পরোক্ষ করের কারণে আয় বৈষম্য বাড়ছে, সেমিনারে অর্থনীতিবিদ আব্দুর রাজ্জাক।
Published : 19 Nov 2022, 06:19 PM
বর্তমানে বাংলাদেশের কর কাঠামোতে প্রত্যক্ষ কর আহরণের হার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ১ শতাংশ। অথচ বিদ্যমান ব্যবস্থাতেই তা জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব বলে এক সেমিনারের তথ্যে উঠে এসেছে।
শনিবার ‘বৈষম্য মোকাবেলা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষকর প্রয়োগ’ শীর্ষক সেমিনারের মূল্য প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তার মতে, প্রত্যক্ষ কর যত বেশি হবে বৈষম্যও তত কমবে। পরোক্ষ করের কারণে আয় বৈষম্য বাড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বর্তমানে প্রত্যক্ষ কর আদায় হচ্ছে মোট আদায়ের মাত্র ৩৫ শতাংশ। অথচ এটা ৭০ শতাংশে উন্নীত করতে পারলে প্রান্তিক মানুষ করের বোঝা থেকে কিছুটা হলেও লাঘব পেত।”
র্যাপিড ও ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সেমিনারে অর্থনীতিবিদ রাজ্জাক জানান, শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয় বিশ্বেই প্রত্যক্ষ কর আহরণে বাংলাদেশ একেবারে তলানিতে।
বর্তমান এ কর ব্যবস্থা ‘ভারসাম্যপূর্ণ নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে প্রত্যক্ষ কর প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে পরোক্ষ করেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।
এত বেশি পরোক্ষ করের কারণেই দেশে আয় বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একটি পরিকল্পিত পরীবীক্ষণ উইং গঠনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “ঠিকমত পরীবীক্ষণ করতে পারলে জিডিপির অন্তত ২ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর আহরণ বাড়ানো সম্ভব।”
তিনি কর জিডিপির অনুপাত ৯ শতাংশ থেকে বাড়ানো, টিআইএন ধারীদের রিটার্নের আওতায় আনাসহ কর আহরণের দুর্বলতা কাটানোর পরামর্শ দেন।
বর্তমানে কর কাঠামোর কারণে ধনীদের তুলনায় একজন দরিদ্র মানুষ অনেক বেশি কর দিচ্ছেন বলে তার পর্যবেক্ষণ।
দেশে প্রত্যক্ষ করের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে তিনি ‘সোশ্যাল ইন্স্যুরেন্স নম্বর’ চালুর পরামর্শ দিয়ে বলেন, এতে আয় ব্যয়ের হিসাব সরকারের কাছে রাখা সম্ভব হত।
সেমিনারে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো উচিত। তবে তা ৭০ শতাংশ বাড়ানো উচ্চাভিলাষী।
তার মতে, কর আহরণের কাঠামো ঠিক করা বিশেষ করে বৈষম্যহীন কর কাঠামো নির্ধারণে এনবিআরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। কারণ মাঠের অবস্থা তারাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
র্যাপিড এর নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফের সঞ্চালনায় সেমিনারে এনবিআরের সদস্য মাহমুদুর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বক্তব্য দেন।