বেশি আয় যারা করেন, তাদের কাছ থেকে আরো বেশি কর আদায়ের জন্য কর ধাপ ছয়টি থেকে বাড়িয়ে সাতটি করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
Published : 06 Jun 2024, 04:16 PM
মূল্যস্ফীতির চাপ আর অর্থনীতির বাস্তবতায় নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি থাকলেও তাতে সাড়া দেননি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
তবে কর ধাপে পরিবর্তন এনে তিনি মধ্যম সারির করদাতাদের কিছুটা ছাড় দিয়েছেন। আর বেশি আয় যারা করেন, তাদের কাছ থেকে আরো বেশি কর আদায়ের জন্য কর ধাপ ছয়টি থেকে বাড়িয়ে সাতটি করার প্রস্তাব করেছেন।
বৃহস্পতিবার উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা গতবারের মতই সাড়ে ৩ লাখ টাকা রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থাৎ, এবারও সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য কোনো কর দিতে হবে না।
নারী, প্রবীণ নাগরিক, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য এবং গেজেটেড যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রেও করমুক্ত আয়ের সীমার গত বছরের মত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থাৎ নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয় সীমা ৪ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা এবং তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকাই থাকছে।
এছাড়া, কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তান পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয় সীমা আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে বলে বাজেট বক্তৃতায় প্রস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।
সেই সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা, ফার্ম ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের জন্য সর্বনিম্ন করহার আগের মত ৫ শতাংশ রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।
করহারের ধাপে কিছুটা পরিবর্তন এনে সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে না। পরবর্তী ১ লাখ টাকা আয়ে কর দিতে হবে ৫ শতাংশ হারে।
আগে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পরবর্তী ৩ লাখ টাকা আয়ের উপর ১০ শতাংশ হারে কর দেওয়া লাগত। এখন সাড়ে ৪ লাখ টাকা পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ওই হারে কর দিতে হবে।
পরের ধাপে সাড়ে ৮ লাখ টাকা পরবর্তী ৫ লাখ টাকার আয়ের জন্য কর দিতে হবে ১৫ শতাংশ হারে। এখন সাড়ে ৭ লাখ টাকা পরবর্তী ৪ লাখ টাকার উপরে ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী সাড়ে ১১ লাখ টাকা পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। তার পরবর্তী যে কোনো আয়ের উপর ২৫ শতাংশ হারে কর দেওয়া লাগে।
এবার এরসঙ্গে নতুন ধাপ যুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী।
সে হিসাবে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য আয়কর দিতে হবে ২০ শতাংশ হারে।
এরপর সাড়ে ১৮ লাখ পরবর্তী ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত উপর আয়কর দিতে হবে ২৫ শতাংশ হারে।
সাড়ে ৩৮ লাখ পরবর্তী অবশিষ্ট যে কোনো পরিমাণ আয়ের উপর কর দিতে হবে ৩০ শতাংশ হারে।
বিদ্যমান করধাপ |
বিদ্যমান করহার ২০২৩-২৪ |
প্রস্তাবিত করধাপ |
প্রস্তাবিত করহার ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ |
৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত |
শূন্য |
৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত |
শূন্য |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকার উপর |
৫% |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকার উপর |
৫% |
পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকার উপর |
১০% |
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকার উপর |
১০% |
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকার উপর |
১৫% |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকার উপর |
১৫% |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকার উপর |
২০% |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকার উপর |
২০% |
অবশিষ্ট টাকার উপর |
২৫% |
পরবর্তী ২০,০০,০০০ টাকার উপর |
২৫% |
- |
- |
অবশিষ্ট টাকার উপর |
৩০% |
কোম্পানি করদাতা ছাড়া অন্য করদাতাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম কর আগের মতই ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪ হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকায় ৩ হাজার টাকা থাকছে।
ধনীদের সম্পদে হাত দিচ্ছেন না অর্থমন্ত্রী
সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে আয় ও সম্পদের সুষম বণ্টনের জন্য বিত্তশালীদের কাছ থেকে যে সারচার্জ নেওয়া হয়, তা আগের অবস্থানে রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “বিত্তশালী ব্যক্তি করদাতাদের নিকট হতে বর্তমানে নিট সম্পদের ভিত্তিতে প্রদেয় আয়করের শতকরা হারে সারচার্জের বিধান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিধানটি কার্যকর রয়েছে। ব্যক্তি করদাতার সারচার্জ সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে আয় ও সম্পদ এর সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে নিট পরিসম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রদেয় সারচার্জের হার শূন্য। নিট পরিসম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করলে ১০ শতাংশ এবং নিট পরিসম্পদের মূল্যমানের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে সারচার্জের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ রয়েছে। আমি সারচার্জের বিদ্যমান কাঠামো অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করছি।”