মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হারের অস্থিরতার এ সময়ে আগামী বাজেট ‘সংকোচনমূলক’ করার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।
Published : 11 Mar 2024, 01:59 AM
অর্থনীতিতে অনেক সমস্যা থাকলেও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন দেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই আছে। এগুলো থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়ে তারা এখনই সংকট কাটাতে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
রোববার রাতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব কথা বলেন।
ঢাকার ইস্কাটনে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘সবাই প্রশংসা করেছেন যে, আমরা রাইট ট্যাকে আছি। ভালোভাবে অর্থনীতি হ্যান্ডেল করছি। অর্থনীতিতে অনেক সমস্যা আছে। আমরা কিন্তু কখনই বলিনি সমস্যা নেই। কি কি সেগুলো সবাই জানি।
“তারা বলেছেন এখন পর্যন্ত সব ভালো আছে। কিন্তু আপনাদের সময় শেষ হয়ে আসছে, অনেক সমস্যা আপনাদেরকে ধরবে। এই সমস্যা থেকে সাবধান থাকতে হবে। এজন্য এখনই উদ্যোগ নিতে।’’
সমস্যা থেকে উত্তরণের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এজন্য আর্থিক খাতে রিফর্ম করতে হবে।“
বৈঠক শেষে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, তারা বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন খাতের প্রণোদনা থেকে আস্তে আস্তে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হারের অস্থিরতার সময়ে আগামী বাজেট সংকোচনমূলক করার কথা বলেছেন।
শুধু প্রবৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদারের পরামর্শ দিয়ে তারা আগামী বাজেটে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানে বিনিয়োগ বাড়ানো ও ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশের তাগিদ দিয়েছেন।
আগামী বাজেটের প্রস্তুতি নিয়ে এ বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে দীর্ঘমেয়াদী খরচ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘‘বাজেটে আমরা সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বলেছি। বাজেট কাঠামোতে সেই কৌশলটি রাখা দরকার, শুধু প্রবৃদ্ধি দেখলে হবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীর গতির সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে।
‘‘প্রত্যক্ষ কর ও করনেট বাড়াতে হবে। পরোক্ষ কর দিয়ে কর ব্যবস্থা থেকে রাজস্ব আদায় বেশি হবে না। অর্থনৈতিক গুরুত্ব দেখে প্রকল্প নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’’
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নিবাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আগামী বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে পাওয়া। এজন্য প্রবৃদ্ধির চেয়ে বাজেট ঘাটতি কমানোর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাড়াতে হবে প্রত্যক্ষ কর।
রাজস্ব নীতির কাঠামো বদলে পুরোটা স্বয়ংক্রিয় করার সুপারিশ করে তিনি পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীলতার বদলে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
খেলাপি ঋণ কমানোর পরামর্শ দিয়ে সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন বলেছেন, ‘‘এভাবে সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে ছোট ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়েন। সুদহার বাজারমুখী হতে হবে।’’
বৈঠকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান ও সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন ও সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি, অর্থ বিভাগের সচিব খায়েরজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম উপস্থিত ছিলেন।