বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।
Published : 23 Nov 2022, 07:15 PM
বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ির ফল এখন মিলছে; নতুন এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমে এসেছে, তবে নিষ্পত্তির চিত্র আগের মতই রয়েছে।
ডলারের সরবরাহ সঙ্কটে এপ্রিলে বিদেশ থেকে পণ্য আনার গতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। ছয় মাস পেরিয়ে এখন সেসব কার্যক্রমের প্রভাবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে এবং একক মাস হিসেবে অক্টোবরে পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে।
তবে পুরনো এলসির দায় মেটাতে গিয়ে নিষ্পতির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এতে আমদানি বাণিজ্যে ডলারের খরচ কমেনি বরং আরও বেড়েছে। যে কারণের বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ডলারের উপর চাপ বজায় রয়েছে।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নতুন এলসি কমে আসায় আগামী ডিসেম্বর নাগাদ হয়ত নিষ্পত্তির দায়ও পাঁচ বিলিয়নের ঘরে নেমে আসবে।
আর বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, আগামী জানুয়ারি নাগাদ এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হারও কাছাকাছি পর্যায়ে চলে আসবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে নতুন এলসি খোলা হয়েছে ২৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ কম (টাকার অঙ্কে ৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার)। গত অর্থবছরের একই সময়ে ২৮ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
একক মাস হিসেবে অক্টোবরেও আগের তিন মাসের চেয়ে এলসি খোলার পরিমাণ কমে ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আগের অর্থবছরের অক্টোবরের চেয়ে কমেছে ৩৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ওই মাসে এলসি খোলা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের।
এদিকে গত ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত খোলা হয়েছে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। এ ধারা বজায় থাকলে চলতি মাসেও এলসি খোলা কমার ধারা বজায় থাকবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।
অপরদিকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের আলোচিত সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার বা ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার।
এলসি নিষ্পত্তির অর্থ হল- এ পরিমাণ অর্থের বিপরীতে পণ্য বন্দর থেকে খালাস হয়েছে।
এদিকে এলসি কমলেও আগের দায় পরিশোধ করার পরিমাণ না কমায় ডলার সংকট কাটছে না ব্যাংকগুলোতে। চাহিদার বিপরীতে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ২২ নভেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সহায়তা দিতে ৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে।
করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে বাড়তে থাকে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা এবং নিষ্পত্তির পরিমাণ। এ ধারা অব্যাহত থাকে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও।
পরে ডলার সাশ্রয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্ক পদক্ষেপ ও নজরদারি বাড়ানোর প্রভাব নতুন এলসির খোলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানিতে যে উল্লম্ফন্ন ছিল তাতে লাগাম পড়েছে, আমদানির উচ্চ গতি ধীর হয়েছে।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানির জন্য মোট ৯২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারের নতুন এলসি খোলা হয়েছিল, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি ছিল।
গত অর্থবছরের পুরোটা সময়েই নতুন এলসি খোলার পরিমাণ বেশি হয়েছিল এলসি নিষ্পত্তির চেয়ে। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে নতুন এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ২৮ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার, সেখানে নিষ্পত্তির পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে এলসি খোলার পরিমাণ হচ্ছে ২৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারের।
গত কয়েক মাসের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির ধারা দেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আগামী জানুয়ারিতে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ কাছাকাছি চলে আসবে বলে আশা করছেন, যা রপ্তানি-আয় ও রেমিটেন্স দিয়েই মেটানো সম্ভব হবে।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘এখন যে দায় মেটানো হচ্ছে, তা গত এপ্রিল-মে মাস সময়ের খোলা এলসি। নতুন এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে তার ফল আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারি নাগাদ পাওয়া যাবে। তখন দেখা যাবে এলসির নিষ্পত্তি ও খোলার পরিমাণ কাছাকাছিই চলে আসছে।’’
এদিকে পুরনো এলসির দায় আপাততো না মিটিয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিতে উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও সুদ ব্যয় এড়াতে উদ্যোক্তারা চাইছেন পুরনো দায় এখনই মেটাতে। এজন্য নতুন এলসি খোলার পরিমাণ বাড়লেও পুরনো দায় মেটাতে গিয়ে বাড়ছে ডলারের খরচ।
এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘এখন যেসব এলসি নিষ্পত্তি হচ্ছে সেগুলো ৬ মাস বা এক বছর আগের খোলা। অনেকগুলো ডেফার্ড (এলসির বিপরীতে প্রদেয় দায় পরিশোধের সময় বাড়িয়ে নেওয়া বা দেরিতে দেওয়া) এলসি। এর ফলে ব্যয় বাড়ছে।’’
এ কারণে এখন ব্যাংকগুলোতে বেশি চাপ পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধারা আগামী ২-৩ মাস অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন
বিনিয়োগ নিয়ে সতর্ক: জুলাই-অগাস্টে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ‘পিছুটান’
‘এখন এলসি না হলে রোজায় খেজুরের দাম নাগালের বাইরে যাবে’