“পরোক্ষ কর মূলত দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হয়, এতে দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হচ্ছে,” বলেন গবেষক এম এ রাজ্জাক।
Published : 19 Dec 2022, 11:09 PM
প্রত্যক্ষ করের আওতা বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি উন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)।
সোমবার ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক কর্মশালায় এমন পরামর্শ আসে।
রাজধানীর বনানীতে পিআরআই কার্যালয়ে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য কনটেক্সট অব ডমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক বলেন, একটি দেশের সুষম অর্থনীতির জন্য মোট রাজস্বের ৩০ শতাংশ পরোক্ষ কর এবং বাকি ৭০ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর আহরণ করা উচিত।
“অথচ আমাদের দেশে তার উল্টো; বিভিন্ন উৎপাদন, পণ্য ও সেবার ওপর পরোক্ষ কর বসিয়ে নেওয়া হচ্ছে প্রায় ৭০ শতাংশ। আর প্রত্যক্ষ কর হিসেবে নেওয়া হচ্ছে মাত্র ২৫ শতাংশ। পরোক্ষ কর মূলত দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হয়। এতে দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হচ্ছে।”
আয়কর বিবরণী জমা দেওয়া নিয়ে এনবিআরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ৮৪ লাখের টিআইএন নম্বর আছে। এর মধ্যে রিটার্ন দাখিল মাত্র ২৩ থেকে ২৪ লাখের মত। এ সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ লাখে উন্নীত করতে পারলে প্রত্যক্ষ কর মোট রাজস্বের ৭০ শতাংশ করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
এই অর্থনীতিবিদ জানান, বিশ্বের সবচেয়ে কম রাজস্ব আহরণকারী দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ; রাজস্ব আহরণ জিডিপির মাত্র ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
এটি ‘লজ্জার’ চিত্র মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কম্বোডিয়া প্রায় সকল সূচকেই আমাদের চেয়ে পিছিয়ে থাকার পরও দেশটির রাজস্ব আহরণ জিডিপির ২১ শতাংশ। আমাদের প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের রাজস্ব আহরণও প্রায় ২০ শতাংশের কাছাকাছি। এমনকি মিয়ানমারও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করে।
“অথচ উন্নয়নশীল দেশগুলো গড়ে তাদের জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ রাজস্ব আহরণ করে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের রাজস্ব আহরণও অবশ্যই বাড়াতে হবে।”
আগামী তিন বছরের মধ্যে অন্তত রাজস্ব আহরণ জিডিপির ১৩ শতাংশে নিয়ে যেতে পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির তুলনায় খুবই কম বলে উল্লেখ করেন রাজ্জাক।
পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমাদের রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর প্রধান বাধা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সরকার নিজেই।
“ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন এবং আহরণ- দুটি কাজ একটি প্রশাসনের মাধ্যমে করানোর নিয়ম পৃথিবীর কোনও দেশেই নেই।”
যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “এক অফিস থেকে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন হবে এবং সেই কর্মকর্তা কত টাকা রাজস্ব দিতে হবে তা নির্ধারণ করে দেবেন। আরেকটি অফিসে গিয়ে সেই রাজস্ব আদায় করবেন।”