ধারাবাহিক জ্বালানি সরবরাহের বহুমুখী উৎস ঠিক করার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
Published : 08 Jun 2023, 01:22 AM
করনীতি সহজ করার পাশাপাশি প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনীতির চলমান চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধানকে সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় দেখতে চায় আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম)।
বুধবার দেশে ব্যবসারত যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর এ সংগঠনের সভাপতি এরশাদ আহমেদ বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান।
ঢাকার বনানীতে শেরাটন হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই সভায় তিনি বলেন, এমন সময়ে সরকার বাজেট দিয়েছে যেখানে ছয় মাস পর জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আবার সরকার গঠিত হবে। এ স্বল্প সময়ে সরকারের কাছে আবেদন জানাব অর্থনীতির চলমান সংকটকে সামাল দিতে অগ্রাধিকার তালিকা করার।
প্রস্তাবিত বাজেটে আয়কর নীতি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো, রপ্তানি বাড়াতে বিকল্প সহযোগিতা বাড়ানো, ধারাবাহিক জ্বালানি সরবরাহের জন্য বহুমুখী উৎস ঠিক করার দাবি জানান তিনি। তিনি কার্বন কর আরোপের সমর্থন জানান।
পাশাপাশি আমদানি শুল্ক ও কর ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা বাড়ানো, আইসিটি কর সংস্কার, অবকাঠামো খাতে লজিস্টিক সেবার পরিধি বাড়ানো এবং ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে উদ্যোগও চেয়েছেন তিনি।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সহজ করনীতির প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের রুল বুক পরিবর্তন করার কাজ চলছে। আমরা নিয়মিত তা সহজীকরণ করছি।’’
আলোচনায় বাংলাদেশের চলমান স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের আমদানি শুল্কহার সবচেয়ে উচ্চ হারের দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে। এটিকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে আসার সময় হয়েছে।’’
অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেঁধে দেওয়া শর্তের মধ্যে রাখতে পারাটা বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পণ্য আমদানি কমে এসেছে চলতি অর্থবছরে। এতে বাণিজ্য ভারসাম্য কমেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকায় শিল্পে উৎপাদন কমে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমেছে।’’
তাহলে একই অর্থনৈতিক পরিবেশে আগামী বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে সাড়ে ৭ শতাংশ অর্জিত হবে-এমন প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রাজস্ব বাড়াতে কর অব্যাহতি বন্ধ করা, রাজস্ব খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ও রাজস্ব আদায়ের স্বল্পমেয়াদী কৌশলন নির্ধারণের পরামর্শ দেন তিনি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ রাজনৈতিক অর্থনীতির সঙ্গে প্রকৃত অর্থনীতির সমন্বয়ের সময় হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সামীর সাত্তার বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ব্যবসা সঙ্কুচিত করছে বলে দাবি করেন।
এর উত্তরে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ প্যানেল আলোচনায় বলেন, বড় সমস্যা হচ্ছে কর কর্মকর্তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। তারা কর আদায়কালে যে আচরণ করেন তা বিদেশি ব্যবসায়ীদের আচরণ ও সংস্কৃতির সঙ্গে বেমানান। এজন্য এনবিআরের প্রসঙ্গ আসলেই তারা ব্যবসা সংকোচনের পথে হাঁটছেন।
ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি নিজ বক্তব্যে এম এ মান্নান বলেন, ‘‘আমাদের এখন স্মার্ট শুল্কনীতি প্রয়োজন। এজন্য বুঝে-শুনে সবার মতামত নিয়ে এ সংক্রান্ত বিধিবিধান তৈরি করা করতে হবে।’’’
অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার। গত মে শেষে তা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়।
আলোচনায় এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, এটি দিন দিন বাড়ছে গত কয়েক মাস ধরে। কারণ হচ্ছে করোনা মহামারী-যুদ্ধ এর মতো পরিস্থিতি আমাদের হাতে নেই। সবকিছু আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে।’’