বাবাকে। যার ফলে চিড় ধরে তাদের সম্পর্কে।

ছোটবেলা থেকে ম্যাডোনা ভাল ছাত্রী হিসেবে যেমন ছিলেন নন্দিত, তেমন তার বেপরোয়া চলাফেরায় ছিলেন নিন্দিত। ছেলেদের দৃষ্টি আকর্ষণে স্কার্ট টেনে পরতেন।

বাবা তাকে শাস্ত্রীয় পিয়ানো শেখাতে চাইলেও তিনি ব্যালে নাচ শেখাতে রাজি করিয়েছিলেন। ব্যালে নাচের শিক্ষক তাকে নৃত্যে ক্যারিয়ার গড়ায় অনুপ্রাণিত করেছিলেন। পরে তিনি হাইস্কুল শেষ করে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নাচের বৃত্তি লাভ করেন এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় পড়াশোনা করেন।

কলেজ ড্রপআউট ম্যাডোনা বলেছিলেন, ৩৫ ডলার নিয়ে প্রথম নিউ ইয়র্কে পাড়ি জমানো, প্রথম বিমানযাত্রা, প্রথম ট্যাক্সি ক্যাবে চড়া - সবকিছুই ছিল তার জন্য খুবই সাহসী উদ্যোগ।

ডানকিন’স ডোনাট এবং আধুনিক নাচের দলে কাজের সময় তিনি অর্থকষ্টে ভুগেছিলেন। আলভিন আইলি আমেরিকান ডান্স থিয়েটারে ক্লাস এবং পার্ল ল্যাং ডান্স থিয়েটারে কাজ করেন। বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী মার্থা গ্রাহামের কাছেও তালিম নেন তিনি।

সঙ্গীত ক্যারিয়ার

বেশ কিছুদিন ব্যাকআপ ডান্সার হিসেবে কাজ করা ম্যাডোনার সঙ্গীত ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৭৯ সালে। সঙ্গীতশিল্পী প্রেমিক ড্যান গিলরয়ের সঙ্গে ‘ডেট’ করার সময়ে প্যারিসে গান গাওয়ার জন্য সফলভাবে অডিশন দেন।

পরবর্তীতে ম্যাডোনা ও গিলরয় তাদের প্রথম ব্যান্ড ‘ব্রেকফাস্ট ক্লাব’ গঠন করেন। ম্যাডোনা গান গাওয়ার পাশাপাশি ড্রামস ও গিটার বাজাতেন।

১৯৮০ সালে মিশিগানে ম্যাডোনা ও তার তৎকালীন প্রেমিক স্টিফেন ব্রাই ‘ব্রেকফাস্ট ক্লাব’ ছেড়ে ‘এমি এন্ড এমিজ’ ব্যান্ড গড়েন। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে দুজন একসঙ্গে গান লিখতে শুরু করেন এবং ওই বছর তারা একটি চার গানের ডেমো টেপ রেকর্ড করেন। এর পরপরই ম্যাডোনা নিজেকে একক শিল্পী হিসেবে প্রচারের সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৮১ সালে গোথাম রেকর্ডস পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ক্যামিলি বারবোন ম্যাডোনার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন এবং ৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করেন।

ওই সময় ‘ডান্সটেরিয়া’ নাইট ক্লাবের ডিজে মার্ক কামিন্সের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে।

ওয়ার্নার ব্রাদার্স রেকর্ডসের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সায়ার রেকর্ডসের প্রধান সেইমর স্টেইনের সঙ্গে ম্যাডোনার একটি বৈঠকের আয়োজন করেন কামিন্স। মোট তিনটি একক অ্যালবামের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন ম্যাডোনা।

কামিন্সের প্রযোজনায় ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া তার প্রথম সিংগেল ‘এভরিডে’ ডান্সটেরিয়াতে প্রথমবারের মত সরাসরি পরিবেশন করেন ম্যাডোনা। ৮৩ সালে মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় সিংগেল ‘বার্নিং আপ’।

সিংগেলের সাফল্যের পর ‘ম্যাডোনা’ অ্যালবাম তৈরির কাজ শুরু করেন এই শিল্পী। ৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই অ্যালবামটি বিলবোর্ড ২০০-এ আট নম্বর জায়গাটি দখল করে এবং ‘বর্ডারলাইন’ ও ‘লাকিস্টার’ গান দুটি সিংগেলসের সেরা ১০ এ জায়গা করে নেয়।

১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় স্টুডিও অ্যালবাম ‘লাইক আ ভার্জিন’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক তারকায় পরিনত হন ম্যাডোনা। অ্যালবামের ‘লাইক আ ভার্জিন’ গানটি তার প্রথম সিংগেল, যা টানা ছয় সপ্তাহ ‘হট ১০০’ চার্টে শীর্ষে ছিল।

এটা যে কোনো নারী সঙ্গীত শিল্পীর প্রথম অ্যালবাম যা যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লাখ এবং বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা (আরআইএএ) এই অ্যালবামকে ডায়মন্ড সার্টিফিকেশন দেয়।

১৯৮৫ সালে ‘ভিশন কোয়েস্ট’-এর দুটি ট্র্যাক ‘ক্রেজি ফর ইউ’, ‘গ্যাম্বলার’ এবং ‘ডেসপারেটলি সিকিং সুজ্যান’- এ ‘ইনটু দ্য গ্রুভ’ ভক্তকূলকে মোহিত করেছিল। একই বছর তিনি উপহার দেন আরও দুটি হিট একক ‘অ্যানজেল’ এবং ‘ড্রেস ইউ আপ’।

‎তার তৃতীয় অ্যালবাম ‘ট্রু ব্লু’ মুক্তি পায় ৮৬ সালে যা তিনি তৎকালীন স্বামী শন পেনকে উৎসর্গ করেছিলেন। এই অ্যালবামের পাঁচটি এককের মধ্যে তিনটিই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে ছিল এক নম্বর গান।

বিখ্যাত গান ‘লা ইসলা বনিতা’ ছিল এই অ্যালবামের। ২৮টির বেশি দেশে চার্টে শীর্ষ এই অ্যালবামের আড়াই কোটি কপি বিক্রি হয়। ১৯৮৭ সালের শেষ দিকে প্রকাশ পায় ‘ইউ ক্যান ড্যান্স’-এর রিমিক্স ভার্সন।

পেপসির বিজ্ঞাপনে ‘লাইক আ প্রেয়ার’ গানটি প্রকাশ করেন ১৯৮৯ সালে যা তার চতুর্থ স্টুডিও অ্যালবামের ট্র্যাক ছিল। ‎ ‎‎’লাইক আ প্রেয়ার’‎‎ অ্যালবামটি সহ-রচনা ও সহ-প্রযোজনা করেন তিনি।

‘ব্লন্ড অ্যামবিশন ওয়ার্ল্ড ট্যুর’-এর লাইভ রেকর্ড তাকে এনে দেয় গ্র্যামি পুরস্কার।

একই বছর দুটি নতুন গানের সঙ্গে আসে তার প্রথম সেরা কম্পাইলেশন অ্যালবাম ‘ইমাকুলেশন কালেকশন’। এটি ইতিহাসের একক শিল্পীর সর্বাধিক বিক্রি হওয়া সংকলন যা বিশ্বব্যাপী তিন কোটির বেশি কপি বিক্রি হয়।

১৯৯২-এ প্রকাশিত হয় তার পঞ্চম স্টুডিও অ্যালবাম ‘এরোটিকা’ এবং কফি টেবিল বই ‘সেক্স’ যা ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলেও কয়েকদিনের মধ্যে ১৫ লাখ কপি বিক্রি হয়। তবে ‘এরোটিকা’ তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।

১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় তার ষষ্ঠ অ্যালবাম ‘বেডটাইম স্টোরিস’ যার মাধ্যমে শ্রোতাদের ধারণা পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন ম্যাডোনা। এই অ্যালবাম বিলবোর্ড ২০০ এ জায়গা করে নিয়েছিল।

১৯৯৪ সালে ব্যালাড ‘আই উইল রিমেমবার’ দিয়ে চরিত্রের কোমল দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করেন পপ সম্রাজ্ঞী। পরের বছর মুক্তি পায় ব্যালাদগুলোর একটি সংগ্রহ।

সপ্তম স্টুডিও অ্যালবাম ‘রে অফ লাইট’ মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে। ‘রে অফ লাইট’ চারটি গ্র্যামি পুরস্কার অর্জন করে। এই অ্যালবামের ‘ফ্রোজেন’ গানটি এখনও ব্লকবাস্টার হিটের তালিকায় রয়েছে।

২০০০ সালে ফরাসি প্রযোজক মিরওয়াইস আহমাদজাই-এর সঙ্গে বাজারে আসে ম্যাডোনার অষ্টম স্টুডিও অ্যালবাম ‘মিউজিক’, যা প্রথম ১০ দিনে ৪০ লাখ কপি বিক্রি হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সমাজের ওপর তার পর্যবেক্ষণ নিয়ে ‘আমেরিকান লাইফ’ শিরোনামের নবম স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ পায় ২০০৩ সালে। দশম স্টুডিও অ্যালবাম ‘কনফেশনস অন আ ডান্স ফ্লোর’ শ্রোতাদের উপহার দেন ২০০৫ সালে।

২০০৮, ২০০৯, ২০১২ এবং ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘হার্ড ক্যান্ডি’, ‘গ্রেটেস্ট হিট সেলিব্রেশন’, ‘এমডিএনএ’ ও ‘রেবেল হার্ট’ অ্যালবামগুলো। ‘সেলিব্রেশন’ অ্যালবাম মুক্তির পর ওয়ার্নারদের সঙ্গে চুক্তি থেকে বের হয়ে আসেন ম্যাডোনা।

কনসার্ট ক্যারিয়ার

১৯৮৫ সালে তিনি তার প্রথম কনসার্ট ট্যুর ‘ভার্জিন ট্যুর’ করেছিলেন দ্য বিস্টি বয়েজের সঙ্গে। দুই বছর পর করেন ‘হুস দ্যাট গার্ল’ ওয়ার্ল্ড ট্যুর কনসার্ট।

১৯৯০ সালে তিনি ‘ব্লন্ড অ্যামবিশন ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ করেন যাকে রোলিং স্টোন ব্যাপকভাবে কোরিওগ্রাফ করা, যৌন উত্তেজক উদ্দীপণা হিসেবে অভিহিত করে এবং ৯০-এর সেরা ট্যুর হিসেবে আখ্যা দেয়।

১৯৯৩ সালে চলে আসে তার চতুর্থ কনসার্ট ট্যুর ‘গার্লি শো’। পুয়ের্তো রিকোর মঞ্চে পায়ের নিচে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ঘষে শ্রোতাদের ক্ষোভের জন্ম দেন।

২০০১ সালে পপ সম্রাজ্ঞী ফিরে আসেন ‘ড্রোনড ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ নিয়ে। বছরের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী কনসার্ট ট্যুর ছিল সেটি যা ৪৭টি শো থেকে সাড়ে সাত কোটি ডলার আয় করে।

‎২০০২ সালে জেমস বন্ডের ‘ডাই অ্যানাদার ডে’ চলচিত্রের জন্য শিরোনামের গানটি করেন, যা সেরা মূল গানের ক্যাটাগরিতে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জেতে।

২০০৪ সালে তিনি ‘রি-ইনভেনশন ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ শুরু করেন যা আয় করেছিল ১২ কোটি ডলার এবং তার ডকুমেন্টারি ‘আই অ্যাম গোইং টু টেল ইউ আ সিক্রেট’ আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।

২০০৫ সালে সুনামির ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য জন লেলনের ‘ইমাজিন’ গানটি পরিবেশন এবং লাইভ-এইট বেনিফিট কনসার্টে পারফর্ম করেন।

২০০৬ সালে শুরু হয় তার ‘কনফেশন ট্যুর’ যার বিশ্বব্যাপী দর্শক ছিল ১২ লাখ, আয় ছিল ১৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের বেশি এবং বিশ্বব্যাপী ২০ কোটির বেশি কপি বিক্রি হয়।

২০০৭ সালে ‘লন্ডন লাইভ আর্থ কনসার্টে’ প্রকাশ ও পরিবেশন করেন ‘হেই ইউ’ গানটি। এর বাইরে করেছেন আরও অনেক ট্যুর যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘দ্য এমডিএনএ ট্যুর’, ‘দ্য রেবেল ট্যুর’ ইত্যাদি।

অভিনয় ক্যারিয়ার

আশির দশকেই অভিনয় ক্যারিয়ারেও নাম লেখান ম্যাডোনা। কম বাজেটের ইন্ডি চলচিত্র ‘আ সারটেইন স্যাকরিফাইস’ থেকে যাত্রা শুরু। ৮২ সালে টেলিভিশনে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে।

১৯৮৪ সালে ‘আমেরিকান ব্যান্ডস্ট্যান্ড’ এবং ‘টপ অফ দ্য পপস’-এ অভিনয় করেন। ১৯৮৫ সালে ভিশন কোয়েস্ট-এ একটি ক্যামিও চরিত্রে এবং ‘ডেস্পারেটলি সিকিং সুজ্যান’ এর মধ্যদিয়ে মূলধারায় কাজ শুরু হয়। ৮৬ সালের সিনেমা ‘সাংহাই সারপ্রাইজ’-এর জন্য তিনি প্রথম ‘ওয়ার্স্ট অ্যাকট্রেস’-এর গোল্ডেন রাস্পবেরি পুরস্কার পান।

১৯৮৮ সালে ব্রডওয়েতে আত্মপ্রকাশ করেন ম্যাডোনা।

‎১৯৯০ সালে বক্স অফিস হিট ‘ডিক ট্রেসি’-তে ওয়ারেন বিটির সঙ্গে অভিনয় করে নজর কাড়েন। ১৯৯১ সালে মুক্তি পায় তার সর্বোচ্চ উপার্জনকারী প্রামান্যচিত্র ‘ট্রুথ অর ডেয়ার’ এবং ৯২–এ আসে ‘আ লিগ অফ দেয়ার ওন’ যা ছিল বক্স অফিস হিট।

১৯৯২ সালেই তিনি গঠন করেন বিনোদন সংস্থা ম্যাভেরিক, যার মধ্যে আছে ম্যাভেরিক রেকর্ডস, ম্যাভেরিক ফিল্মস এবং সংশ্লিষ্ট সঙ্গীত প্রকাশনা, টেলিভিশন সম্প্রচার, বই প্রকাশনা এবং পণ্যদ্রব্য বিভাগ।

টাইম ওয়ার্নারের সঙ্গের এই চুক্তিটি ছিল একটি যৌথ উদ্যোগ যা থেকে ম্যাডোনা পেয়েছিলেন অগ্রিম ছয় কোটি ডলার। সঙ্গীত থেকে ২০ শতাংশ রয়্যালটি পান তিনি যা ওই সময়ের তারকা মাইকেল জ্যাকসনের রয়্যালটির সমান ছিল।

‎১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় ‘বডি অফ এভিডেন্স’ যা সমালোচকদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়। এছাড়াও একাধিক চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসা ও সমালোচনা দুটোই অর্জন করেন এই শিল্পী।

২০০৮ সালে প্রযোজনায় নামেন এবং ‘আই অ্যাম বিকজ উই আর’ তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। একই বছর পরিচালনা করেন প্রথম চলচ্চিত্র।

রেকর্ড এবং প্রাপ্তি

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নেওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য রেকর্ড ভেঙেছেন ম্যাডোনা। তিনি ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের মিউজিক হল অফ ফেমের পাঁচ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের একজন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১০ সালে যুক্ত হন ‘রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেম’-এ।

রোলিং স্টোন তাকে সর্বকালের সেরা ১০০ শিল্পীর বিশেষ তালিকায় ৩৬-তম স্থান দেয়। বিলবোর্ড ২০১৬ সালে তাকে বর্ষসেরা নারীর তকমা দেয়।

বিতর্ক

যৌনতা নিয়ে সবসময়ে খোলামেলা থাকার কারনে এই গায়িকা বরাবরই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তার ‘লাইক আ প্রেয়ার’ এর পারফরমেন্স ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে অভিযোগ ওঠায় এর বিজ্ঞাপন এবং স্পন্সরশিপ বাতিল করা হয়।

৯০-এর ‘জাস্টিফাই মাই লাভ’ গানটির মিউজিক ভিডিওতে যৌনতার বাড়াবাড়ির অভিযোগ ছিলো। এমটিভি মিউজিক ভিডিও অ্যাওয়ার্ডসে ব্রিটনি স্পিয়ার্স এনবগ ক্রিস্টিনা আগুইলোরাকে চুমু খেয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেন।

ম্যাডনার ‘লাইভ টু টেল’ পরিবেশনার সময় ধর্মীয় সামগ্রী ব্যবহার করায় রুশ অর্থোডক্স চার্চ এবং ফেডারেশন অফ জিউইশ কমিউনিটি রাশিয়ার সদস্যরা তাকে বয়কট করে।

আমেরিকান লাইফ অ্যালবামের মূল গানটিতে সহিংসতা এবং যুদ্ধবিরোধী চিত্রের কারণে বিতর্কের জন্ম দেয় যা ২০০৩-এ ইরাক আক্রমণ শুরুর পরে প্রত্যাহার হয়।

সম্প্রতি এই পপ তারকা অনাবৃত স্তনের ছবি পোস্ট করেন তার ইনস্টাগ্রাম ভেরিফাইড একাউন্টে। নীতিমালা লঙ্ঘন হওয়ায় ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষ তা মুছে ফেলায় বেজায় চটে যান এই তারকা এবং ক্ষোভ ঝাড়েন। সম্প্রতি এটাও ঘোষণা করেন যে তিনি কোনো পুরুষ প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করবেন না।

ফ্যাশন

ফ্যাশনিস্তা ম্যাডোনা আশির দশকে অন্যতম নারী ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিনত হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে ফ্যাশন ফটোগ্রাফার স্টিভেন ক্লেইনের সঙ্গে এক্স-স্ট্যাটিক প্রপসেস নামক একটি প্রদর্শনীতে সহায়তা করেন যা ডিচ প্রজেক্টস গ্যালারিতে চলেছিল।

বিয়ে এবং বিচ্ছেদ

‘ম্যাটেরিয়াল গার্ল’ গানের ভিডিও ধারনের সময় ম্যাডোনা হলিউড তারকা শন পেনের সঙ্গে ডেইট করা শুরু করেন এবং ৮৫ সালে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের দুই বছর পর ম্যাডোনা বিচ্ছেদের আবেদন করলেও কয়েক সপ্তাহ পর তা প্রত্যাহার করেন। ১৯৮৯ সালে আবার বিচ্ছেদের আবেদন করেন।

১৯৯৮ সালে এই প্রেমিকা নারীর পরিচয় হয় পরিচালক গাই রিচির সঙ্গে, যাকে তিনি ২০০০ সালে বিয়ে করেন। এই বিয়ের আগেই তাদের সন্তান রোকো জন রিচির জন্ম হয়। ২০০৮ সালে ভাঙে এই সংসার।

দাতব্য কার্যক্রম

নারী, শিক্ষা, বৈশ্বিক উন্নয়ন ও মানবিকতায় গুরুত্ব দিয়ে ‘রে অফ লাইট ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন ম্যাডোনা।

‎ম্যাডোনা ফাইভ চিলড্রেন বইয়ের লেখক হওয়ার জন্য ‎‎ক্যালাওয়ে আর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্টের‎‎ সঙ্গে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছিলেন। ২০০৩ সালের ইংলিশ রোজ নামে এই বইগুলোর প্রথমটি প্রকাশিত হয়।‎

বইটি ‎‎দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস‎‎ বেস্ট সেলার তালিকার‎‎ শীর্ষে আত্মপ্রকাশ করে এবং সর্বকালের দ্রুততম বিক্রিত শিশুদের ছবি বই হয়ে ওঠে। বই বিক্রির সব অর্থ একটি শিশুদের দাতব্য সংস্থায় দান করেন ম্যাডোনা।‎

‎কনফেশন ট্যুর ভ্রমণের সময় ম্যাডোনা দাতব্য সংস্থা ‎‎রাইজিং মালাউই‎‎ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং আংশিকভাবে একটি অনাথ আশ্রমে অর্থায়ন করেছিলেন এবং সেই দেশে ভ্রমণ করেছিলেন। ‎

২০১০ সালের জানুয়ারিতে ম্যাডোনা ‘‎‎হোপ ফর হাইতি নাও: এ গ্লোবাল বেনিফিট ফর আর্থকোয়েক রিলিফ‎‎’ কনসার্টে পারফর্ম করেন।

ছয় সন্তানের জননী এই পপ সম্রাজ্ঞী মালাইউতে থাকাকালীন ২০০৬ সালের অক্টোবরে ডেভিড বান্দা নামে একটি ছেলেকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

‎‎দত্তক গ্রহণের ফলে জনসাধারণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, কারণ মালাউইর আইন অনুসারে বাবা-মাকে দত্তক নেওয়ার আগে এক বছরের জন্য মালাউইতে বসবাস করতে হবে, যা ম্যাডোনা করেননি।

২০০৮ সালের মে মাসে দত্তক গ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।‎