বাজেট ২০২৩-২৪: যেসবের দাম বাড়ছে, যেসবের কমছে

বাড়ি-গাড়িতে খরচ বাড়ছে, গৃহস্থালিতে ব্যয় বাড়ার সঙ্গে ভ্রমণেও খরচা বাড়তে পারে। মিষ্টি খেতে খরচ কমতে পারে; কমতে পারে ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মার ওষুধ, কৃষি যন্ত্রপাতির দাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2023, 10:58 AM
Updated : 1 June 2023, 10:58 AM

প্রতি বছরই বাজেটে শুল্ক পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দামের হেরফের ঘটে। এবারও বাজেটে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় শুল্ক পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে, ফলে বাজেট পাস হলে এসব জিনিসের দামেও পরিবর্তন ঘটবে।

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। আলোচনা শেষে আগামী ২৬ জুন এই বাজেট পাস হবে।

জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে বলে যেসব ক্ষেত্রে শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস হচ্ছে, সেসব ক্ষেত্রে নতুন দরে কেনাকাটা করতে হবে।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, আমদানি করা সফটঅয়্যার, মোবাইল হ্যান্ডসেট, প্লাস্টিক পণ্য, টিস্যু, কলম, অ্যালুমিনিয়াম পণ্য, লিফট, সিগারেটের দাম বাড়তে পারবে। ভ্রমণ কর বাড়ানোর প্রস্তাব আসায় বাড়তে পারে বিদেশে যাওয়া খরচ।

কমতে পারে মিষ্টি জাতীয় পণ্য, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মার ওষুধ, হাতে তৈরি বিস্কুট, কৃষি যন্ত্রপাতির দাম।

Also Read: ‘স্মার্ট’ হওয়ার অভিযাত্রায় বাজেটে ব্যয় বাড়ল ১৫%

দাম বাড়ছে

  • সিগারেট: সিগারেট ও তামাক পণ্যের শুল্ক বাড়ছে। তরল নিকোটিনের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব এসেছে। ই-সিগারেট ও ভেপোরাইজিং ডিভাইস ও এর যন্ত্রাংশ আমদানিতে ২১২ দশমিক ২০ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • গাড়ি: একাধিক গাড়ির ক্ষেত্রে সিসি বা কিলোওয়াটভিত্তিক পরিবেশ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করেছের অর্থমন্ত্রী। ফলে একাধিক গাড়ি রাখার ক্ষেত্রে খরচ বাড়বে।

  • জমি: জমি নিবন্ধনে উৎস কর বাড়ছে।

  • ভ্রমণ: বিদেশ ভ্রমণ কমিয়ে আনতে ভ্রমণ কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিমান ভ্রমণেও করহার বাড়ছে।

  • কলম: বল পয়েন্ট কলমে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • সফটওয়্যার: সফটওয়্যারের উৎপাদন পর্যায়ে ও কাস্টমাইজেশন সেবার উপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • এলপিজি সিলিন্ডার: এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির স্টিলের উপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • মোবাইল সেট: দেশে তৈরি মোবাইল সেট: স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ০ (শূন্য) শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ, সংযোজন পর্যায়ে যথাক্রমে ৩ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে প্রজ্ঞাপনের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিতকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। উল্লিখিত প্রজ্ঞাপনের কিছু শর্ত যৌক্তিকীকরণ ও নতুন শর্ত সংযোজনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • প্লাস্টিক পণ্য: প্লাস্টিকের তৈরি সকল ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালী সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেট সামগ্রীসহ যে কোনো পণ্যের (টিফিন বক্স ও পানির বোতল ব্যতীত) ভ্যাট ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • থালাবাসন: অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি কিচেন বা অন্যান্য গৃহস্থালি তৈজসপত্র, স্যানিটারিওয়্যার এবং যন্ত্রাংশের মূসক হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব।

  • টিস্যু: কিচেন টাওয়েল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল বা পকেট টিস্যু, হ্যান্ড টাওয়েল/পেপার টাওয়েল/ক্লিনিকাল বেড শিটের ভ্যাট হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • বিদেশি সাবান: আমদানি করা সাবান ও ডিটারজেন্ট পাউডারের রেগুলেটরি ডিউটি ৩ থেকে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে বাজেটে। শুল্ক বাড়ছে আমদানি করা ফেইসওয়াশেও।

  • সানগ্লাস: প্লাস্টিক ও মেটাল ফ্রেমযুক্ত সানগ্লাসের ভ্যাট হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • সিমেন্ট: আমদানি করা সিমেন্ট ক্লিংকারের প্রতি টনের স্পেসিফিক রেট অব ডিউটি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য স্পেসিফিক রেট অব ডিউটি ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা হচ্ছে।

  • লিফট: লিফট ও স্পিপ হোস্ট আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এস্কেলেটরের আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

  • বিদেশি সফটঅয়্যার: সফটওয়্যার আমদানির শুল্ক ২৫ শতাংশ ও ভ্যাট ১৫ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

  • কাজুবাদাম: খোসা ছাড়ানো কাজুবাদামের করভার ১৫.২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, “আমাদের পাহাড়ি অঞ্চরে কাজু বাদাম উৎপাদিত হচ্ছে এবং সেখানে বাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে।”

  • বাসমতি চাল: নন ফর্টিফায়েড বাসমতি চাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • ফল: প্রক্রিয়াজাত ফল আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। সব ধরনের খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব এসেছে। আপেলের দামও বাড়তে পারে।

  • সাইকেল: বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সব ধরনের বেয়ারিং ও কবজার দামও বাড়তে পারে।

দাম কমছে

  • ওষুধ: ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মার ওষুধ উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

  • মিষ্টি: মিষ্টান্ন ভাণ্ডার সেবা হতে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে এ খাতে বলবৎ ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার অর্ধেক কমিয়ে ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • অপটিক্যাল ফাইবার কেবল: এই কেবলের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • হাতে তৈরি বিস্কুট: কর অব্যাহতি সীমা প্রতি কেজি ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা এবং কেক (পার্টিকেক ব্যতীত) এর অব্যাহতি সীমা প্রতি কেজি ২৫০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব এসেছে।

  • পশু খাদ্য: পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহার্য কোকোনাট বা কোপরা ওয়েস্টের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

  • কৃষি যন্ত্র: কৃষিতে ব্যবহৃত রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ড্রায়ার, সকল প্রকার স্প্রেয়ার মেশিন, পটেটো প্লান্টার, আমদানিকৃত সকল ধরনের কন্টেইনারের আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

  • পানি প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র: সমুদ্রের লবণাক্ত পানি থেকে সুপেয় পানি উৎপাদনের লক্ষ্যে আমদানিকৃত সোলার পাওয়ার অপারেটেড ওয়াটার ডিস্টিলেশন প্ল্যান্টের আগাম কর অব্যাহতির সুপারিশ।

  • উড়োজাহাজের ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ: নিবন্ধিত এয়ারলাইন্সের আমদানিকৃত উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, টার্বো জেট ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

  • দেশে উৎপাদিত অপটিক্যাল ফাইবার কেবল: এর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত ৫ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

  • গ্যাস: এলপি গ্যাস, কম্পোজিট এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের উপর থেকে আগাম কর ছাড়া সব ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।

  • কম্পিউটার সরঞ্জাম: কম্পিউটার মডেম, সেট-টপ বক্স, ২২ ইঞ্চি থেকে ছোট কম্পিউটার মনিটর ভ্যাট অব্যাহতির আওতায় এসেছে।