বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়াতে-কমাতে সরকারও পারবে, সংশোধন হচ্ছে আইন

জ্বালানি তেল বেসরকারিভাবে আমদানির কথাও ভাবছে সরকার।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2022, 12:57 PM
Updated : 28 Nov 2022, 12:57 PM

‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম সরাসরি বাড়ানো কিংবা কমানোর ক্ষমতা নিজের কাছে নিচ্ছে সরকার।

রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যে এই সংক্রান্ত আইন সংশোধনের প্রস্তাব সোমবার মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।

বর্তমান আইনে এই ক্ষমতা ছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)।

তবে গত অগাস্ট মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলে তার বৈধতা নিয়ে হাই কোর্টে আবেদন হয়।

তারপরই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২২ মন্ত্রিসভায় এল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জটিলতা এড়াতে আইনটিতে সংশোধন আনা হচ্ছে।

“আমাদের এখন বিইআরসি এগুলো (দাম সমম্বয়) সব হ্যান্ডেল করে। কিন্তু বিইআরসির কিছু কিছু জায়গায় একটু প্রবলেম হয়, যেমন ৯০ দিন পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত না দিয়ে থাকতে পারে। কারণ আইনে বলা আছে বিআরসি ৯০ দিনের মধ্যে এগুলো সব শুনানি নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। অনেক সময় আমাদের ইমিডিয়েট প্রয়োজন আসে, অনেক সময় তারা ঠিকভাবে ইয়ে (সমন্বয়) করতে পারে না।”

সে কারণেই সংশোধনীটি আনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকার প্রয়োজন বোধে বিভিন্ন বিশেষ কারণে এই ট্যারিফ নির্ধারণ করতে পারবে।”

তাহলে মন্ত্রণালয় এই ক্ষমতার প্রয়োগ যে কোনো সময় করতে পারবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বিই্আরসিই করবে, বিশেষ পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় করবে।

“বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, যেমন এখন ধরুন ৯০ দিন সময় নিয়ে ওনারা (বিইআরসি) শুনানি নেন। একটা ইমার্জেন্সি আসল। আবার অনেক সময় দাম কমে গেল, কিন্তু বিইআরসি ৯০ দিন ধরে দাম কমাবে। সরকার হস্তক্ষেপ করে একটা নোটিফিকেশন দিয়ে দাম কমিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। বিইআরসি কাজগুলো করবে, কিন্তু স্পেশাল যদি কোনো সিনারিও হয়, তখন সরকার হস্তক্ষেপ করে সেই দামের বিষয়টা হ্যান্ডেল করবে।”

বেসরকারিভাবে জ্বালানি আমদানি

সব ধরনের জ্বালানি বেসরকারিভাবে আমদানি করা যায় কি না, তা যাচাইয়ের চিন্তাও সরকার করছে বলে জানান খন্দকার আনোয়ারুল; যেখানে জ্বালানি এখন কেবল সরকারিভাবেই আমদানি হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, “ফুয়েলসহ অন্যান্য যে এনার্জি প্রাইভেট সেক্টরে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে ক্ষেত্রে দুটা অপশন তারা এনেছে। মার্কেটে বিক্রি করলে ভালো হবে, না যে আইন আছে তারা মধ্যে বিটুমিন এনে রিফাইন করবে তারা। যখন রিফাইন করবে তখন ৪২/৪১ পার্সেন্ট রিফাইনড হয়। তারা রিফাইনড অয়েলটা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসির) কাছে এনে দিতে পারে অথবা সরাসরি তারা মার্কেটিং করতে পারে কি না, সেটা দেখতে হবে।

“অথবা বিটুমিনসহ যে বাই প্রোডাক্টগুলো আনবে, সেগুলো বাইরে বিক্রি করবে কি না। রিফাইনড অয়েলগুলো বিপিসির কাছে বিক্রি করে দিতে পারে অথবা বিপিসি অন্য কোনোভাবে তাদের কাছে দিতে পারে কি না, সেটা দেখবে। আর বিএসটিআইকে ক্লোজ মনিটরিং রাখতে হবে। এটা আলোচনায় রাখতে বলা হয়েছে এবং খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।”

চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রিডিটেনশন আইন

মন্ত্রিসভা চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রিডিটেনশন আইন, ২০২২ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।

খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, “ডব্লিউএইচও এবং ওয়ার্লড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের যৌথ একটা টাক্সফোর্স আছে, তাদের কিছু রিকোয়ারমেন্ট আছে, মেডিকেল চিকিৎসাকে একটা ন্যূনতম লেভেলে নিতে গেলে একটা স্বাধীন মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে হবে। তারাই প্রত্যেকটা মেডিকেলের চিকিৎসা কারিকুলামগুলো নির্ধারণ করবে। সেজন্য আমাদের এই আইন।”

প্রস্তাবিত আইনের অধীনে একটি কাউন্সিল হবে, যারা চিকিৎসা শিক্ষা মান বজায় রাখতে তদারকি চালাবে।

কতজন সদস্য নিয়ে এই কাউন্সিল হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৭ জনের কাউন্সিল হবে। একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। পর্ষদে দুজন থাকবেন সরকার মনোনীত, তারা হবেন চিকিৎসা শিক্ষা এবং গবেষণা সম্পর্কিত অধ্যাপক মর্যাদার ব্যক্তি।