“কালিকাদা চলে যাওয়ার পরে সবাই ভেবেছিলেন ‘দোহার’ অচল। কিন্তু ‘দোহার’ তো ব্যক্তিগত প্রয়াস নয়, দলগত প্রয়াস।”- রাজীব দাস
Published : 16 Jun 2023, 05:38 PM
দুই দশকের বেশি সময় ধরে শ্রোতাদের মনের খোরাক জুগিয়েছে ‘দোহার’। আগামী বছর এ গানের দলটি পা দেবে পঁচিশে।
অথচ প্রাণপুরুষ কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের অকালমৃত্যুর পরে ছন্নছাড়া হয়ে যেতে পারত দলটি। সে পরিস্থিতিতে দলটিকে প্রাণ দিয়ে বেঁধেছেন ‘দোহার’ এর অন্যতম স্রষ্টা রাজীব দাস। সম্প্রতি আনন্দবাজার অনলাইনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কালিকাপ্রসাদের মৃত্যু পরবর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে খোলামেলা কথা বললেন এ গায়ক।
প্রয়াত কালিকাপ্রসাদকে স্মরণ করে রাজীব বলেন, কোনো পরিবারের এক সদস্য চলে গেলে তার শূন্যতা কখনোই পূরণ হয় না, যখন ‘দোহার’ এর সবটা জুড়ে ছিলেন কালিকা।
“আমরা দুজনেই অসমের ছেলে। কালিকাদার উদ্যোগে তার হাত ধরেছিলাম। ‘দোহার’-এর সৃষ্টি সে ভাবেই। নিত্যনতুন ভাবনাচিন্তার চিন্তক ছিলেন কালিকাদাই, আর আমরা সবাই কারিগর। আমাদের বলা হত ‘ছায়াসঙ্গী’। তার চলে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আমি তার সঙ্গে ছিলাম। একটা দল তো দলনেতার মাধ্যমেই পরিচিত হয়। মানুষ ‘দোহার’কে চিনেছেন কালিকাদার মাধ্যমে। একটা সময় ‘কালিকাপ্রসাদ বনাম দোহার’ দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে আমাদের দলকে। কালিকাদা নিজেই সব সময় স্বীকার করেছেন, তাকে ‘দোহার’-এর থেকে আলাদা করা যায় না। ২০১৭-র ওই দুর্ঘটনার পরে তার শূন্যস্থান এখনও পূরণ হয়নি। তা সম্ভবও নয়।”
রাজীব জানান, অনেকেই জানেন না, ‘দোহার’-এর জন্মলগ্নের শুরুটা ছিল ভিন্ন। সে সময় দলটির মূল গায়েন ছিলেন রাজীব দাস। কালিকার পরিচিতি তখন স্রেফ তবলাবাদক হিসাবে। পারিবারিক সূত্রে যে উত্তরাধিকার পেয়েছিলেন, পরে সেটাকেই ধারণ করেন তিনি। কালিকাদার গায়কসত্তা মূলত সামনে আসে ‘দোহার’-এর জন্মের পরে। তারপর আস্তে আস্তে সেটা জনপ্রিয়তা পায়। তবে তাদের দলের মধ্যে কখনো দ্বন্দ্ব দেখা দেয়নি। পারস্পরিক সম্মানবোধের জায়গা থেকেই সেটা কখনো হয়নি।
রাজীবের ভাষ্যে, “কালিকাদা চলে যাওয়ার পরে সবাই ভেবেছিলেন ‘দোহার’ অচল। কিন্তু ‘দোহার’ তো ব্যক্তিগত প্রয়াস নয়, দলগত প্রয়াস।”
সে সময় মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নেন। তখন ফেইসবুকে তাদের ভক্তর সংখ্যা মাত্র ছয় হাজার মতো। ২০১৭ সালে কালিকা চলে যাওয়ার পরে কেউ কেউ ভরসা করে তাদের মঞ্চ দিয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে কাজ করার সময় প্রতি মুহূর্তের ছবি দলটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে।
রাজীব বলেন, “সেই সময় লোপামুদ্রা মিত্রের সঙ্গে আমরা একটা অনুষ্ঠান করেছিলাম। তারপরে রাঁচিতে আমাদের প্রথম একক অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে অন্য কোনো শিল্পী ছিলেন না। এই সবটাই আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করি। তারপর বিদেশেও ফের ডাক আসতে থাকে। এখনও আমাদের অনুগামী সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ। সবটাই হয়েছে আমাদের সম্মিলিত চেষ্টায়।”
২০২৪ সালে ৭ অগাস্ট ‘দোহার’ ২৫ এ পা দিচ্ছে। এই দিনটিকে ঘিরে তাই বিশেষ উদযাপনেরও পরিকল্পনা করছেন তারা।
‘দোহার’-এর রজতজয়ন্তীর প্রস্তুতি নিয়ে রাজীব জানান, “কোনো গানের দল প্রতি বছর বিশেষ অনুষ্ঠান করছে, এমন সচরাচর দেখা যায় না। সেই ধারা বজায় রেখেছে ‘দোহার’। আমরা থিয়েটার করেছি, ‘লোকধ্বনি’ (ফোক অর্কেস্ট্রা) করেছি। ‘লোকধ্বনি’তে প্রায় ৫০-৬০ রকমের লোকযন্ত্র বেজেছে, আমাদের সঙ্গীতশিল্পীরা ছাড়াও বাইরের যারা দীর্ঘদিন ধরে ‘দোহার’-এর সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, তারাও শামিল হয়েছেন। প্রত্যেক বছরই আমরা নতুন কিছু করার চেষ্টা করি। ২৫ বছরে তো অবশ্যই আরও বিশেষভাবে কিছু করব। অনেক পরিকল্পনা আছে। ক্রমশ প্রকাশ্য!”
কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য : পদ্মা-গঙ্গার জলের ছোঁয়া যার গানে