দেশে বেকার কমে এখন ২৬ লাখ ৩০ হাজার

আইএলও এর নিয়ম অনুসরণ করে বিবিএস পরিচালিত এ জরিপে সপ্তাহে কেউ এক ঘণ্টা কাজ করলে তাকে শ্রমশক্তি হিসেবে গণনায় নেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ তিনি আর বেকার নন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2023, 04:01 PM
Updated : 29 March 2023, 04:01 PM

পাঁচ বছর আগের চেয়ে দেশে বেকারের সংখ্যা ৭০ হাজার কমে ২৬ লাখ ৩০ হাজার জনে দাঁড়িয়েছে; বেকারত্বের এ হার মোট শ্রমশক্তির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

এর আগে ২০১৭ সালের জরিপে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ, যা ওই সময়ের শ্রমশক্তির ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সবশেষ জরিপে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেকারের নতুন পরিসংখ্যান তুলে ধরে।

কোভিড মহামারী ও ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনীতিতে অস্থিরতা ও ধীরগতিতে কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনার মধ্যে সবশেষ জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হল।

অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা অর্থনীতির টানাপোড়নে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার কারণে নতুন করে অনেকের বেকার হওয়ার কথা বললেও জরিপে উঠে এসেছে উল্টো তথ্য।

অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২’ প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এবারের জরিপে বেকারত্ব কমার কারণ তুলে ধরেন।

এ বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “কোভিডের পর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। ওই সময়ে বৈশ্বিক মহামারীর কারণে লকডাউনসহ বিভিন্ন কারণে শিল্প এবং সেবা খাত থেকে উল্লেখযোগ্য একটা অংশ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছিল। পরে এসব বেকার গ্রামে বা বিভিন্নভাবে কৃষি এবং পোল্ট্রিসহ আরও অনেক কৃষিভিত্তিক খাতে কাজ করেছে।

“এর ফলে এবারের শ্রম জরিপে বেকারত্ব কমে যাওয়া এবং কৃষি খাতের শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে গেছে।”

এদিন অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জুনের মধ্যে জরিপের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

সবশেষ জরিপের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত জনবল ৭ কোটি ৩৪ লাখ জন। এরমধ্যে ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ এবং ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী; ৫ বছর আগে যা ছিল ৬ কোটি ৩৫ লাখ।

অপরদিকে বেকার জনবলের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। এরমধ্যে বেকার পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার এবং নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার।

২০১৬-১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময় দেশে প্রায় ২৭ লাখ বেকার ছিল। এরমধ্যে ১৪ লাখ পুরুষ এবং নারী ছিলেন ১৩ লাখ।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে করা আগের জরিপের চেয়ে এবারের জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, ১৫ বছরের বেশি বয়সী শ্রমশক্তির মধ্যে পুরুষের বেকার হওয়ার হার বেড়েছে। আগের জরিপে এ হার ছিল ৩ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০২২ সালে হয়েছে ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

অপরদিকে একই বয়সী নারীদের বেকার হওয়ার হার অনেক কমেছে। আগের জরিপে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে তা এবার ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমে এসেছে।

এদিন জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এতে জরিপের তথ্য তুলে ধরে ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২’ প্রকল্পের পরিচালক আজিজা রহমান জানান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুসরন করে ২০২২ সালে তিন মাস করে মোট চার প্রান্তিকে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।

এতে দেশের ১ হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক গণনা এলাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতিটি গণনা এলাকা থেকে ২৪টি খানা নির্ধারণ করা হয়। এসব এলাকা থেকে প্রতি তিন মাসে দেশের ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। চার প্রান্তিকে মোট ১ লাখ ২৩ হাজার ২৬৪টি খানা থেকে শ্রম জরিপের তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতি পাঁচ বছর পরপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পরিচালিত জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয় ২০১৭ সালে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আইএলও এর নিয়ম অনুসরণ করে পরিচালিত এ জরিপে সপ্তাহে কেউ এক ঘণ্টা কাজ করলে তাকে শ্রমশক্তি হিসেবে গণনায় নেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ তিনি আর বেকার নন।

“আইএলও এর নিয়মে ১৫ বছরের বেশি বয়সী কেউ সবশেষ ৩০ দিন কাজ খুঁজে যদি প্রতি সাতদিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টা কাজের সুযোগ না পান, তাহলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়,” বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

প্রাথমিক তথ্য তুলে ধরে প্রকল্প পরিচালক জানান, দেশের মোট জনগণের মধ্যে ১৫ বছরের বেশি জনশক্তির প্রায় ৪ কোটি ৬৯ লাখ শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত নয়। এরমধ্যে পুরুষ ১ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার এবং নারী রয়েছেন ৩ কোটি ৪৮ লাখ।

বর্তমানে কৃষিতে নিয়োজিত জনবলের সংখ্যা ৩ কোটি ২২ লাখ, শিল্পখাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৬ লাখ।

আগের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী কৃষিতে ২ কোটি ৪৭ লাখ, শিল্পখাতে ১ কোটি ২৪ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৩৭ লাখ জনবল নিযুক্ত ছিলেন।

এক্ষেত্রেও সাম্প্রতিক জরিপের তথ্যে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

প্রাথমিক তথ্য দেখা যায়, ২০২২ সালের জরিপে যুব শ্রমশক্তি রয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ। এরমধ্যে ১ কোটি ৩৫ লাখ পুরুষ, ১ কোটি ৩৩ লাখ মহিলা। আগের জরিপে ২ কোটি ১০ লাখ যুবকের মধ্যে পুরুষ ছিলেন ১ কোটি ৩১ লাখ এবং নারী ছিলেন ৭০ লাখ।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় প্রকল্প পরিচালক বলেন, দেশে বিগত ৫ বছরের ব্যবধানে দুই জরিপে শ্রমশক্তিতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের হারে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে। শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। যুব জনগোষ্ঠীর শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বেড়েছে। কৃষি এবং সেবা খাতে কর্মোক্ষম জনগোষ্ঠী বেড়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী আগামী জুনের মধ্যে জরিপের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের আশা প্রকাশ করে বলেন, তখন আমরা বিস্তারিত জানতে পারব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম দেশের শ্রম বাজার ও অর্থনীতির প্রত্যেকটি খাতের হালনাগাদ তথ্য পেতে প্রতি তিন মাসের তথ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকের তথ্য আগামী মে মাসে পাওয়া যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিবিএস মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।