তার মতে, দরিদ্র্যের হার কমানোর পাশাপাশি অসমতা দূর করতে পারলে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। আর সামাজিক উন্নয়নই ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তির অসমতা দূর করতে পারে।
Published : 09 May 2023, 07:55 PM
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বৈষম্য ও অসমতার ৪০ থেকে ৬০ শতাংশই হয় বর্ণ, জন্মস্থান, বংশ মর্যাদা, পারিবারিক পরিচিতি, জাতিসত্তা এবং লিঙ্গের কারণে, যা ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এ বৈষম্য ও অসমতায় সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “জীবনমান ও সমাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনে অসমতা দূর করতে হবে। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন জীবনমান ও সমাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে না। শুধু উন্নয়ন নয়, প্রয়োজন অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন।”
তার মতে, দরিদ্র্যের হার কমানোর পাশাপাশি অসমতা দূর করতে পারলে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। আর সামাজিক উন্নয়নই ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তির অসমতা দূর করতে পারে।
মঙ্গলবার ঢাকায় ‘এক্সপান্ডিং অপরচুনিটিজ; টুয়ার্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ শীর্ষক এক আঞ্চলিক সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন শিরীন শারমিন।
তিনি বলেন, “এখনো প্রচুর সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। কোনো দেশের অর্থনীতি এগিয়ে গেলেও তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অসমতা দূর করা, বর্ধনশীল চরম দারিদ্র্য নিয়ন্ত্রণ, বৈষম্য কমিয়ে আনা কিংবা পিছিয়ে পড়া মানুষের সমস্যা সমাধান করে না।”
তাই আর্থিক উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে এবং বৈষম্য কমিয়ে আনতে সমাজের সব স্তরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পরামর্শ দেন স্পিকার।
মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে এ সম্মেলনের যৌথ উদ্যোক্তা বিশ্ব ব্যাংক ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)।
ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষার্থীরা দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এ অঞ্চলের উন্নয়নকে কীভাবে বাধাগ্রস্ত করছে তা নিয়ে একাধিক সেশনের আয়োজন করা হয় সম্মেলনে।
গত তিন বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়া অভাবনীয় অর্থনৈতিক দুর্যোগ-ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এখন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার থেকে প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে এ অঞ্চল। অর্থনৈতিক এ উন্নয়ন যাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ-ভুটান) আব্দুল্লাহ সেক।
তিনি বলেন, “শিক্ষা খাতে নিম্ন ও উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এখনো অনেক কিছু করা বাকি।”
অসমতা ও বৈষম্যর দিক দিয়ে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান তাদের আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের তুলনায় ভালো অবস্থায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বৈষম্য কমিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সমাজের সব পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পরামর্শ দিয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “এজন্য সামাজিক সুবিচার করতে রাজনৈতিক অর্থনীতি প্রয়োজন, যেখানে কাঠামোগত নেতৃত্বের মাধ্যমে এ সুবিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।”
অসমতা ও দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে বাংলাদেশে প্রান্তিক পর্যায়ে আইসিটি খাতে প্রশিক্ষণ, মেয়ে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প এবং আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথাও বলেন স্পিকার।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যান্স টিমার বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় বৈষম্য হ্রাস করা এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
আর সুযোগের বৈষম্য শুধু অন্যায্যই নয়, দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেও বাধাগ্রস্ত করে বলে মন্তব্য করেন ব্র্যাকের বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।
সম্মেলনের প্রথম সেশনে বিশ্ব ব্যাংকের ভারতীয় অফিসে কর্মরত অর্থনীতিবিদ নয়নতারা শর্মার সঞ্চালনায় ভারতের স্বাস্থ্য খাতে সামাজিক অসমতা ও বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অরিজিতা দত্ত।
প্রবন্ধে তিনি বলেন, “সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া, আর্থিকভাবে শক্তিশালী না হওয়া, আদিবাসী ও বর্ণ পরিচয়ের কারণে ভারতের নারীরা শিক্ষা ও স্বাস্ব্য সেবা গ্রহণে বৈষম্যর স্বীকার হচ্ছেন।
“একজন ধনী ব্রাহ্মণ পরিবারের নারী সদস্য যতটা সহজে সামাজিক সুবিধা নিতে পারেন, একজন আদিবাসী পরিবারের নারী সদস্য ততটা সহজে পারেন না।”