“বাংলাদেশ ব্যাংক স্ট্রংলি বলতে পারে যে, ‘আমরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ব্যাংক অনুমোদন দেব না’”, বলেন তিনি।
Published : 30 Mar 2024, 08:19 PM
ব্যাংকিং খাত তদারকিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত দুর্বলতা আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া ঠিক হয়নি। এই ব্যাংকগুলো ভালো করছে না বলেও মনে করেন তিনি।
শনিবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘ব্যাংক একীভূতকরণ নীতি ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জোরদার করবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনি এ কথা বলেন।
বিষয়ের পক্ষে ছিল প্রাইম ইউনিভার্সিটি ডিবেট ক্লাব, বিপক্ষে ছিল বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি। বিজয়ী হয় বিপক্ষের দল।
সালেহউদ্দিন বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক স্ট্রংলি বলতে পারে যে, ‘আমরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ব্যাংক অনুমোদন দেব না।’
“কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে উপরে নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকলে হবে না। অর্থনীতির স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
গত এক দশকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের অনুমোদনের সমালোচনা করে সাবেক এই গভর্নর বলেন, “বাড়তে বাড়তে এখন বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৬১ টি। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে দেওয়া ব্যাংকের কোনোটিই ভালো করছে না। এসব ব্যাংকের উদ্দেশ্যই ছিল ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করা। পদ্মা ব্যাংকের মত এগুলোকে নাম বদলে ভালো করার চেষ্টা না করে অবসায়ন করে দেওয়াটা সবচেয়ে ভালো।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষা আপত্তিও দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না জানিয়ে আক্ষেপ করেন সাবেক গভর্নর। তিনি বলেন, “আমি জানি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট বছরে পর বছর ধরে পড়ে থাকে। কিন্তু প্রতিবেদন ধরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন হয় না।
“পরিচালকরা তাদের ঋণ ভাগাভাগি করতে থাকে। এগুলো একটি অর্থনীতির জন্য খুবই খারাপ। এজন্য আইনে কিছু সংস্কার বা যা আছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।”
ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে ২০ বছর আগেই নীতিমালা করেছিলেন জানিয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, “এখন তা হালনাগাদ করা প্রয়োজন। এর আগে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা যেতে পারে, ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে।”
অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাত সংস্কারে ১০টি প্রস্তাব দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে:
# ব্যাংক থেকে নামে বেনামে আত্মসাৎ হওয়া অর্থ আদায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, প্রচলিত আইনের সংস্কার এনে অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা;
# আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতে স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন;
# ঋণ জালিয়াতিতে জড়িত ব্যক্তিসহ ঋণ খেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের নামের তালিকা জাতীয় সংসদে প্রকাশ;
# ঋণ খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান, নতুন ঋণ প্রদান বন্ধ, দেশে বিদেশে স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ;
# ব্যাংক দুর্বল করার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেন সরকারের ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার সময়ে এসব ‘অসৎ ব্যক্তিরা’ পার পেতে না পারে;
# দুর্বল ব্যাংকগুলোর ক্ষতির দায় কে নেবে তা স্পষ্ট করা, একই সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আমানত গ্রহণ ও বিতরণ ছাড়া অন্যসব কার্যক্রম বন্ধ করা;
# দুর্বল ব্যাংকের আদায় অযোগ্য ঋণ আদায়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
# ব্যাংকের কার্যক্রমের উপর অধিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা, যাতে ভবিষ্যতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম না হয়;
# ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করা, যাতে মালিকদের প্রতিনিধিত্ব করা পর্ষদ যেন ব্যবস্থাপনা কাজে হস্তক্ষেপ করতে না পারে;
এবং
# ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার সুফল পেতে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা, যাতে কোনো পক্ষপাতমূলক সংবাদ ব্যাংক একীভূত প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।