পদ্মা সেতু ব্যবহার করে আরও বাণিজ্যিক সুবিধা পেতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত বিদ্যমান সড়ককে মহাসড়কে উন্নীত করতে প্রায় এক হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করবে সরকার। এজন্য ছয় হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ের রয়েছে।
দেশের বৃহত্তম এ সেতু চালুর পর তৈরি উন্নত সড়ক যোগাযোগের ফসল হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রকল্প প্রস্তাবে।
এজন্য ৬ হাজার ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নীত করণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের হাতে নেওয়া প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) পরবর্তী সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের শেষ সভাটি শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য এনইসি-একনেক অনুবিভাগ নোটিস জারি করেছে। তাতে এ প্রকল্প রয়েছে।”
সভায় উপস্থাপনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি-একনেক ও সমন্বয় অনুবিভাগ থেকে পরবর্তী একনেকে ৩৬টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের তালিকা করেছে।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা-মাওয়া দিয়ে তৈরি হওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হয়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গিয়ে। সেখান থেকে বেনাপোল পর্যন্ত বাকি সড়কটি দুই লেইনের।
কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বেনাপোল পর্যন্ত বাকি সড়কটুকু মহাসড়কে উন্নীত করা গেলে দুই দেশের বাণিজ্য সুবিধা আরও বাড়বে। সম্ভাবনাময় এ সুবিধা গ্রহণে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটির প্রস্তাবে বলা হয়, ভাঙ্গা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত সড়কটি ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। নতুন প্রকল্পটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের (এএইচ-১), সাসেক রোড করিডো-২ এর অংশ। স্থলপথে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ মালামাল এ করিডোর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রতিবছর এ বাণিজ্য ১৫-২০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
প্রকল্পটি মূলত ভারতের সঙ্গে বিশ্বমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গৃহীত ‘ভাঙ্গা-যশোর- বেনাপোল মহাসড়ক সার্ভিস লেনসহ চারলেনে উন্নীত করণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রবর্তী প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করা হবে।
ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার দুই পাশে দুটি সার্ভিস লেনসহ চারলেনে উন্নীত করতে প্রকল্পটির জিওমেট্রিক ডিজাইন অনুযায়ী এ মহাড়কের প্রস্থ হবে ৬৪ দশমিক ৭২ মিটার। কারণ এতে ইউলিটি যেমন- গ্যাস লাইন, বৈদ্যুতিক ও টেলিফোন লাইন নিরাপদ দূরত্বে স্থানান্তর করতে হবে।
এছাড়া অবকাঠামো ও গাছপালা ইত্যাদি সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ ব্যয়ও মেটানো হবে প্রকল্পটি থেকে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, এটি বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যমান সড়কের দুই পাশে প্রায় ৯৬৯ দশমিক ৩৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
এ বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ এবং ইউটিলিটি স্থানান্তর এবং প্রতিস্থাপনসহ প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। শতভাগ অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে।
এটি বাস্তবায়নের পরই মূলত “ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সার্ভিস লেনসহ চারলেনে উন্নীত করণ’ মূল প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে। এটি বাস্তবায়নে ১৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব ইতিমধ্যে পিইসি সভার অনুমোদনে দিয়ে কিছু সংশোধনীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্পটির জন্য ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট লাইন-৩ (এলওসি) থেকে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ১১ হাজার ৮২ কোটি টাকার অর্থায়ন নিতে চায় সরকার। বাকি ২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা দেশি অর্থায়ন থেকে যোগান দেওয়ার পরিকল্পনা।