মেগা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরা বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পরে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
Published : 04 Apr 2024, 05:47 PM
তিন বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণের অঙ্ক এক লাখ টাকা থেকে বেড়ে দেড় লাখ টাকা হওয়ার তথ্য দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি।
বৈদেশিক ঋণের তথ্য পর্যালোচনা করে এ বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ এবং তা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা ক্রমশ বাড়ছে।
সিপিডি ও এশিয়া ফাউন্ডেশন বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ'স এক্সটারনাল পাবলিক বরোইংস অ্যান্ড ডেবট সার্ভিসিং ক্যাপাসিটি; আর দেয়ার রিজন ফর কনসার্ন?’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানেই মাথাপিছু ঋণের এই তথ্য দেওয়া হয়।
সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, "তিন বছর আগে মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ টাকা। এখন তা দেড় লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।"
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ৭০ শতাংশ নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরিতে। ফলে খাতভিত্তিক উন্নয়ন ব্যবস্থা ‘ভেঙে পড়েছে’।
এসব প্রকল্প থেকে ‘একটি গোষ্ঠী লাভবান হয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, "গত দেড় দশকে ঋণ করে অনেক মেগা প্রকল্প করেছে সরকার। তা সবার উন্নতিতে কাজে আসেনি। বরং মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার বেড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। ঋণ বাড়লেও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি হয়নি।"
মেগা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরা বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পরে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “প্রকৃতপক্ষে আমরা পাকলিক (সরকারি) ও পাবলিকলি গ্যারান্টিযুক্ত (জামানত) ঋণের দায়বদ্ধতার একটি বড় অংশ পরিশোধের জন্য আবার ঋণ নিচ্ছি। তাই দ্রুত অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক ঋণ এবং ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার হার বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত ২০২৩ সালের জুন শেষে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদেশি ঋণ ছিল ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত সেপ্টেম্বরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
বিদেশি ঋণ-জিডিপি অনুপাত ২১ দশমিক ৬ শতাংশ ‘তুলনামূলকভাবে বেশি না হলেও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ' বলে মত দেন মোস্তাফিজুর।
তিনি বলেন, ঋণ পোর্টফোলিওর (ঋণের বিভিন্ন উতস) গঠন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। ঋণের শর্তাবলীও আরও কঠোর হচ্ছে। বিশেষ করে জিডিপি, রাজস্ব আয়, রপ্তানি, রেমিটেন্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্গে তুলনা করলে বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিশোধের দায়বদ্ধতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অর্থনীতিতে উদ্বেগ আকারে দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের সর্বনিম্নের কাতারে জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এর সঙ্গে ঋণ বহনের সক্ষমতা ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা উদ্বেগ তৈরি করেছে। দিন শেষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ, যা অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উভয় ঋণ পরিশোধের জন্য বিবেচনা করতে হবে।”