দেশে এক লাখ ২৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ২১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা আদায় করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
Published : 23 Jun 2022, 12:23 AM
বুধবার জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে দিনের নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সিআইবি ডাটাবেইজে দেশের সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ২৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা।
“এর বাইরে উচ্চ আদালতের নির্দেশ বহাল আছে এমন ঋণস্থিতির পরিমাণ ২১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। যা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আদায় করতে পারছে না।”
এসব ঋণ আদায়ে খেলাপি গ্রাহকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
“এক ব্যাংকের খেলাপি অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছে না। ব্যাংকগুলোকে বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধন করে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে বলেও জাতীয় সংসদে জানান মুস্তফা কামাল।
জামালপুর-১ আসনের সদস্য আবুল কালাম আজাদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। অর্থপাচারের পরিমাণ নির্ধারণ অত্যন্ত দুরূহ বিষয়।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার বিষয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, গবেষণা সংস্থা বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে প্রাক্কলন করে থাকে।
“যার যথাযথতা ওই সকল প্রতিষ্ঠানও দাবি করে না। উক্ত সংস্থাসমূহের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থপাচার হয় সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য পরিলক্ষিত হয়।”
তবে পাচারের সম্ভাব্য উৎসগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি অর্থপাচার রোধ এবং পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর এবং সকল সংস্থা একযোগে কাজ করছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউই) পাচারকারী বা পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে বিদেশি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থাকে এসব তথ্য সরবরাহ করে আসছে।
বিদেশে (সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ইত্যাদি) ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয় অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে অর্থপাচার বিষয়ক বেশ কিছু মামলা দুদক তদন্ত করছে।
মুস্তফা কামাল জানান, সিআইডির দায়ের করা পাচার সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু মামলা চলমান রয়েছে। বিদেশে পাচার করা সম্পদ দেশে ফেরত আনতে অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স কাজ করছে।
এছাড়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা নিশ্চিত করতে অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন, ২০১২ ও পারস্পরিক সহায়তা বিধিমালা, ২০১৩ জারি করা হয়েছে।
উক্ত আইনের আওতায় অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমানা আলীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হয়ে যাবে না, ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী ও মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে।
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির চলকগুলো অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শ্রীলঙ্কার বেশিরভাগ বৈদেশিক ঋণ বাণিজ্যিক ও সার্বভৌম বন্ডে নেওয়া, যেগুলোর সুদহার বেশি ও পাঁচ বছরে সুদসহ পরিশোধ করতে হয়।
“অন্যদিকে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধকাল অনেক বেশি এবং স্বল্প সুদে নেওয়া। বাংলাদেশ সরকারের কোনো সভরেন বন্ড নেই।”
বাংলাদেশে বর্তমান ঋণ পরিস্থিতি সহনশীল ও টেকসই মাত্রায় রয়েছে উল্লেখ করে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে শ্রীলঙ্কার মতো বড় কোনো ঝুঁকির আশঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করেন অর্থমন্ত্রী।