তার যুক্তি, কর যত কমানো হবে, তত বেশি টাকার অপ্রদর্শিত আয় বৈধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
Published : 09 Jun 2024, 03:53 PM
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনা প্রশ্নে বৈধ করার যে সুযোগ সরকার দিয়েছে, সেই কর আরও কমানোর দাবি তুলেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন।
তিনি একে ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ’ হিসেবে দেখতে রাজি নন। তার যুক্তি, কর যত কমানো হবে, তত বেশি টাকার অপ্রদর্শিত আয় বৈধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি তুলে ধরেন কিশোরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র এমপি পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, “অর্থ পাচারের কারণে ডলার সংকট হচ্ছে। অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া না হলে অর্থ পাচার বন্ধ হবে না। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। আসলে এটা ভুল তথ্য। কালো টাকা সাদা করা নয়, বৈধ অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কর ৫ শতাংশ করলেও অসুবিধা নেই। কর যত কমানো হবে তত বেশি টাকা প্রদর্শিত হবে।”
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার কাজেট প্রস্তাব করেন। সেখানে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনা প্রশ্নে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়।
এর সমালোচনা করে সিপিডি বলেছে, যেখানে ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাভাবিক কর হার বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেখানে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ‘কালো টাকা’ সাদা করার সুযোগ নৈতিক বা অর্থনৈতিক– কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
আর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) বলেছে, কালো টাকা সাদা করার ওই সুযোগ ‘নিয়মিত করদাতাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ’।
তবে সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, “১৫ শতাংশ কর অনেক বেশি। এই হারে অনেকে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শন করবে না। ১৫ শতাংশ কর দিতে হলে অপ্রদর্শিত আয় কমাতে হবে। তাহলে অপ্রদর্শিত আয়ের প্রদর্শন বেশি হবে। রাষ্ট্রের ট্যাক্স আসবে। দেশে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। এক্ষেত্রে আরও সুযোগ দেওয়া যায়। আগে এটি ছিল। ইন্ড্রাস্ট্রি করতে জমি, মেশিনারিজ কেনার ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।”
বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার যে পরিকল্পনা করেছেন, তার সমালোচনা করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
তিনি বলেন, “ব্যাংক উৎস থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমাতে হবে। সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যায়। এতে শিল্প বাণিজ্যের অগ্রগতি বিঘ্নিত হয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না।”
তিনি বলেন, ২০১৭–১৮ সালে ব্যাংক থেকে সরকার নিয়েছিল ১১ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। চলতি অর্থ বছরে এই ঋণ এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা।
“এদিকে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া দরকার। সরকারের উচিত ব্যাংক খাত থেকে ঋণ কম নিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়তে দেওয়া।”
সরকারি দলের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার বলেন, “বর্তমান সরকারের আমলে দারিদ্র অনেক কমেছে। কিন্তু কোভিড–১৯, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের মত বৈশ্বিক কারণে এখন মধ্যবিত্তের অনেকের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। ন্যায্যমূল্যে টিসিবির ট্রাকে বিভিন্ন দ্রব্য বিক্রি করা হয়। মধ্যবিত্তের অনেকে এখানে দাঁড়াতে লজ্জাবোধ করেন। মধ্যবিত্তের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হত।”
সরকারি দলের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, “কোনো প্রকল্প নেওয়া হলেই আগে গাড়ি কেনা হয়। এ প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জুন মাস এলে তড়িঘড়ি করে টাকা তোলা হয়।”
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবাস ফেরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবি তোলেন সরকার দলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
তিনি বলেন, “প্রবাসীরা যখন দেশে আসেন, আমি অনুরোধ করব, বিমানবন্দরে তাদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার জন্য। সকল প্রবাসীদের সম্মানের সহিত দেশে আনতে হবে।”
বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি ‘গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান করছে না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যে কাজগুলো করলে সমাজ কলুষিত হবে, গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হবে, রাষ্ট্র ধ্বংস হবে সেই শক্তিগুলো যখন ক্ষমতায় আসেন তখন আমাদের সিভিল বাবুরা অনেক আনন্দে দিন কাটায়।
“তাদের প্রতি স্পষ্ট কথা, আপনারা সমালোচনা করেন, সেটা আমরা সহ্য করি, সরকারি দলে আছি চামড়া অবশ্যই আমাদের মোটা, সমালোচনা ধারণ করতে পারি। আপনাদের ন্যায্য কথাকে বঙ্গবন্ধু কন্যা গ্রহণ করেন।”