সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল সংসদে

এতে ১৮ বছর বা এর বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক যুক্ত হতে পারবেন। বিশেষ শর্তে আওতায় থাকবেন পঞ্চাশোর্ধ্বরাও।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2022, 04:28 PM
Updated : 29 August 2022, 04:28 PM

সবাইকে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২২’ আইন সভার অনুমোদনের জন্য সংসদে উঠেছে।

সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। পরে সেটি দুই মাসের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বর্তমানে দেশে শুধু সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পেলেও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। সরকার গঠনের পর সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা সবার জন্য এ সুবিধা চালু করার কথাও বলেন। এরপর এজন্য আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তা এখন খসড়া আকারে সংসদে তোলা হল।

সোমবার বিলটি সংসদে তোলার বিষয়ে আপত্তি করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তবে সে আপত্তি টেকেনি।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম অনুযায়ী নির্ধারিত চাঁদা নিয়মিত দেওয়ার শর্তে একজন ব্যক্তির ৬০ বছর পূর্তিতে আজীবন বা পেনশনে থাকাকালীন চাঁদাদাতার মৃত্যুজনিত কারণে তার নমিনিকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাসিক হারে পেনশন দেওয়া হবে।

সর্বজনীন পেনশনে ১৮ বছর বা এর বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক যুক্ত হতে পারবেন। তবে বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্বদেরও এর আওতায় রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিলে একটি পাঁচ সদস্যের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে, যার প্রধান হবে নির্বাহী চেয়ারম্যান। এদের নিয়োগ করবে সরকার। সরকারের অনুমোদন নিয়ে এ কর্তৃপক্ষ ঋণ নিতে পারবে বলে বিলে বলা হয়েছে।

পেনশন কার্যক্রম পরিচালনায় খসড়া আইনে ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রাখা হরেয়ছে। এর চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এর সদস্য হবেন। পর্ষদের সদস্য সচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবে।

একজন পেনশনার আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন বলে আইনের খসড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন, যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে।

পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে এবং পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, নিম্ন আয় সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অস্বচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে।

বিলে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি অথবা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে। এক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা পেনশন ব্যবস্থার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে বিল

এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করার জন্য একটি বিল সংসদে তোলেন।

সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল ২০২২ তোলার পর সেটি দুই মাসের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

স্ব-শাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা নির্ধারণে অর্থ বিভাগের করণীয় সম্পর্কে বিধান স্পষ্ট করতে বিলটি আনা হয়েছে।

বিলটি সংসদে তোলার বিষয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ আপত্তি করেন। তবে তার আপত্তি ভোটে খারিজ হয়ে যায়।

হারুন বলেন, “আইনটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের একটি রায় হয়েছে। তাই এই আইন অকার্যকর। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে যায় না।”

যারা অপরাধ করবে তাদের কী আইনের আওতায় আনা হবে না- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আগে এই আইনে যেসব অসঙ্গতি আছে সেগুলো দূর করতে হবে।

জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আইনে কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায়মুক্তি নেই। সরকারি কর্মচারিরা যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন সেজন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশের আইনে এই বিধান আছে। সিআরপির ১৯৭ ধারাতেও এটি আছে।”