‘‘গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দেশের সরকারের ব্যয়ে যত স্বচ্ছতা বাড়ে, সেসব দেশের মানুষ কর দিতে বেশি উৎসাহিত হয়।”
Published : 20 May 2024, 12:17 AM
সরকারের রাজস্ব আদায় কার্যক্রমের মতো সরকারি ব্যয়ের বেলাতেও ডিজিটালাইজেশনে জোর দিতে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির একটি আয়োজনে সুপারিশ করা হয়েছে।
সেমিনারে বলা হয়েছে করছেন, ডিজিটাইজেশনের ফলে কর আদায় প্রক্রিয়া সহজ, জনবান্ধব ও সময় সাশ্রয়ী হচ্ছে। তেমনি এতে ব্যয়ের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা বাড়াবে।
রাজধানীর গুলশানে রোববার একটি হোটেলে ‘ডিজিটাইজেশন অব দ্য বাংলাদেশ ট্যাক্স সিস্টেম, দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার ফর হাইয়ার রিসোর্স মোবিলাইজেশন’ শীর্ষক সেমিনারটির যৌথ আয়োজক ছিল সিপিডি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গবেষণায় দেখা গেছে যেসব দেশের সরকারের ব্যয়ে যত স্বচ্ছতা বাড়ে, সেসব দেশের মানুষ কর দিতে বেশি উৎসাহিত হয়। ব্যয়ে স্বচ্ছতা বাড়লে তখন এটি কর আদায়ে ভালো কাজ করে।”
শুধু টাকার অঙ্কের হিসাবের বদলে অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন করার পরামর্শও দেন তিনি।
কর খাত পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর করতে পারলে ২০৩০ সাল নাগাদ রাজস্ব আয়ের হার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পাঁচ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব মনে করছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, “শতভাগ ডিজিটাইজেশনের পরে প্রথম বছরে কর আদায় বেড়ে পাঁচ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার এবং চতুর্থ বছরে তা সাত দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা যাবে।”
প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে গত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করায় পরের অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার হার ২৫ শতাংশ বাড়ার উদাহরণও দেন তিনি।
জনগণ যা কর দিচ্ছে তার সবটুকু সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে না বলেও মত প্রকাশ করেন মোস্তাফিজুর।
তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রের শনাক্তকরণ নম্বর ব্যবহার বা সবার জন্য ভিন্ন একটি শনাক্তকরণ নম্বর চালু করার পরামর্শ দেন। প্রত্যেক নাগরিককে সব ধরনের ব্যয় ও সরকারি সেবায় এই নম্বরটি ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করার কথাও বলেন তিনি।
ভারতের সব নাগরিকের ‘আধার কার্ড’ এবং কেনাকাটা থেকে শুরু করে ব্যাংক লেনদেন ও কর দেওয়ার সময়েও তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক জানিয়ে তিনি বলেন, “একটি নম্বর ব্যবহার করলে এনবিআর দেখতে পারবে করদাতার ব্যয় ও আয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য আছে কিনা। তিনি কর কম দিয়ে কীভাবে বিদেশ ঘুরছেন, আলিসান হোটেল ব্যবহার করছেন, তখন তা ধরা যাবে।’’
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘‘ক্যাশলেস ইকোনমি করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। এতে বিভিন্ন মহলের আপত্তি আসছে।
‘‘গত অর্থবছরের করপোরেট ট্যাক্সে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছিল যেন সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। সে ক্ষেত্রেও আপত্তি এসেছে। অনেকে ছাড়ের সুবিধা নিতে পারেননি, কারণ তারা বলেছেন ক্যাশলেস ট্রানজেকশন করা যাবে না।’’
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ ও নাসির উদ্দিন আহমেদ, সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।