সুইফট থেকে বাদ পড়ছে কয়েকটি রুশ ব্যাংক

ইউক্রেইনের আগ্রাসনের জবাবে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিশ্বের প্রধান আর্থিক লেনদেন পরিষেবা সুইফট থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং তাদের মিত্ররা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2022, 04:50 AM
Updated : 27 Feb 2022, 04:50 AM

বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিদেশে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদও অবরুদ্ধ করা হবে। সেক্ষেত্রে রাশিয়া চাইলেও বিদেশের ব্যাংকে থাকা নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার করতে পারবে না। 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে,রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে একঘরে করে ফেলতেই এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য।

সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফট হল আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বার্তা আদানপ্রদানের একটি দ্রুত ও নিরাপদ আন্তর্জাতিক পরিকাঠামো। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় ন্যাশনাল ব্যাংক অব বেলজিয়াম এই পরিষেবার দেখভাল করে থাকে।

১৯৭০ এর দশকে যাত্রা শুরু করা এ সমবায় পরিষেবা এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। দুইশর বেশি দেশের ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন সুইফটে যুক্ত। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ২০২০ সালে প্রতিদিন প্রায় ৩৮ মিলিয়ন লেনদেন হয়েছে, যা ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের লেনদেন সুবিধা দিয়েছে।

বিবিসি লিখেছে, রাশিয়াও তাদের জ্বালানি তেল ও গ্যাস রপ্তানির দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে সুইফটের ওপর নির্ভরশীল।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার হামলার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো এ পর্যন্ত যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার মধ্যে সুইফট থেকে রুশ ব্যাংকগুলোকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে সবচেয়ে গুরুতর।

বিশ্ব অর্থনীতিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই আর্থিক পরিকাঠামো নিজেদের উদ্যোগে কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের এখতিয়ার রাখে না। 

রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পদ জব্দ করার মত সিদ্ধান্তও রয়েছে। 

ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সুইফট থেকেও রাশিয়াকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।তবে পশ্চিমা দেশগুলো এ বিষয়ে একমত হতে পারছিল না।

সুইফটের একজন জার্মান মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়ার যে ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে, সেগুলোকেই প্রয়োজনে এ নেটওয়ার্ক থেকে বাদ দেওয়া হবে।

ছবি: রয়টার্স

বিবিসি লিখেছে, অর্থনীতির ওপর এই সিদ্ধান্তের মাত্রা হবে ব্যাপক, কারণ বিশ্বের প্রায় সব ব্যাংকই সুফইট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। রাশিয়ার ব্যাংকগুলোও বিপুল অর্থের লেনদেন করে এ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে।  

সুফইট থেকে বাদ পড়লে রুশ ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য টেলিফোন, ফ্যাক্স বা ইমেইলের ওপর নির্ভর করতে হবে।   

এর আগে কেবল একটি দেশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ইরানকে সুইফট থেকে বাদ দেওয়ার পর তাদের বৈদেশিক লেনদেন কমে গিয়েছিল ৩০ শতাংশ। 

পুরো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে কিছু ব্যাংককে বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ তাতে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনার ঝুঁকি কমবে ইউরোপের জন্য। পশ্চিমা ব্যবসায়ীরা রাশিয়াতে পণ্য বিক্রির দাম আনতে পারবেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস কেনার দাম পরিশোধ করতে পারবে।

পাশাপাশি রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর কড়াকড়ি এর বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহারের সক্ষমতা কমিয়ে দেবে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি কমিয়ে আনতে গত কয়েক বছরে ডলারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ইউরো এবং অন্যান্য মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়েছে রাশিয়া। কিন্তু এবারের নিষেধাজ্ঞা তাদের সেই পরিকল্পনাতেও বাদ সাধবে। 

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেছেন, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ অবরুদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ওই অর্থ যুদ্ধের পেছনে ব্যয় করতে না পারে। 

কথিত ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’ নামের যে ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে রাশিয়া সরকারের ঘনিষ্ঠ ধনী ব্যক্তিরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব এবং ইউরোপীয় আর্থিক ব্যবস্থার সুবিধা নেন, তাতেও লাগাম দেওয়ার কথা বলেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইটে বলেছেন,“পুতিনকে আগ্রাসনের জন্য মূল্য দিতে হবে, সেজন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাব।”