একনেক ৪ হাজার ৮২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ের মোট ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
Published : 22 Nov 2022, 10:35 PM
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় ২২ পৌর এলাকায় দুর্যোগ সহনশীলতা বাড়াতে সরকার ‘উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহিঞ্চু’ নামে আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে।
এর মাধ্যমে নির্বাচিত শহরগুলোতে ২১টি স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার, ৪টি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার, ২২টি বস্তি উন্নয়ন এবং ২১টি মাল্টিপারপাস মার্কেট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া যোগাযোগ অবকাঠামো শক্তিশালী করতে ৩০৯ কিলোমিটার সড়ক, ৪টি বাস টার্মিনাল এবং এক হাজার ৪৫ মিটার সেতু এবং প্রায় ১৪১ কিলোমিটার চেইনেজ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পটি মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে মন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
প্রকৃতিকে ‘বিরক্ত’ না করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার প্রধান নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মান্নান।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা প্রকল্প করছি; কিন্তু সাবধান, প্রকৃতিতে যেন আমরা ডিস্টার্ব না করি। জ্ঞানত প্রকৃতিকে ডিস্টার্ব করা যাবে না’।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এগুলাকে ডিস্টার্ব করবেন না’।…তিনি বলেছেন, ‘উপকূল অত্যন্ত সেনসিটিভ এলাকা, সাবধানে কাজ করতে হবে’।”
প্রকল্পের প্রস্তাবে বলা হয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গৃহীত এ প্রকল্পটি ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৯ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটির জন্য ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাকি ৪৩০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে।
নির্বাচিত এলাকায় জলবায়ু ও দুর্যোগ সহনশীলতা শক্তিশালী করার পাশাপাশি নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী মান্নান।
২০০৬ সালে গৃহীত উপকূলীয় উন্নয়ন কৌশলের (সিডিএস) আওতায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, এর মাধ্যমে উপকূলীয় ১৯টি জেলার মধ্য ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ১১ জেলাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
প্রকল্পটির কারিগরি সহায়তা প্রস্তুতি দল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ- এই ১১ জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ঝুঁকি সূচকের ভিত্তিতে এসব জেলার ৪৩টি পৌরসভার তালিকা করা হয়।
এরপর অগ্রাধিকার তালিকায় প্রথমে ১০টি পৌরসভাকে রাখা হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো প্রকল্প প্রণয়নের জন্য এডিবির কান্ট্রি অপারেশন বিজনেস প্ল্যান কর্মসূচির আওতায় ২০ কোটি ডলারের প্রাথমিক বরাদ্দ পাওয়া যায়। ওই সহায়তা পাওয়ার পর সবমিলিয়ে ২২টি পৌরসভা চূড়ান্ত করা হয়।
এরপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মোকাবেলায় এডিবি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের বৈঠকে আরও ৫ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
একনেক বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে এই প্রকল্পটিসহ ৪ হাজার ৮২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ের ৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মিলবে ২ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা, প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ২ হাজার ২০৭ কোটি টাকা এবং ২৭৮ কোটি টাকা সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে যোগান দেওয়া হবে।
অন্য প্রকল্পগুলো
’কুমিল্লা সড়ক বিভাগাধীন ৪টি জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প; ব্যয় ১ হাজার ২৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
‘লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা-আমড়াগাছিয়া জেলা মহাসড়কে রাবনাবাদ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প; ব্যয় ৫২১ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
‘ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কনস্ট্রাকশন অব চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এরিয়া (সিএমএ)’ প্রকল্প; ব্যয় ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৩৬২ কোটি টাকা।
‘কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়ন, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগ (১ম সংশোধিত, পঞ্চমবার মেয়াদ বৃদ্ধি)’ প্রকল্প; এতে ব্যয় বাড়ছে ১৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো সরকার-৩য় পর্যায়) (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প, ব্যয় বাড়ছে ১০১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা
‘কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ’ প্রকল্প’; ব্যয় ১৪৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।