২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী, অসুস্থ অবস্থাতেই দিয়েছিলেন নিজের প্রথম বাজেট।
Published : 22 Aug 2023, 05:37 PM
ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ বিস্তারের মধ্যে রোগটির জীবাণুবাহী এইডিস মশার ‘কামড়ের ভয়ে’ বক্তব্য ভুলে গেলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অবশ্য সভাপতি হিসেবে বক্তব্য শেষ করার পরপরই ভুলে যাওয়া সেই কথা মনে পড়ে তার। ‘ক্ষমা চেয়ে’ সেই বক্তব্য আবার দেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ইএফডি মেশিনের (ইএফডিএমএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।
অনুষ্ঠান মঞ্চে অর্থমন্ত্রীর পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন সাদা পোশাকের এক কর্মী। তার হাতে ছিল মশা মারার ব্যাট। মন্ত্রীর আশপাশে কোনো মশা আসছে কি না, সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছিলেন তিনি। কোনো মশা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি মেরে ফেলছিলেন। এভাবে অনুষ্ঠান চলার সময় বেশ কয়েকটি মশা মারতে দেখা গেছে তাকে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে বক্তব্য শেষ করার পর অর্থমন্ত্রী আবার মাইক অন করে বলেন, “বিনয়ের সাথে বলছি, বক্তব্য শেষ করার আগে আমার একটি লাইন বলার কথা ছিল বা একটি বিশেষ কথা বলার কথা ছিল। কিন্তু আমি মশার জন্য ওদিকে দৃষ্টি দিতে গিয়ে সেটা আমি ভুলে গেছি। আমি আপনাদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।”
এরপর তিনি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করতে গিয়ে যেন কারো ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে সেদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান। রাজস্ব আহরণ কীভাবে করতে হবে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের একটি গল্প বলেন।
এর আগে ২০১৯ সালেও ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল, সে বছর অর্থমন্ত্রী নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন।
সেটাই ছিল অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের প্রথম বছর। জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের দুদিন আগে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
পরে বাজেট দিতে হাসপাতাল থেকে সরাসরি সংসদে যান অর্থমন্ত্রী, কিছুক্ষণ পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার হয়ে বাজেট উপস্থাপন করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।
ওই বছরের ২৫ জুন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ডেঙ্গুর যন্ত্রণা কী, আমি বুঝি। আল্লাহ যেন কারও ডেঙ্গু না দেয়।”
২৯ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, “আমার হয়েছিল, আমি বুঝি।… এই বিপদ থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। অন্যান্য দেশে কী হচ্ছে সেটাও দেখা উচিত। এইডিস মশা কামড়ালে জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে।”
২৫ অগাস্ট রাজধানীতে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় তিনি বলেন, “বয়স অনেক হয়েছে, কেউ আমাকে কাবু করতে পারেনি। একমাত্র ডেঙ্গু আমাকে কাবু করেছে। বাজেটের দুদিন আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি। ৭ মিনিট আমার জ্ঞান ছিল না। ওই ৭ মিনিট কীভাবে কেটেছে, আমি তা মেলাতে পারি না।”
এ বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ১৯১ জনে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৮৫ জনের। ডেঙ্গুতে এক বছরে এত মৃত্যু আর কখনও দেখেনি বাংলাদেশ।
করদাতা যেন চাপে না পড়ে
রাজস্ব আহরণ কীভাবে করতে হবে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই যখন ওই দেশের প্রধানমন্ত্রীও। সেই সময় ওই দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন জন ব্যাপটিস্ট কোলবার্ট। তিনি একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন, যে আপনাদের সবাইকেই রাজস্ব আহরণ করতে হবে।
“রাজস্ব আহরণ (এভাবে) করবেন যেন রাজহাঁস থেকে প্লাক করবেন (পালক তুলবেন)। কিন্তু লক্ষ্য রাখবেন, রাজহাঁসটি যেন কোনোভাবেই ব্যথা না পায়, কষ্ট না পায়।”
দেশের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমেও সেই নীতি অনুসরণ করার আহবান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে, আমরাও ট্যাক্স অর্জন করব, ট্যাক্স আদায় করব। কিন্তু যিনি ট্যাক্স দিচ্ছেন, তার ওপরে যেন প্রেশার না আসে।
“শুধু একজন দেবে অন্যরা দেবে না… আমরা যেটা বারবার বলে আসছি যে, নেটটা (আওতা) বড় করতে হবে।”
এসময় অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “এটা হাই টাইম আমাদের জন্য। ম্যানুয়ালি করতে গেলে যে প্রতিবন্ধকতা থাকে সেই প্রতিবন্ধকতা এখন থাকবে না।”
মন্ত্রী স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রাজস্ব আহরণ বড় আকারে উদ্বোধন করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “আপনারা শুরু করে দেন। শুরু করলে এটা রেলওয়ের মতো। রেলওয়ের বগি যদি একবার রাস্তার ওপরে উঠে যায়, তাহলে আর পেছনে থাকে না, সামনেই যায়।
“আমরা এখন যে জায়গায় এসেছি ইনশাআল্লাহ আমরাও আর পেছনে যাব না। ২০৪১ এর স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতে হবে।“
রাজস্ব আদায় ধর্মীয় দায়িত্বের মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ধর্মীয় দায়িত্ব এই রকম যে, মানুষের জন্য কাজ কর, সমাজের জন্য কাজ কর। সমাজের প্রত্যেক মানুষকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও।
“আমি মনে করি এনবিআর এর চেয়ারম্যান একজন সৎ মানুষ। তাকে আপনারা সহযোগিতা করবেন।”