‘সাবা’ সিনেমায় গল্প মা ও মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে।
Published : 01 Aug 2024, 08:58 PM
ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা সুখবর নিয়ে এসেছে ছোট পর্দার অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর জন্য। কানাডার টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪৯তম আসরের ডিসকভারি প্রোগ্রামে জায়গা করে নিয়েছে এ অভিনেত্রীর প্রথম সিনেমা ‘সাবা’।
সিনেমার পরিচালক মাকসুদ হোসেন গ্লিটজকে বলেছেন, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শুরু হবে এই সিনে উৎসব, চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আর মেহজাবীনের ‘সাবা’ দেখানো হবে ৭ সেপ্টেম্বর।
উৎসবে অংশ নিতে একদিন আগেই নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও প্রযোজক সেখানে পৌঁছে যাবেন বলে জানান মাকসুদ।
তিনি বলেন, "আমরা ৪ সেপ্টেম্বর কানাডা থাকার চেষ্টা করব। মেহজাবীন, রোকেয়া প্রাচী আপা, মনোয়ার ভাই, সিনেমার কিছু প্রযোজক আছেন, সবাই মিলে উৎসবে থাকার চেষ্টা করব।"
মাকসুদ হোসেন বলেন, “দেশের এই পরিস্থিতিতে আসলে সবার মন একটু অস্থির হয়ে আছে। এই সংঘাত-সহিংসতার সময়ে খুব ঘটা করে এই খবর ঘোষণাও করা যাচ্ছে না। তবে সাবা সিনেমাটি নিয়ে আন্তজার্তিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ আমাদের জন্য আনন্দের।
“সিনেমার পেছনে আমরা দীর্ঘ একটা সময় শ্রম দিয়েছি, কাজ করেছি। আমার পুরো টিম, অভিনয়শিল্পীরা সিনেমাটির জন্য অনেক পরিশ্রম করেছে। সেই পরিশ্রমের একটি সুখবর টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে যাত্রা।"
দীর্ঘ একুশ বছর ধরে নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন মাকসুদ। এটি তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এর আগে বিজ্ঞাপন, নাটক ও শর্টফিল্ম বানিয়েছেন তিনি।
পাঁচ বছর আগে ‘সাবা’র ভাবনা শুরু হয়েছিল জানিয়ে মাকসুদ বলেন, “কোভিড মহামারীর সময় যখন সবাই ঘরবন্দি, তখন মনে হয়েছে সময়টা কাজে লাগানো যায়, স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু করলাম। এরপর দুই বছর সময় লেগেছে সিনেমাটি বানাতে। আমাদের বাজেট ছিল না। অল্প বাজাটের সিনেমা হলেও সেই টাকা জোগাড় করতে হয়েছে।
“শুটিংয়ের পর এমনও হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গিয়ে সিনেমার রাফকাট দেখিয়ে আমাদের টাকা সংগ্রহ করতে হয়েছে। যেহেতু আমাদের হাতে টাকা পয়সা নাই, তাই এটা করতে হয়েছে। মানে আমরা অনেক জায়গা থেকে সাহায্য পেয়েছি।"
তিনি বলেন, "দেশ-বিদেশ থেকে অনেকে আমাদের সাহায্য করেছেন, যারা রেগুলার সিনেমা নিয়ে কাজ করেন। এই পরিশ্রমের পর যখন সিনেমাটি এমন বড় একটি আন্তর্জাতিকভাবে উৎসবে দেখাতে পারছি, নিঃসন্দেহে আমার জন্য আনন্দের বিষয়। এটি বাংলাদেশের গল্পের সিনেমা এবং দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে যেতে পারছি, এটা বড় পাওয়া।"
‘সাবা’ সিনেমার গল্প সাবা এবং তার মাকে কেন্দ্র করে। মা-মেয়ের সম্পর্কের মধ্যে আবির্ভাব ঘটে অঙ্কুর নামের এক তরুণের, যাকে কেন্দ্র করে সাবার জীবনের বাঁক বদল হয়।
সিনেমায় সাবা হয়েছেন মেহজাবীন, তার মা শিরিনের চরিত্রটি রোকেয়া প্রাচী করেছেন।
‘সাবা’র মাধ্যমে ১৪ বছরের টিভি ক্যারিয়ারের পর বড় পর্দায় নাম লেখালেন মেহজাবীন। এই অভিনেত্রীকে সিনেমায় আনার পেছনের গল্পও বলেছেন নির্মাতা মাকসুদ।
“সাবার চিত্রনাট্য সম্পূর্ণ হওয়ার পর সেটা আমি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ল্যাব ও বাজারে নিয়ে যাই যেমন: গ্লোবাল মিডিয়া মেকারস, লস অ্যাঞ্জেলেস রেসিডেন্সি, প্রোডিউয়ার আউ সুড, এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেট, কান ফিল্ম ফেস্টিভালের কো-প্রোডাকশন মার্কেট এবং এনএফডিসি ফিল্ম বাজারের ভারতীয় কো-প্রোডাকশন মার্কেটে। সেখানে এটি নির্বাচিতও হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে যখন গল্পটা গুরুত্ব পাচ্ছিল, তখন মেহজাবীনের কথা মাথায় এল।
“এই সিনেমাটি তিনি করতে চান কিনা তা জানার জন্য একটা মিটিংয়ে তার সাথে খুব স্বাভাবিকভাবে গল্পটা শেয়ার করি। গল্পটা পছন্দ করার পর তাকে বলি যদি আপনার মনে হয় এই ধরনের চরিত্র আপনি করতে চান, তাহলে যুক্ত হতে পারেন। উনি কয়েকদিন পর তার সিদ্ধান্ত জানান।"
শিল্পীদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ‘দারুণ ছিল’ জানিয়ে নির্মাতা বলেন, সিনেমার আগে ছয় মাস মহড়া করেছেন শিল্পীরা।
“চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে মেহজাবীনকে বলেছিলাম, আমাকে সময় দিতে হবে। কারণ আমাদের টাকা নেই। চরিত্র হয়ে ওঠার জন্য তিনি দীর্ঘ সময় দেন। ছয় মাস ধরে রোকেয়া প্রাচী আপা, মোস্তফা মনোয়ার ভাইসহ সবাই চরিত্রের রিহার্সেল করেছেন।”
এখন পর্যন্ত যারা সিনেমাটি দেখেছেন, সবাই চরিত্র এবং শিল্পীদের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছেন বলে জানান এ নির্মাতা।
তিনি বলেন, “মেহজাবীনের অভিনয়, চরিত্র নিয়ে তার চ্যালেঞ্জ– সবকিছুই বেশ প্রশংসা পেয়েছে।"
‘সাবা’ বাংলাদেশ মুক্তি পাবে আগামী বছরের শুরুতে।
মাকসুদ বলেন, "আমরা এ বছর টরেন্টো উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার করছি, এই বছরটা বিভিন্ন উৎসবে সিনেমাটি নিয়ে ঘুরে বেড়াব। তারপর বাংলাদেশের মুক্তির প্রস্তুতি নেওয়া হবে।"