প্রীতম হাসান বলেন, “আমি খালেক দেওয়ানের ভার্সনটি নিয়েই কাজ করেছি। রশীদ উদ্দিনেরও আরেকটা ভার্সন রয়েছে।”
Published : 06 May 2024, 09:16 PM
কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় সিজনের ‘মা লো মা’ গানটির রচয়িতার নাম নিয়ে আপত্তি তুলেছেন নেত্রকোণার সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের কর্মীরা।
শুক্রবার কোক স্টুডিও বাংলার অফিশিয়াল ইউটিউব এবং স্পটিফাই চ্যানেলে দ্বিতীয় গানটি প্রকাশ করা হয়। সেখানে গানটির রচয়িতা হিসেবে প্রখ্যাত মরমি সাধক আব্দুল খালেক দেওয়ানের নাম দেওয়া হয়। তবে কোক স্টুডিও একই সঙ্গে জানায়, গানটির ভিন্ন একটি সংস্করণের রচয়িতা রশিদ উদ্দিন।
শিল্পী প্রীতম হাসান, সাগর দেওয়ান, আরিফ দেওয়ান এবং র্যাপার আলী হাসানের গাওয়া গানটি মুক্তি পাওয়ার পর নেত্রকোণা জেলার কবি-সাহিত্যিক, রশিদ উদ্দিনের ভক্ত-অনুসারী ও বাউল গানের গুণমুগ্ধরা গানটির রচয়িতার নাম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।
গানটি চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বাউল সাধক রশিদ উদ্দিনের দাবি করে কোক স্টুডিও বিরুদ্ধে ক্ষোভও ঝারেন কেউ কেউ।
এর মধ্যেই সোমবার নেত্রকোণা জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-সাহিত্য সংগঠনসমূহ ও সম্মিলিত নাগরিক সমাজের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। পরে প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন করেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, “মা-গো মা ঝি-গো ঝি করলে কি রঙ্গে; ভাঙ্গা নৌকা বাইতে দিলে গাঙ্গে। গোমাই নদী নষ্ট করল ঐ না কোলা বেঙ্গে” গানটি প্রায় শত বছর ধরে বাউল রশিদ উদ্দিনের লেখা হিসেবে গাওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস, বাউল রশিদ উদ্দিনের ছেলে আবু আনসার কালা মিয়া, নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ এমরান, লোক সংস্কৃতির গবেষক গোলাম মোস্তফা, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর জেলা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান।
ছবি বিশ্বাস বলেন, “মা-গো মা ঝি-গো ঝি গানটি নেত্রকোণার বাউল সাধক রশিদ উদ্দিনের সৃষ্টি। বাংলার ভাটি বা হাওরাঞ্চলে তিনি মালজোড়া গানের অমর সাধক। এই জনপদের মাটি থেকে উঠে এসেছে এই গান। গানের কথায় কথায় এই অঞ্চলের ছোঁয়া রয়েছে।
“কোক স্টুডিও দুটি শব্দ এদিক-সেদিক করে গানটি বাউল সাধক আব্দুল খালেক দেওয়ানের নামে চালিয়ে দিয়েছে। এটা অনৈতিক।”
নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ এমরান বলেন, “বাউল রশিদ উদ্দিনের গান অবিলম্বে তার নামেই প্রচার করাসহ কোক স্টুডিওকে ক্ষমা চাইতে হবে। এর অন্যথা হলে সংস্কৃতিকর্মীরা কঠোর আন্দোলনসহ আইনগত পদক্ষেপ নেবে।”
বাউল সাধক রশিদ উদ্দিনের ছেলে আবু আনসার কালা মিয়া দাবি করেন, “ছোট থেকেই দেখে আসছি এই গান আমার বাবার নামে বিভিন্ন শিল্পীরা গাইছেন। এটা কী করে পরিবর্তন করা হল? আমরা এর বিহিত চাই।”
লোক সংস্কৃতির গবেষক গোলাম মোস্তফা সংবাদ সম্মেলনে রশিদ উদ্দিনকে নিয়ে লেখা বই ও পাণ্ডুলিপিতে গানটি আছে বলে দাবি করেন।
কাগজ দেখিয়ে তিনি বলেন, “এভাবে অনৈতিকভাবে অন্যের নামে গানটি চালিয়ে দেওয়া অপরাধ।”
কোক স্টুডিও তৃতীয় সিজনের দ্বিতীয় গান ‘মা লো মা’ গানটির সংগীত প্রযোজক শিল্পী প্রীতম হাসান।
আপত্তির বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গানটির দুটি ভার্সন পেয়েছি। দুটি ভার্সন শুনলে বুঝতে পারবেন, সেখানে কথা বা শব্দ আলাদা। আমি খালেক দেওয়ানের ভার্সনটি নিয়েই কাজ করেছি। রশীদ উদ্দিনেরও আরেকটা ভার্সন রয়েছে।”
আব্দুল খালেক দেওয়ানের বাড়ি ঢাকার কেরানিগঞ্জ উপজেলার বামনশুর গ্রামে। ভক্তদের কাছে তিনি বাংলা ‘পালাগানের সম্রাট’ হিসেবেও পরিচিত। পরিবারের সদস্য ও ভক্ত-অনুরাগীরা খালেক দেওয়ান দরবারে প্রতিবছর সংগীত মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন।
বাউল সাধক রশিদ উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা সদর উপজেলার বাহিরচাপড়া গ্রামে। ভক্ত-অনুরাগীদের কাছে তিনি হাওরের বিখ্যাত ‘মালজোড়া গানের স্রষ্টা’ হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুন: