চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুলনপুরের ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ২ দশমিক ৩ মেগাওয়াট।
Published : 31 May 2023, 12:39 AM
উত্তরের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হয়েছে; মৎস্য খামারের একটি জলাশয় থেকে দিনে ৮০০ কিলোওয়াট হারে বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
দেশের লোডশেডিং ও জ্বালানি সংকটের এই সময়ে এমন পরিবেশবান্ধব অর্জনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও উচ্ছ্বসিত। আর প্রকল্প সফল হলে খরচের প্রায় ৭০ শতাংশ সাশ্রষের কথা বলছে বাস্তবায়নকারী কোম্পানি।
মঙ্গলবার প্রতিমন্ত্রী নসরুল এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুলনপুরে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২ দশমিক ৩ মেগাওয়াট। প্রকল্পটির ফলে একই জলাশয় থেকে মিলবে মাছ ও বিদ্যুৎ।
“আগামী কয়েক মাস আমরা উক্ত জলাশয়ে মাছের বৃদ্ধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব। পরিবেশগত ভারসাম্য অটুট থাকলে পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন জলাধারে আমরা আরও বড় পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেব।”
পরিবেশে বিরূপ প্রভাবের কারণে বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানি কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়ানোর প্রচেষ্টা চললেও ‘জায়গা স্বল্পতার কারণে’ বাংলাদেশে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন।
তবে সম্প্রতি জ্বালানির অপ্রতুলতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে সৌর বিদ্যুতে সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহারের কথা বলছে সরকার।
সরকারি টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসআরইডিএ) হিসাবে বর্তমানে সোলার হোম সিস্টেম, রুপটপ সোলার, নেটমিটারিং পদ্ধতি, গ্রিড সোলার সিস্টেমসহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ৯৩৭ দশমিক ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সৌর বিদ্যুৎ থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রাপ্তির গুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
ফলে দেশে দৈনিক বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি ধরে হিসাব করলে দেশের প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ বিদ্যুৎ সৌর প্যানেল থেকে পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী নসরুল বলেন, “সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে আমরা ড্রাস্টিক মেজার হাতে নিয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সোলার থেকে আমরা দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করব।
“১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে প্রায় ৩০০ একর অকৃষি জমি প্রয়োজন। দুই হাজার মেগাওয়াট করতে গেলে লাগবে ছয় হাজার একর জমি। ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে জমির প্রাপ্যতা বড় একটি চ্যালেঞ্জ।”
‘সফল হলে সাশ্রয় ৭০%’
চাঁপাইনবাবাগঞ্জের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে রয়েছে নবাব অটো রাইস মিলের কারখানা এলাকায় বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি জুলস পাওয়ার।
জুলস পাওয়ারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সেখানে ৬ একর আয়তনের একটি জলাশয়ের ৫০ শতাংশ জমি ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে যেহেতু মাছ চাষ হচ্ছে তাই ফুডগ্রেড প্লাস্টিকের ফ্লোটার ব্যবহার করা হয়েছে যাতে মাছের ক্ষতি না হয়। এর লাইফ টাইম হচ্ছে ২০ বছর। ঝড় কিংবা টর্নেডোর কথা বিবেচনায় অ্যাংকরিং সিস্টেম রাখা হয়েছে।
“জলাশয় এলাকা থেকে ৮০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ আসছে। প্রকল্পের বাকি বিদ্যুৎ আসছে কারখানার বিভিন্ন ভবনের ছাদে স্থাপন করা সৌর প্যানেল থেকে।”
তিনি বলেন, রাইস মিলে দৈনিক ২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। দিনের বেলা সোলার বিদ্যুৎ থেকে চাহিদার প্রায় পুরোটাই সাপোর্ট দেওয়া যাবে। আর কারখানায় কোনো কারণে লোড না থাকলে বিদ্যুৎ চলে যাবে গ্রিডে।
নবাব রাইস মিলের মালিক নাহিদ হোসেন বলেন, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মাছ চাষ। সেই পুকুরে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে সৌর বিদ্যুৎ বসালাম। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে।
“আজকে ১২০০ কিলোওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। ভালো ফলাফল আসলে এটা বাংলাদেশের অন্যান্য মৎস্য খামারের জন্য একটা লাভজনক প্রকল্প হিসাবে জনপ্রিয় হবে।”
প্যানেলে মাছ চাষে অসুবিধা হচ্ছে না জানিয়ে নাহিদ বলেন, “আমরা এখানে আগে থেকেই রুই, কাতলার মতো দেশি মাছ চাষ করছি। আমরা কয়েকবার মাছও ধরেছি। পানির অংশে যেহেতু কোনো স্থাপনা নেই তাই মাছ ধরতেও কোনো সমস্যা হয়নি। আবার চাইলে সৌর প্যানেলগুলো এদিক সেদিন স্থান পরিবর্তনও করা যায়।”
প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ খরচ বাবদ কতটা সাশ্রয়ী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ আড়াই মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়েছিল। কারখানার জন্য মাসে গড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। প্রকল্প সফল হলে খরচের ৭০ শতাংশ সাশ্রয় হবে বলে আশা করছি।”